বদলে যাচ্ছে বিপিএল
‘বন্ধু যখন বউ লইয়া
আমার বাড়ির সামনে দিয়া
রঙ্গ কইরা হাইট্টা যায়,
ফাইট্টা যায়
বুকটা ফাইট্টা যায়…’
২৪ জুলাই চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে এ গানটি বাজলেও বাজতে পারে। যার কন্ঠে এ গানটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে সেই মমতাজই তো থাকবেন সেদিন মূল আকর্ষণ। গ্যালারিভর্তি দর্শক দেখলে মমতাজ কি এ গানটি না গেয়ে পারবেন? যদি গানটি বাজে তাহলে হয়তো মমতাজের কন্ঠে কন্ঠ মিলাবে হারিয়ে যাওয়া ‘জাতীয় ফুটবল লিগ’।
ঘরোয়া ফুটবলে যার পরিচিতি ছিল ‘নিটল-টাটা জাতীয় ফুটবল লিগ’ নামে। দর্শক প্রিয়তা পাওয়া সে লিগ এখন স্মৃতির পাতায়। পুরো দেশে সাড়া জাগানো এ টুর্নামেন্টকে গলাটিপে হত্যা করেছে স্বয়ং ‘জন্মদাতা’ বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়াম ওই টুর্নামেন্টের অনেক সাক্ষী। বন্দরনগরীর স্টেডিয়ামকে অনেক বেগ পেতে হয়েছে দর্শকদের জায়গা দিতে।
সেই স্টেডিয়ামের মাধ্যমে আবার ফিরে আসছে পুরোনো দিন। ২৪ জুলাই ওই স্টেডিয়ামে যাত্রা করছে ‘নতুন বিপিএল’- বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। ফুটবলের এমন দিনে ‘মরে যাওয়া জাতীয় লিগ’ এর তো বুকটা ফাটতেই পারে। তাকে মেরে তার মতো করেই যে আবার হাঁটতে শুরু করছে বাফুফে। মমতাজের গানের সঙ্গে নিশ্চয়ই বুকটা ফাটবে সিরাজুল ইসলাম বাচ্চু আর মনজুর হোসেন মালুর সময়ের ‘জাতীয় লিগের’।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের নবম আসর শুরু হচ্ছে এক মাস পর। আগামী ২৪ জুলাই চট্টগ্রাম দিয়ে যাত্রা শুরু করতে যাওয়া এ লিগ থাকছে না আগের মতো। রূপ আর দর্শন হারাচ্ছে দেশের পেশাদার ফুটবলের শীর্ষ লিগ। স্টেডিয়ামবিমুখ দর্শককে আবার স্টেডিয়ামমুখো করতেই বদলে দেওয়া হচ্ছে জাতীয় লিগের চরিত্র। এক কথায় ধর্মান্তরিত হচ্ছে পেশাদার লিগ।
জাতীয় লিগ ঘুরতো জেলায় জেলায়। এক জেলা মাতিয়ে চলে যেতো আরেক জেলায়; কিন্তু পেশাদার ফুটবলের চরিত্র সেটা নয়। অংশ নেওয়া দলগুলোর থাকতে হবে নিজস্ব স্টেডিয়াম অথবা মাঠ। খেলা হবে হোম অ্যান্ড অ্যাওয়ে ভিত্তিতে; কিন্তু বাংলাদেশের ক্লাবগুলোর মাঠ কই? জাতীয় লিগের প্রথম শর্তই তো হাওয়া!
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়াম বেশিরভাগ ক্লাবের হোম ভেন্যু। এক কথায় চমৎকার। অনেকেই রসিকতা করে বলেন ‘পৃথিবীতে আর কোন স্টেডিয়াম নেই যেখানে এতো ‘ডার্বি’ ম্যাচ হয়। এটা মোহামেডানের মাঠ, এটা আবাহনীরও মাঠ। শেখ জামাল, শেখ রাসেল, ব্রাদার্সেরও মাঠ। আরামবাগ, মুক্তিযোদ্ধা, বিজেএমসি, উত্তর বারিধারা আর রহমতগঞ্জেরও মাঠ এটি। এমনকি ফেনীর দল সকার ক্লাবেরও। যার অর্থ এখানে প্রতি ম্যাচই ‘ডার্বি’!
এটি করে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগটাকে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বানিয়ে ফেলেছে বাফুফে। এখন ‘ঢাকাজট’ খোলার চেষ্টায় বদলে ফেলা হচ্ছে বিপিএল।
আসলে পেশাদার লিগটা বদলে ফেলছে সাইফ পাওয়ারটেক নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। তারাই এ লিগের স্বত্ব কিনে নিয়েছে ৫ বছরের জন্য। লিগের প্রচার, টিভি, প্রমোশন থেকে শুরু করে সব কিছুরই পৃষ্ঠপোষক এ প্রতিষ্ঠানের হাতে।
বাফুফে শুধু টেকনিক্যাল সাপোর্ট দেবে। এই তো দুই দিন আগে গত বুধবার বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের ব্র্যান্ড অ্যাম্বসেডর হিসেবে সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন জনপ্রিয় সঙ্গীত শিল্পী মমতাজ। এর আগের আসরগুলোতে এমনটি দেখা যায়নি। প্রতি ভেন্যুতে মমতাজ গাইবেন ‘বুকটা ফাইট্টা যায়…।’ তার এ বুক ফাটা গানে যদি গ্যালারির বুকটা ভরে মন্দ কি?
নবম আসরের শুরুটা হবে জমকালো উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে। বদলে যাওয়া বিপিএল-এর নতুন আঙ্গিকে শুরু হওয়ার সাক্ষী হতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়াম। হারিয়ে যাওয়া জাতীয় লিগের আত্মকাহিনী লিখলে তার আর্তনাদও শোনা যাবে। জেলায় জেলায় ফুটবল জনপ্রিয় করেছিল এ জাতীয় লিগ।
দর্শক হারিয়ে যাওয়ায় সেই জাতীয় লিগের মতো করেই আয়োজন হতে যাচ্ছে পেশাদার ফুটবলের শীর্ষ আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ।
চট্টগ্রাম এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে উদ্বোধনী পর্ব শেষে বিপিএল চলে যাবে আরেক জেলায়- সিলেট, ময়মনসিংহ, রাজশাহী কিংবা বরিশালে। এভাবেই ঢাকার বাইরে আরও ৫টি জেলায় হতে থাকবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ। ভেন্যুর তালিকায় আরও আছে গোপালগঞ্জ।
পেশাদার লিগ শুরু হওয়ার পর ঢাকার বাইরে বেশ কয়েকটি ভেন্যু পেয়েছিল বাফুফে। নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী, কক্সবাজার, টাঙ্গাইল, ফেনীতেও হয়েছিল পেশাদার লিগের খেলা; কিন্তু এখলো মরেছে আঁতুড়ঘরেই। বাফুফে পারেনি ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করতে। তাই প্রতিবছর লিগ শুরুর আগে ভেন্যু নিয়েই যতো হাহাকার।
পেশাদার লিগ কেন তার স্বকীয়তা হারাচ্ছে? বাফুফের অনেকের মতেই এটা পরীক্ষামূলক। কারণ ফুটবলের দর্শক ফিরিয়ে আনাটা জরুরী। ঢাকার বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে মোহামেডান-আবাহনীর ম্যাচেও ২ হাজার দর্শক হয় না। অথচ মফস্বল শহরে এখনো অভাব নেই ফুটবলের দর্শকের। ঠিক এ কারণেই এবার বিপিএল-এর বেশিরভাগ খেলা হবে ঢাকার বাইরে।
বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের উপর থেকে চাপটাও কমে যাবে অনেক। একমাত্র চট্টগ্রাম আবাহনী ছাড়া এবার অন্য কোনো দলেরই নেই হোম ভেন্যু। আজকে এই ক্লাবের হোম তো, কালকে অন্যটির- এভাবে ভাগাভাগি করেই লিগ আয়োজন করবে পেশাদার লিগ কমিটি।
ক্লাবগুলোও জানে ঢাকার বাইরের ভেন্যুগুলোতে দর্শকে ভরে যাবে গ্যালারি। তারপরও কোনো ক্লাব ঢাকার বাইরে হোম ভেন্যু করতে চাচ্ছে বলে জানা যায়নি। ক্লাবগুলো এখন ঢাকায় খেলতেই পছন্দ করে। দর্শক হলে বা না হলে তাদেরই বা কি করার? বাফুফে লিগ আয়োজন করে, তারা খেলে। ব্যাস এই তো!
বদলে যাওয়া বিপিএল যদি দর্শক ফেরাতে পারে তাহলে উদ্যোগ সফল হবে আয়োজকদের। যদি পগটমানির অঙ্কটা মোটাসোটা হয় তাহলে পরের বছর অনেক ক্লাবই ঢাকার বাইরে ভেন্যু নিতে আগ্রহী হবে। বাফুফে এমন আশা বুকে নিয়ে বদলে ফেলতে যাচ্ছে পেশাদার লিগের চরিত্রটা।
এ জন্য ক্লাবগুলোকে দেওয়া সুযোগ-সুবিধাও বাড়িয়ে দিচ্ছে আয়োজকরা। বলতে গেলে ক্লাবগুলো এবার নবাবী স্টাইলে পেশাদার লিগ খেলতে পারবে এক জেলা থেকে আরেক জেলায়। তাতে যদিও ফেরে দেশের ফুটবলের গৌরব! প্রত্যাশাতো ওই একটাই।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন