‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত জঙ্গি শফিউল বলে গেছে ৪৭ কিলারের নাম
নতুন ধারা বা নিউ জেএমবির ৪৭ কিলারের নাম বলে গেছে শোলাকিয়া হামলায় জড়িত জঙ্গি শফিউল ইসলাম ডন। এই জঙ্গি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। তখন সে নিউ জেএমবির কিলারদের সবার নাম বলে দেয়।
এদের মধ্যে দু’জন ভারতে পালিয়ে আছে। আর তিনজন রয়েছে কারাগারে। একজন বন্দুকযুদ্ধে মারা গেছে। বাকিরা অধরা। তদন্তসংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য। খবর- যুগান্তর
গত ৭ জুলাই কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় হামলা করতে গিয়ে হাতেনাতে ধরা পড়ে জঙ্গি শফিউল ইসলাম ডন। নিউ জেএমবিতে তার সাংগঠনিক নাম ছিল আবু মোকাতিল। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাটের দক্ষিণ দেবিপুরের সিংড়া এলাকায়। তার বাবার নাম আবদুল হাই। পেশায় টিভি মেকার আবদুল হাই স্থানীয় জামায়াতের সমর্থক। শফিউল নিজেও শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল।
হামলার পর শফিউল বেশ কিছু দিন ময়মনসিংহে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। গত ৪ আগস্ট রাতে র্যাবের টহল গাড়ির ওপর হামলা করে জঙ্গিরা শফিউলকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করে। এতেই মারা যায় শফিউলসহ আরেক জঙ্গি। নিহত হওয়ার এক ঘণ্টা আগেও গোয়েন্দাদের কাছে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেয় শফিউল। এসব তথ্যে নাম আসে কিলারদের।
জানা গেছে, কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়ার সময় আটক জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান ও শোলাকিয়া হামলার ঘটনায় আটক এবং পরে গুলিতে নিহত জঙ্গি শফিউল একই গ্রুপের কিলার। হামলার আগে এরা ভাগ হয়ে নাশকতায় অংশ নিয়েছিল।
গোয়েন্দাদের কাছে জঙ্গি শফিউল আরও স্বীকারোক্তি দেয় যে, তাদের ‘স্যার’ তামিম আহমেদ চৌধুরীর কাছে (নারায়ণগঞ্জে অভিযানে নিহত) কিলারদের সবার তালিকা ছিল। এদের প্রায় সবার সঙ্গেই তামিম বৈঠকও করেছিলেন। এমনকি শোলাকিয়া হামলার আগে তামিমই জঙ্গি শফিউল ও আবিরকে (নিহত) ঘটনাস্থলের অদূরে রেখে যায় বলে স্বীকার করেছে সে (শফিউল)। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যে ৪৭ কিলারের নাম আসে। যারা নিউ জেএমবির সঙ্গে জড়িত। এরা সবাই বাড়ি ত্যাগ করে কথিত হিজরতে বের হয়েছে।
তালিকায় নাম আসা কিলাররা হল : বগুড়ার শাজাহানপুরের বাদল মিয়া ওরফে ওস্তাদ বাদল, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের আজাদুল কবিরাজ, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের আবদুল খালেক ওরফে মামা খালেক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শরিফুল ইসলাম খালিদ (ভারতে), রাজশাহীর মামুনুর রশিদ রিপন (ভারতে), বগুড়ার শাজাহানপুরের বিজয় ওরফে বাচাল বিজয়, দিনাজপুরের আবদুস সাকিব ওরফে মাস্টার সাকিব, গাইবান্ধার সাঘাটার জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধী ওরফে বড়ভাই, কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানা থেকে আটক বগুড়ার রাকিবুল হাসান ওরফে রিগ্যান (কারাগারে), দিনাজপুর দক্ষিণের স্থানীয় জামায়াত নেতা সাজ্জাদ হোসেন, দিনাজপুরের রানীগঞ্জের আক্তারুল ওরফে আনারুল (কারাগারে) একই জেলার ঘোড়াঘাটের হাফেজ মাসুদ, একই এলাকার মো. মাসুদ মিয়া, ঘোড়াঘাটের নূরপুরের রঞ্জু, একই জেলার নবাবগঞ্জের টুপিরহাটের শফিক, একই এলাকার ছাদেকুল, হাকিমপুরের বিজুল এলাকার মোত্তামিন, ঘোড়াঘাটের ভেরভেরী এলাকার মোজাহিদুন, ঘোড়াঘাটের জয়রামপুরের আকতারুল ইসলাম, একই থানার নবাবগঞ্জের টুপিরহাটের আদিল ও মিজান, রংপুর জেলার পীরগঞ্জের কুমারপুরের আরিফুল (কারাগারে), রাজধানীর উত্তরার সবুজ, গাজীপুরের ইব্রাহিম ও আবদুল ওয়াহিদ, কুড়িগ্রামের আবু হামজা আল মুহাজির, লালমনিরহাটের আবদুল ওয়াহেদ, গাইবান্ধার সাইদুল ইসলাম, বগুড়ার আকিফ কাইফি ওরফে জিহাদি, বগুড়ার গাবতলী এলাকার ছোট বাবু, কুড়িগ্রামের রাজারহাটের বিদ্যানন্দের চর এলাকার সাদ্দাম ওরফে চঞ্চল, কুড়িগ্রামের ফরকেরহাটের গোলাম রব্বানী, নাককাটি দারুল উলুম মাদ্রাসা এলাকার রিয়াজুল ইসলাম, কুড়িগ্রামের খলিলগঞ্জের হিমেল, পঞ্চগড়ের দেবিগঞ্জের সোনাহার এলাকার পুরস্কারঘোষিত বাইক হাসান ওরফে নজরুল (রাজশাহীতে বন্দুকযুদ্ধে নিহত), রাজধানীর কলাবাগান এলাকার ফরহাদ, টঙ্গীর আশরাফুল ইসলাম, নাটোরের আবু রোহানা ও পরাগ, দিনাজপুর সদরের মিজান ও হৃদয়, গাজীপুর সাইনবোর্ড এলাকার বকুল খান, লালমনিরহাটের জহিরুল, ময়মনসিংহের শিপন ও শফিক এবং সিরাজগঞ্জের কাদের ও রহমান।
জানতে চাইলে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) বলেন, জঙ্গি রিগ্যান ও শফিউলের কাছে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নতুন ধারার জেএমবির কয়েকটি সেলের বেশ কিছু সদস্যের নাম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে কয়েকজন কল্যাণপুরের ঘটনায় দায়ের করা মামলার আসামি। এ ছাড়া অন্য যাদের নাম পাওয়া গেছে তাদের সবার বিষয়ে প্রাথমিক ধারণা মিলেছে। এদের সবাইকে একে একে আইনের আওতায় আনা হবে।
সংশ্লিষ্ট একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, জঙ্গি শফিউলের কাছ থেকে পাওয়া জঙ্গিদের তালিকার মধ্যে ১২ থেকে ১৩ জন নিউ জেএমবির কমান্ডার। এ ছাড়া নতুন করে খোঁজা হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের অন্যতম নেতা জাহাঙ্গীর ওরফে রাজীব গান্ধীকে। ওই অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে হামলায় জড়িত এই রাজীবের নাম গুলশান হামলার পর জানা যায়। সে জঙ্গিদের গ্রেনেড ও অস্ত্র সরবরাহ করত।
এই গোয়েন্দা কর্মকর্তা আরও জানান, তালিকায় নাম আসা ৪৭ জনের মধ্যে কেউ হামলাকারী, কেউ ব্যাকআপ পার্টি এবং কেউ নিয়োজিত থাকে রেকি করার কাজে। তবে তারা সবাই প্রশিক্ষিত কিলার।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন
ময়মনসিংহে ওসি-এসপি’র বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর
সরকারি দায়-দায়িত্ব ও কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথবিস্তারিত পড়ুন
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণের সাথে রায়েছে বিচার বিভাগ
দেশের মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিচার বিভাগ জনগণের সঙ্গে আছেবিস্তারিত পড়ুন