বন কেটে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়!
বন বিভাগের জমিতে তৈরি হচ্ছে চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস। এজন্য কাটা পড়ছে প্রায় দেড় হাজার গাছ। কক্সবাজার শহরের অদূরে দরিয়ানগর বড়ছড়া এলাকায় এটি ঘটছে। জমি দখল ও গাছ কাটার জন্য অনুমতিও নেয়া হয়নি বলে জানাচ্ছে বন বিভাগ। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের দাবি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে জমি বরাদ্দ নেয়া হয়েছে এবং এ বাবদ অর্থও পরিশোধ করা হয়েছে। চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ক্যাম্পাস চট্টগ্রামের খুলশীতে অবস্থিত। এর আয়তন প্রায় সাত একর।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, জমি সংকটের কারণে অনেক ইনস্টিটিউট স্থাপন করা সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণে মূল ক্যাম্পাসের বাইরে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য ২০১০ সালে বিশ্ববিদ্যালয় আইনও সংশোধন করা হয়। প্রথম ক্যাম্পাসটি কক্সবাজারে স্থাপন করা হচ্ছে। তবে ওই ক্যাম্পাস নির্মাণ হলে বনাঞ্চল হুমকির মুখে পড়বে বলে মনে করছে কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগ। এরই মধ্যে নির্মাণ কার্যক্রম বন্ধ রাখার পদক্ষেপ নিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক ও বন বিভাগের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে ১ অক্টোবর চিঠি দিয়েছেন কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আলী কবির।
ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, কক্সবাজার সদর উপজেলার ঝিলংজা মৌজার ৬৯২ নং আরএস দাগের (যার তুলনামূলক বিএস দাগ নং-২৫০০১) এ বন বিভাগের রক্ষিত বন। ঝিলংজা মৌজার ৬৯২ নং আরএস দাগসহ অন্যান্য দাগের ২ হাজার ১৪৫ দশমিক শূন্য ২ একর ভূমিকে রক্ষিত বন ঘোষণা করেছে সরকার। ঘোষণাকৃত এ রক্ষিত বনভূমির পাঁচ একর জমিতে ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইনবোর্ড স্থাপন করে ইট দিয়ে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এর কোনো অনুমতি নেয়া হয়নি। দেখা যায়, কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের দরিয়ানগর এলাকায় সড়ক থেকে আধা কিলোমিটার ভেতরে স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। রাস্তা থেকে ক্যাম্পাসের জমি পর্যন্ত কয়েকটি সাইনবোর্ড ঝোলানো রয়েছে। বনের ভেতর দিয়ে ক্যাম্পাসে যেতে রাস্তা নির্মাণে পাহাড়ও কাটা হয়েছে।
বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা মো. আলী কবির বলেন, জাতীয় বন নীতিমালা ১৯৯৪ অনুযায়ী, বনায়ন ছাড়া অন্য কাজে বনভূমি ব্যবহারের জন্য সরকারপ্রধানের অনুমতির প্রয়োজন রয়েছে। জাতীয় ভূমি ব্যবহার নীতিমালা ২০০১-এর ১৭ অনুচ্ছেদে ভূমি ব্যবহার নীতিমালার মুখ্য দিকগুলো বর্ণনা করা হয়েছে, যেখানে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় কর্তৃক বনাঞ্চল বনভূমি হিসেবে চিহ্নিত থাকবে এবং বর্তমানে ব্যবহূত বনভূমির সংরক্ষণ, রক্ষণাবেক্ষণ এবং সম্প্রসারণে উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে মর্মে উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং গেজেটভুক্ত সরকারি বনভূমিতে স্থাপনা তৈরির কোনো সুযোগ নেই। ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মেরিন ফিশারিজ অনুষদের ডিন অধ্যাপক নুরুল আবছার খান বলেন, ‘ভেটেরিনারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস স্থাপনের জন্য সরকার কক্সবাজার শহরতলির দরিয়ানগর বড়ছড়া এলাকায় ঝিলংজা মৌজার ২৫০০১ দাগের খাস খতিয়ানভুক্ত পাঁচ একর জমি বরাদ্দ দিয়েছে। এর মূল্য বাবদ ২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। আমরা অবৈধ দখলদার নই।’ ইয়ুথ এনভায়রনমেন্ট সোমাইটি (ইয়েস) কক্সবাজারের সাংগঠনিক সম্পাদক দীপন বিশ্বাস বলেন, এমনিতে নানা কারণে দিন দিন বনভূমি সংকুচিত হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে কক্সবাজারের বন, পাহাড় ও জীববৈচিত্র্য সংকটে পড়েছে। প্রকৃতি ধ্বংসের প্রভাব দিন দিন আমরা দেখতেই পাচ্ছি। এর মধ্যেই বন কেটে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস নির্মাণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। অথচ কক্সবাজারে অনেক খাসজমি রয়েছে, যেখানে এ ক্যাম্পাস স্থাপন করা যায়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কক্সবাজার স্পেশাল’ ট্রেন চালু হবে আগামী ১২ জুন
সাময়িক সময়ের জন্য বন্ধ হওয়া চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার রুটে চলাচলবিস্তারিত পড়ুন
সন্ধ্যার মধ্যে ঝড়ের আশঙ্কা
আবহাওয়া অফিস কক্সবাজার অঞ্চলের ওপর দিয়ে সর্বোচ্চ ৬০ কিলোমিটার বেগেবিস্তারিত পড়ুন
পালিয়ে আসা ২৮৮ বিজিপি-সেনাকে ফেরত পাঠালো বিজিবি
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সরকারদলীয় বাহিনী ও বিদ্রোহীদের সঙ্গে চলমান সংঘাতবিস্তারিত পড়ুন