বরফের রাজ্য মানালি
হিমালয়কে বলা হয় পৃথিবীর তৃতীয় মেরু। আর সেই উপত্যকার বরফ রাজ্য হলো মানালি। প্রকৃতি তার সব সুন্দর যেন এখানে ঢেলে দিয়েছে পাহাড়ের কোণে কোণে। যাঁরা ঠান্ডা আবহাওয়া ভালোবাসেন, তাঁদেরও হাড় কেঁপে উঠবে মানালিতে বেড়াতে এসে। আর পাহাড়ের গায়ে বরফের শুভ্র আল্পনা, সঙ্গে মেঘের আনাগোনা আপনাকে প্রতিমুহূর্তে মুগ্ধ করবে।
শিমলা বেড়াতে এসে বরফ রাজ্য মানালি দেখব না, তা কি করে হয়। শুনেছি এরা নাকি মামা-ভাগ্নে। মামার সঙ্গে তো পরিচিত হলাম। তাহলে যাওয়া যাক ভাগনেকে জানতে। শিমলা থেকে মানালি যাওয়ার রাস্তা সবটাই পাহাড়ের বুক চিরে বানানো। তাই যেতে যেতে কত রকমের পাহাড় যে আপনার দেখা হয়ে যাবে তা আপনি কল্পনাও করতে পারবেন না। একবার মনে হবে পাহাড়ের একদম নিচে নেমে এসেছি তো আবার মনে হবে পাহাড়ের চূড়ায় উঠে গিয়েছি।
পাহাড়ের পাথর কেটে রাস্তা বানানো হয়েছে বলে মাথার ঠিক ওপরেই টুকরো টুকরো বিশাল পাথরের খণ্ড। মনে হবে এই বুঝি ঝম করে পাথর ছুটে পড়ল গায়ের ওপর। পথে কোথাও কোথাও পেয়েও যাবেন খসে পড়া বিশাল পথরের খণ্ড। পাহাড় বেয়ে চলতে চলতে হঠাৎ ঢুকে পড়বেন পাহাড়ের ভেতরে। নিকশ কালো অন্ধকার, একটু পরপর বসানো আছে বাতি, তবু যেন অন্ধকার কাটছে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝে যাবেন এখন চলছেন পাহাড় কাটা টানেলের ভেতর দিয়ে। ভয় আর অ্যাডভেঞ্চারের এ এক অন্যরকম অনুভূতি। দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে এভাবেই। তারপর মিলবে আবার দিনের আলো।
মনে হবে এ যেন একই দিনের ভেতর আরেকটি নতুন দিন। মানালির আগেই রয়েছে কুল্লু শহর। কিছুক্ষণ সময় করে ঘুরে নিতে পারেন সেখানেও। আর যারা বিমানে চড়ে মানালি যেতে চান তাদের অবশ্যই কুল্লু বিমানবন্দরে নামতে হবে। গাড়িতে শিমলা থেকে মানালি পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে যাবে। সময় লাগবে আট ঘণ্টার ওপর। তাই হোটেলে উঠে বিশ্রাম নিয়ে নিন। আর হোটেলের বেলকনিতে বসেই উপভোগ করতে থাকুন সন্ধ্যাটা। পাহাড় বেয়ে নেমে আসা বরফ গলা ঠান্ডা পানি ঝম ঝম শব্দে বয়ে চলেছে যে নদীর বুকে তার নাম ‘বিস’। এটি আপনি দেখতে পারবেন বেলকনিতে বসেও।
মানালিতে যেসব স্থানে বেড়াবেন
মানালিতে আসলে আলাদা করে বেড়ানোর জায়গা খোঁজার প্রয়োজন হয় না। হোটেলে আশপাশে সব জায়গা প্রায় একই রকম। সবখানেই আকাশছোঁয়া পাহাড়, আপেলবাগান, বরফের শুভ্রতা আর মেঘ। তবে সবাই এক জায়গায় সমবেত হতে একটু ভিন্নভাবে উপভোগ করতে কিছু স্থান তো বেছে নিতেই হয় আলাদা করে। সোলাং ভ্যালি, রোথাংপাস, হাদিমবা টেম্পল, মনিকারন তার মধ্যে অন্যতম। বরফের দেশে এসে স্কেটিং তো করতেই হবে। আর তার জন্য আপনাকে যেতে হবে সোলং ভ্যালি। এখানে আপনি নির্ধারিত মূল্যে ভাড়ায় পেয়ে যাবেন স্কেটিং-এর সবকিছু। নিয়ে নিন আর গড়াগড়ি দিতে থাকুন বরফের মাঝে। এ এক অন্যরকম অনুভূতি। আবার আপনি চাইলে পাখির ডানায় করে ভেসে বেড়াতে পারেন আকাশে। বলছি প্যারাগ্লাইডিংয়ের কথা।
আপনাকে সহায়তা করতে রয়েছেন অভিজ্ঞ প্যারাগ্লাইডার। তাঁর সঙ্গে প্যারাসুটে বসে হাওয়ায় উড়তে উড়তে উপভোগ করুন পাহাড়, গাছপালা, ঘরবাড়ি সবকিছুর ওপর জমে থাকা বরফের শুভ্রতা, তার গায়ে রোদের আলোর ঝিকিমিকি। তবে প্যারাগ্লাইডিংয়ের জন্য আপনাকে উঠতে হবে অনেক ওপরে, তার জন্য রয়েছে রুফওয়ে। এটি আপনাকে নিয়ে যাবে প্রায় তিন কিলোমিটার ওপরে। ওপরে উঠেই আত্মহারা হলে চলবে না। পাহাড়ের ওপরে উচ্চতার কারণে অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে তাড়াতাড়ি। তাই সবকিছু করতে হবে সময়, নিয়ে ধীরে ধীরে। সোলং ভ্যালিতে ছোট বাচ্চা থেকে শুরু সব বয়সীদের আনন্দ উপভোগের জন্য রয়েছে অনেক ধরনের রাইড। তার জন্য আপনাকে নির্ধারিত মূল্যের টিকেট নিয়ে নিতে হবে। সোলাং ভ্যালি দেখা শেষ করে চলে যান রোথাংপাস। মানালি থেকে রোথাং পাস যেতে সময় লাগবে দেড় ঘণ্টার বেশি, রাস্তাও বেশ দুর্গম। রওনা দেওয়ার আগে ভালোভাবে জেনে নিন রাস্তার অবস্থা। না হয় আটকা পরতে পারেন রাস্তার ফাঁদে। রোথাংপাস পৌঁছে উপভোগ করুন বরফের সমুদ্র। কয়েক কিলোমিটার দূরেই চীনের সীমানা হওয়ায় আর সামনে আগানো মানা, তাই রুথাংপাসেই থেমে যেতে হবে আপনাকে। সবকিছু উপভোগ করতে করতে আনন্দে আত্মহারা হলে চলবে না।
মনে রাখবেন আপনি এখন পৃথিবীর ছাদে অবস্থান করছেন। অক্সিজেনের স্বল্পতার কারণে এখানে দ্রুত শরীর অসুস্থ হয়ে পরার সম্ভাবনা থাকে। আর হীমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রা হওয়ায় আপনাকে অবশ্যই শীত নিরোধক পোশাক ভালোভাবে চেপে নিতে হবে, প্রয়োজনে ভাড়া করেও নিতে পারেন মানালি থেকে। আর দিনের আলো থাকতেই ফিরে আসুন রোথাংপাস থেকে। পরদিন সকালের নাশতা করে প্রথমেই দেখে নিন হাদিমবা টেম্পল। মূল শহেরের কাছেই অবস্থিত এটি। তাই দ্রুত হাদিমবা টেম্পল দেখে চলে যান মানিকারন। সেখানে রয়েছে গরম পানির ঝরনা। পাহাড়ের ভেতর থেকে সব সময় ঝরে পড়ছে গরম পানি। যেখানে ঠান্ডায় হার জমে আসে সেখানে এই গরম পানির ঝরনায় গোসল করা এক অন্যরকম আনন্দের ব্যাপার। আর এই বিশেষ কারণেই এটি ভারতের তীর্থ যাত্রীদের কাছে খুবই পবিত্র। এখানেও রয়েছে একটি মন্দির। মানালিতে কেনাকাটার জন্য মূল শহরের কেন্দ্রে মালরুডই উত্তম।
কোথায় কোথায় পাবেন হোটেল
মানালি শহরটি শিমলার মতো এক জায়গায় আঁটসাঁট নয়। একটু ছড়ানো হওয়ায় মূল রাস্তার পাশেই গড়ে উঠেছে অনেক হোটেল। পাঁচতারকা থেকে শুরু করে সাধসাধ্যের মধ্যে সব ধরনের হোটেল পাবেন এখানে। মূল শহরের বেশ আগে থেকেই শুরু হওয়া হোটেলগুলো শহর পেরিয়ে চলে গেছে সোলং ভ্যালি পর্যন্ত। হোটেল সিতারা ইন্টারন্যাশনাল, হোটেল মাউনটেন ফেস, সান পার্ক রিসোর্ট, হোটেল স্নো পার্ক, সোলং স্কি রিসোর্ট, হোটেল আইসল্যান্ডসহ বহু হোটেল রয়েছে এখানে। এগুলোতে আপনার প্রতিদিন খরচ হবে দেড় হাজার থেকে চার হাজার রুপির মধ্যে।
সাবধানতা :
- শিমলা থেকে মানালি যাওয়ার রাস্তা সম্পূর্ণটা পাহাড়িপথ এবং পৌঁছাতে দীর্ঘ সময় লাগে বিধায় পথে মাঝে মাঝে যাত্রাবিরতি দিন।
- প্রচণ্ড শীতে শরীর জমে আসার দরুন অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাই পর্যাপ্ত শীতের কাপড় সঙ্গে রাখুন।
- আপেলবাগান দেখে আত্মহারা হয়ে আপেল ছিঁড়ে আনন্দ উপভোগ থেকে বিরত থাকুন।
- সোলাং ভ্যালিতে গিয়ে প্যারাগ্লাইডিং করা বা স্কেটিং করার সময় সতর্ক থাকুন এবং অভিজ্ঞ গাইডদের সহায়তা নিন। নয়তো দুর্ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা থাকে।
- রুথাংপাসে অবশ্যই দৌড়ঝাঁপ করা যাবে না। এতে শ্বাসকষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অক্সিজেনস্বল্পতা এড়াতে ধীরে ধীরে থেমে থেমে বেড়াবেন।
- ‘বিস’ পাহাড়ি নদী হওয়ায় এর স্রোত এত বেশি যে, কেউ একবার পড়লে আর খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। তাই ভয়ংকর এই নদীর পানি ছুঁয়ে দেখা বা নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করতে এর কাছে যাওয়া সরকারিভাবেই নিষেধ রয়েছে এখানে। এ বিষয়ে অবশ্যই সতর্কতা অবলম্বন করুন।
https://youtu.be/nU8XbFYxrhU
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন