বরিশালের সেই ‘কুলি’ আজাদ এখন সাহেব, এলাকার মানুষদের মাঝে ব্যাপক তোলপাড়
আরিফিন রিয়াদ(বরিশাল)::
বরিশালের গৌরনদীর সেই কুলি আজাদের আসল গোমর এবার ফাঁস হয়ে জনসস্মুখে হাড়ি ভেঙে গেছে। তাই গৌরনদীসহ বরিশাল বিভাগের মানুষদের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় সৃস্টি হয়েছে।
অনেক সচেতন মানুষ কুলী আজাদের কর্মকান্ডকে ধিক্কার জানিয়ে তাকে আইনের আওতায় এনে কড়া শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। কে এই কুলি আজাজ? সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ ২৪ বছর আগে গৌরনদীর টরকী বন্দরে কুলিগীরি করতো রুস্তুম আকনের ৩য় পুত্র আজাদ।
সে সময় প্রায় ৩ বছর কুলিগীরি করে কিছু পয়সা জমিয়ে টরকী বন্দরে ড্রামের তেল কিনে তা উক্ত বাজারসহ আশপাশ এলাকায় খুচরা বিক্রি করে বেড়াতো আজাদ।
পরেক্ষনে তেল বিক্রির সাথে সাথে পিঁয়াজ বিক্রি করাও শুরু করে সে। কয়েক বছর তেল ও পিঁয়াজ বিক্রি করে কিছু অর্থকরী জমিয়ে পূর্বপরিচির দুর সম্পর্কের এক আতœীয়র মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডে পাড়ি জমায়।
সেখানে গিয়ে কুলী আজাদকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রায় ৫ মাসের মাথায় মুসলীম পরিবারে জন্ম নেয়া আজার খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহন করে সুইজারল্যান্ডের স্থানীয় এক নারীকে বিয়ে করেন।
তার কিছু দিন পরে আজাদ সেখানের নাগরিত্ব পেয়ে বাংলাদেশীদের সুইজারল্যান্ডে নিয়ে মোটা অংকের বেতনে চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে তার জন্মস্থান গৌরনদীর বিভিন্ন যুবকদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
তাদের মধ্যে এমন ২ জনের নাম আনোয়ার ও ছালাম। তাদের ২ জনের কাছ থেকে প্রায় ১৫ বছর আগে ৮লাখ করে দু’জনার কাছ থেকে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে দেয় আজাদ।
কিন্তু টাকা দেয়ার ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত তাদের দু’জনকে সুইজারল্যান্ডে নিয়ে চাকুরী বা তাদের কাছ থেকে নেয়া ১৬ লাখ টাকা ফেরত দেয়া হয়নি এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত।
যদিও শুধু এরা দু’জনই নয় তাদেরমত আরও প্রায় অর্ধশত জনের কাছ থেকে আজাদ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে দেয়ার খবরের সন্ধান মিলেছে আমাদের প্রতিবেদকের অনুসন্ধানী রিপোর্টে।
কুলি আজাদ শুধু প্রতারনা করেই থামছে না। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে সে সুইজারল্যান্ড থেকে চোরাই পথে সোনা এনে তা বাংলাদেশে ছড়িয়ে দিচ্ছে। তার রয়েছে সোনা চোরা চালাদের বিশাল একটি সিন্ডিকেট।
সেই সিন্ডিকেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক আজাদ। জানা গেছে, আজাদ মাসের মধ্যে সুইজারল্যান্ড থেকে বাংলাদেশে প্রায় ৩/৪বার আসে। এতে চোরাচালানের বিষয়টি আরও গুরত্ববহন করে বলেও একাধিক সূত্র আমাদের নিশ্চিত করেছেন।
কারন সে সুইজারল্যান্ডের নাগরিকত্ব লাভ করলেও সেখানে তার নেই কোন ব্যবসা বাণিজ্য তাছাড়া প্রথম স্ত্রী ও ২ সন্তার সেখানেই থাকছে। আজাদের বাংলাদেশে ব্যবসা বাণিজ্য না থাকলেও সে কি কারনে মাসের মধ্যে ৩ থেকে ৪ বার দেশে আসছে সেটাই এখন প্রশ্ন? এক সময়ে নুন আনতে পান্তা ফুরানো কুলী আজাদ সুইজারল্যান্ডে গিয়ে মানুষের টাকা মেরে ও চোরাই পথে স্বনের বিশাল চালান বাংলাদেশে এনে নিজেই এখন অর্থকরীর দিক থেকে ফুলে ফেপে উঠেছে।
গৌরনদীর মানুষদের মাঝে নিজেকে জানান দিতে ও তরুন সমাজ সেবকের তালিকায় নাম উঠাতে ২০১৪ সালের দিকে গৌরনদীর বেজগাতীতে ‘সুইজ হাসপাতাল’ নাম দিয়ে একটি হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন আজাদ। আর সেই হাসপাতালটিকে উদ্বোধন করান গৌরনদী পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমানকে দিয়ে।
তার কিছুদিন পর দক্ষিনাঞ্চলের আ’লীগের একমাত্র অভিভাবক ও সিংহ পুরুষ খ্যাত আলহাজ্ব আবুল আব্দুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পুত্র আশিক আব্দুল্লাহকে হাসপাতালে এনে সংবর্ধনা প্রদান করেন তিনি। প্রথমে পৌর মেয়র ও তার কিছু দিন পরে দখিনার আ’লীগের কর্ণধর হাসানাত পুত্র ও আ’লীগ নেতা আশিক আব্দুল্লাহ তার হাসপাতালে আসায় কুলী আজাদ বলে বেড়াচ্ছের তারা ২জন তার সাথে সবসময় যোগাযোগ রাখছেন।
এমনকি হাসপাতলটির সাথে তারাও সরাসরি যুক্ত আছে বলেও স্থানীয় মানুষদের মাঝে বলে বেড়াচ্ছে। অন্যদিকে আজাদ নিজেকে বিত্তিশালী ও ভিআইপি হিসাবে এলাকার মানুষের মাঝে নিজেকে আলোচনায় রাখতে গৌরনদীতে হেলিকপ্টরে করে আসেন। গত ২ বছর আগে কুলী আজাদ রাজধানী থেকে একটি প্রাইভোট হেলিকপ্টার ভাড়া করে গৌরনদীর টরকি বন্দর ভিকটিরীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে এসে নামেন। এসয় হেলিকপ্টারটিকে ২দিন সেই মাঠে ভাড়া দিয়ে বসিয়ে রেখেছিলেন তিনি।
কারন কে হেলিকপ্টারে করে গৌরনদীতে এসেছে তা স্থানীয় মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে এই কৌশল অবলম্বন করেছেন বলে জানাগেছে। অভিযোগ রয়েছে আজাদ ‘সুইজ হাসপাতাল’ প্রতিষ্ঠার পর পর সেখানে বিভিন্ন পদে চাকুরী দেয়ার নাম করে অসংখ্য তরুনীদের সর্বনাশ করেছে। এমনি একজন রুপা নামের এক নারীকে টেকনজলিস্ট পদে হাসপাতালটিতে চাকুরী দেয়ার পর আজাদ একাধিক বার ধর্ষণ করে। পরোক্ষনে উক্ত তরুনীর ধর্ষণের ঘটনা মিডিয়ায় ও স্থানীয়দের মাঝে প্রকাশ পেলে ভুক্তভোগী নারী মামলা দায়েদের উদ্যোগ নিলে আজাদ মামলা থেকে বাঁচতে তার হাত-পা ধরে তাকে ২য় স্ত্রী হিসাবে বিয়ে করে মামলা থেকে রক্ষা পায়।
ধর্ষণের শিকার হয়ে আজাদের ২য় স্ত্রী হওয়ায় রুপার ঘর-সংসার এখন সুইজ হাসপাতাল। তার খাওয়া দাওয়া জীবনযাপন সবই কিছুই সুইজ হাসপাতাল ঘিরে। নষ্ট আজাদ রুপার সর্বনাশ করে বিয়ে করে রক্ষা পেলেও এখনও অন্য নারীর প্রতি তার নিষিদ্ধ আকাঙ্খা থামছে না। একটি বিশ্বস্ত সূত্র নিশ্চিত করেছে আজাদ উক্ত হাপাতালটি মূল নারী ধরার ফাঁদ পেতে সাইবোর্ড হিসাবে ব্যবহার করেছে। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে গত কয়েক মাস আগে তার হাসাপাতালে কাকন, শামিমা, সাথি, ঝর্না ও ইভা নামের ৫ নার্স বিভিন্ন সময় চাকুরী ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন।
একটি অসমর্থিত সূত্র আমাদের নিশ্চিত করেছে চাকুরী ছেড়ে যাওয়া উক্ত ৫ নার্সকে কুলী থেকে আউটারী করে কোটিপতি বনে যাওয়া আজাদ বিভিন্ন সময় তাদেরকে কৌশলে ফাঁদে ফেলে যৌন হয়রানী করতো। তাই নষ্ট আজাদের হাত থেকে বাঁচতে উক্ত ৫ নার্স চাকুরী ছেড়ে চলে যায়। যদিও চাকুরী ছেড়ে যাওয়া উক্ত নার্সরা তাদের সাথে খারাপ কিছু ঘটে যাওয়ার বিষয়গুলো প্রতিবেদকের কাছে এড়িয়ে যান।
কিন্তু তারা চাকুরী ছেড়ে গিয়েও আজাদের হাত হাত থেকে নিজেদের শতভাগ রক্ষা পাচ্ছেনা বলে জানাগেছে। কারন আজাদ এখনও চাকুরী ছেড়ে দেয়া নার্সদের চা খেতে তার ব্যাক্তিগত চেস্বারে দাওয়াত করে। সাবেক নার্সদের কেউ আজাদের চেম্বারে না আসতে চাইলে তাদের সাথে পূর্বে ঘটানো আপত্তিকর গোপন ভিডিও ফাঁস করার ভয় দেখাচ্ছে বলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নার্স এপ্রতিবেদককে জানান।
এবিষয়ে জানাতে আজাদের ব্যবহৃত মুঠফোন নাম্বার ০১৮৮৩০…৯৩ একাধিক বার কল দেয়া হলেও তিনি তা রিসিভ করেননি। প্রিয় পাঠক, কুলী আজাদের কু-কর্ম একদিনে লিখে শেষ করা সম্বব নয়। আজ প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হল, কাল থেকে ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হবে কুলী আজাদের উন্থান ও নষ্টামীর কর্মকান্ড। চোখ রাখুন আমাদের পাতায়…
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বরিশালে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার
বরিশাল নগরীর সাগরদী এলাকা থেকে দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূরবিস্তারিত পড়ুন
বরিশাল মহানগর বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়েছে বিদ্রোহীরা
বরিশাল মহানগর যুবদলের কমিটিতে স্থান না পাওয়াই বিএনপি অফিসে তালাবিস্তারিত পড়ুন
বরিশালে স্ত্রীকে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন, গরম রড দিয়ে শরীরে ছ্যাকা, ক্ষতস্থানে গুঁড়া মরিচ ও লবণ !
বরিশাল : জেলার গৌরনদী উপজেলার শরিফাবাদ গ্রামে স্ত্রীকে শিকল দিয়েবিস্তারিত পড়ুন