বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক ফেরিওয়ালা
২৩৭ রান তখনকার সময়ে অনেক রান কারণ তার আগের ম্যাচেই ভারতের বিপক্ষে ১৮৪ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। বিশ্ব ক্রিকেটে কেনিয়া তখন সমীহজাগানিয়া দল। মার্টিন সুজি, আসিফ করিম, স্টিভ টিকোলোরা তখন অনেক বড় তারকা। ২৩৭ রানের লক্ষ্যে মোহাম্মদ রফিককে ওপেনিংয়ে পাঠিয়ে দিলেন আকরাম খান। আতহার আলী খান ও রফিক মিলে ২৫ ওভারে তুলে নিলেন ১৩৭ রান। রফিক আউট হলেও অন্যপ্রান্ত ঠিকই সামলে রাখেন আতহার। ১৬৬ রানে আতহার যখন ফিরে আসেন, বাংলাদেশ তখন জয়ের খুব কাছে। আকরাম খানের অধিনায়কোচিত ৩৯ রানের ইনিংস আর আমিনুল ইসলাম বুলবুলের ধৈর্যশীল ২০ রানে ৬ উইকেটে জয় নিয়ে ইতিহাসের বুকে লাল-সবুজ পতাকা এঁকে দেয় বাংলাদেশ। ১৯৯৮ সালে হায়দরাবাদে কেনিয়াকে হারিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম জয় পায় বাংলাদেশ। আর সেদিন ৪৭ রানে দায়িত্বশীল এক ইনিংস খেলে এই বিজয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন আতহার আলী খান।
আতহারের ব্যাটিং প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায় ১৯৯০ সালে চণ্ডিগড়ে ভারতের বিপক্ষে। কপিল দেব, ভেংকেটপতি রাজু, মনোজ প্রভাকরদের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে ৪৪ রানের এক দারুণ ইনিংস খেলেন আতহার। অপর প্রান্তে ফারুক আহমেদ করেন ৫৭ রান। ছয়দিন বাদে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলেন ৭৮ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস। এখন ৭৮ রান কিছু না হলেও অনেক বছর ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রান হয়েছিল এই ৭৮ রান।
অর্জুনা রানাতুঙ্গা ও অরবিন্দ ডি সিলভার ব্যাটে ভর করে ২৪৯ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাবে শুরু থেকেই উইকেট হারাতে থাকে বাংলাদেশ। নুরুল আবেদীন, ফারুক আহমেদ, মিনহাজুল আবেদীন, আমিনুল-আকরামরা একের পর এর প্যাভিলিয়নে ফিরতে থাকেন। প্রতিকূলতার বিপক্ষে একাই লড়ে যান আতহার। ৯৫ বলে ৭৮ রানের দর্শনীয় এক ইনিংস খেলেন এই ব্যাটসম্যান। ম্যাচ শেষে রানাতুঙ্গা, সিলভাদের ছাপিয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জেতেন আতহার আলী খান। বাংলাদেশের ক্রিকেটে এটিই প্রথম ম্যাচসেরার পুরস্কার।
মাত্র ১৯টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলা এই ব্যাটসম্যান জীবনের শেষ ম্যাচটি খেলেন ১৯৯৮ সালে ভারতের বিপক্ষে। শেষ ম্যাচে শচীনের উইকেট লাভ করেন তিনি। এরপর ধারাভাষ্যকার হিসেবে যোগ দেন এই ক্রিকেটার।
২০০৩ সালে মুলতান টেস্টে রশীদ লতিফ যখন অলক কাপালির ক্যাচ নিয়ে মিথ্যে দাবি করেছিলেন, আতহার চিৎকার করে বলেছিলেন, ‘এটা অন্যায়।’ রমিজ রাজা খোটা মেরে বলেন, ‘টিপিক্যাল বাংলাদেশি স্টাইল।’ চুপ থাকেননি আতহার। বলেছিলেন, ‘অ্যান্ড লতিফ ডিড হোয়াট ইজ টিপিক্যাল পাকিস্তানি স্টাইল।’ ইটের জবাব পাটকেলেই দিয়েছেন তিনি। ডেভিড গায়কোয়ার, রমিজ রাজা–সিধুদের মতো ভাষ্যকাররা যখন বাংলাদেশকে নিয়ে বিদ্রূপ, সমালোচনায় মেতেছেন, টেস্ট স্ট্যাটাস কেড়ে নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। সেই কঠিন সময়ে বাংলাদেশের হয়ে একাই লড়েছেন আতহার। মাশরাফি-সাকিবদের হয়ে ধারাভাষ্য কক্ষে একাই গলা ফাটিয়েছেন তিনি। আর বারবার বলেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সুদিন আসবেই, সেটা খুবই নিকটে। হ্যাঁ, আতহার বাংলাদেশের সুদিন ফিরেছে। ক্রিকেটের রথী-মহারথীদের আজ বলে-কয়ে হারাতে পারি আমরা।
বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম দূত, ফেরিওয়ালা ও শুভাকাঙ্ক্ষী আতহার আলী খানের আজ জন্মদিন। দেশে দেশে বাংলাদেশের ক্রিকেটকে পরিচয় করিয়ে দিতে ক্রিকেটারদের চেয়ে তাঁর ভূমিকা কম নয়। ১৯৬২ সালের আজকের দিনেই ঢাকায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। শুভ জন্মদিন আতহার আলী খান।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন