বাংলাদেশে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন
বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, সংসদ এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থা দুর্বল হওয়ায় ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে অনিয়ম, শারীরিক নির্যাতন, দুর্নীতি এবং বিচারবহির্ভূত হত্যার অভিযোগ রয়েছে। গণমাধ্যম, নাগরিক সমাজ এবং দাতা দেশগুলোর সোচ্চার হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে ঘুষ এবং দুর্নীতি সমাজের গভীরে প্রবেশ করেছে। ব্রিটিশ সরকারের পররাষ্ট্র এবং কমনওয়েলথ অফিস ‘ওভারসিজ বিজনেস রিস্ক’ (বৈদেশিক ব্যবসায়িক ঝুঁকি) শীর্ষক এক প্রতিবেদন গত বুধবার প্রকাশ করেছে।
ভবিষ্যতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহী বা ইতিমধ্যে বিনিয়োগ করেছেন এমন ব্রিটিশ নাগরিকদের এই প্রতিবেদনে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুটি প্রধান দল আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) অভ্যন্তরীণ রাজনীতিকে প্রভাবিত করে। দল দুটির মধ্যে সম্পর্ক খুবই নাজুক। রাজনৈতিক ব্যবস্থা সাংঘর্ষিক এবং ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত। প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান পরস্পরের মুখোমুখি।
সাংঘর্ষিক রাজনীতি, ঘুষ, দুর্নীতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারকে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে যুক্তরাজ্য সরকার। ব্রিটিশ বিনিয়োগকারীদের জন্য প্রস্তুত নির্দেশনামূলক প্রতিবেদনটি বুধবার যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে বিরাজমান ঝুঁকিগুলো কী, সে বিষয়ে ব্রিটিশ কোম্পানিগুলোকে নির্দেশনা দিতেই এই প্রতিবেদন। রাজনীতি ও অর্থনীতি, ঘুষ ও দুর্নীতি, সন্ত্রাসবাদ, মানবাধিকার, সংঘবদ্ধ অপরাধ, মেধাস্বত্ব এবং প্রতিরক্ষামূলক নিরাপত্তা উপদেশ_ এই সাতটি উপশিরোনামে ঝুঁকিগুলোর বর্ণনা করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি দারিদ্র্য দূর করতে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। ২০০৫ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ।
২০১৪ সালে এসে সেই হার নেমে এসেছে ৩০ শতাংশে। বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারের ‘ভিশন-২০২১’-এর লক্ষ্য হলো এই সময়ের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা। বাংলাদেশের বর্তমান বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভও সন্তোষজনক। ২০১৫ সালের শুরুতে প্রথম তিন মাস রাজনৈতিক বিপর্যয়ে দেশটির ব্যবসায়িক সম্প্রদায় ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হলেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির ধারা শক্ত অবস্থানে রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশ তৈরি পোশাক খাত থেকে মোট রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশ অর্জন করে, যা মোট দেশজ সম্পদের (জিডিপি) ১২ শতাংশ এবং এই খাতটি ক্রমান্বয়ে সম্প্রসারিত হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের মোট তৈরি পোশাক রফতানির ৯০ শতাংশ কিনে থাকে। ইউরোপীয় বাজারে তৈরি পোশাক খাতের ১৩ শতাংশ বাংলাদেশের দখলে। মানবাধিকার পরিস্থিতির সমালোচনা করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে অভ্যন্তরীণ আইনের প্রয়োগ খুবই দুর্বল। আদালতের কার্যক্রম মামলার ভারে জীর্ণ। দেশটিতে এখনও মৃত্যুদণ্ড কার্যকর রয়েছে। দুর্নীতি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের উন্নয়নে বড় বাধা। প্রতিবেদনে বলা হয়, রাজনীতিবিদ, আমলা এবং আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা প্রায়ই তাদের ক্ষমতার অপব্যবহার করেন। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের দুর্নীতির সূচকে ২০১৪ সালে বিশ্বের ১৭৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১৪৫তম। ২০০৫ সালের পর থেকে দেশটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক জঙ্গি হামলা হয়েছে।
অব্যাহত জঙ্গি হামলার আশঙ্কার মুখে রয়েছে দেশটি। আন্তর্জাতিক এবং অভ্যন্তরীণ পর্যায়ে বেশ কিছু ছোট ও উপদলীয় জঙ্গি গ্রুপ সে দেশে তৎপর রয়েছে। উন্নয়নশীল বিশ্বের বহু দেশের চেয়ে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাকে অনেক নিরাপদ বলে অভিহিত করা হয়েছে। কিন্তু প্রতিবেদনে ব্রিটিশ নাগরিক যারা বাংলাদেশে আসবেন, তাদের জুয়েলারি এবং অর্থ নিরাপদে বহনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ঢাকাসহ দেশের অন্যত্র ছিনতাই এবং চুরি, ডাকাতি ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের কারণে ব্রিটেন তার দেশের নাগরিকদের যানবাহন নির্বাচন ও চলাচলে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে। বাংলাদেশকে একটি সংসদীয় গণতন্ত্র এবং মুক্তবাজার অর্থনীতির দেশ হিসেবে উল্লেখ করে নির্দেশনায় বলা হয়, ঘুষ ও দুর্নীতি বাংলাদেশের একটি ভয়াবহ সমস্যা।
এতে বলা হয়, শুধু যুক্তরাজ্যে নয়, বিশ্বের যে কোনো দেশে যুক্তরাজ্যের নাগরিক ও প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য ঘুষ প্রদান এবং গ্রহণ দুটোই বেআইনি। ঘুষ ও দুর্নীতি রোধের সরকারি প্রক্রিয়াতেও স্বচ্ছতার অভাব রয়েছে। প্রক্রিয়াগুলো আমলাতান্ত্রিক বাড়াবাড়ির দোষে দুষ্ট। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল এবং বিশ্বব্যাংকের এক বিজনেস জরিপে বাংলাদেশের অব্যাহত পিছিয়ে পড়ার বিষয়টিও এতে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই জরিপে মোট ১৮৯ দেশের তালিকায় বাংলাদেশের স্থান ১৩০-এ। ২০০৫ সালের পর থেকে সন্ত্রাস দমনে সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করা হয়েছে প্রতিবেদনে। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো বড় উদ্বেগের বলে এতে উল্লেখ করা হয়। এ সম্পর্কে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ মানবাধিকার সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক আইনের বেশ কয়েকটি সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ হলেও এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ আইনের প্রয়োগ বেশ দুর্বল।
ট্রেড ইউনিয়নের স্বাধীনতা এবং শিশুশ্রমের মতো বিষয়ে চরম উদ্বেগ বিদ্যমান। এ ছাড়া বাংলাদেশে পণ্যের নকল করা এবং মেধাস্বত্ব আইনের দুর্বলতার বিষয়ে ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বর্জনের কারণে অর্ধেকের বেশি আসন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হওয়ায় আওয়ামী লীগ দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতা পায়। বিরোধী জোট নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাইলেও শেখ হাসিনার সরকার ২০১১ সালে সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করে দেয়। বর্তমানে জাতীয় পার্টি বিরোধী দলের ভূমিকায় থাকলেও তারা সরকারের মন্ত্রিত্ব গ্রহণ করায় এক ভিন্নধর্মী অবস্থান উপভোগ করছে। সর্বশেষ অনিয়মের অভিযোগ এনে গত এপ্রিলে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনের মাঝপথে বিএনপির সরে দাঁড়ানোর ঘটনায় দেশটির নতুন করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফেরার সুযোগ নষ্ট হয়ে যায় বলে প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাময়িক বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেবিস্তারিত পড়ুন
কমলা হ্যারিসের ভোটের প্রচারণায় বাজবে এ আর রহমানের গান
আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসেরবিস্তারিত পড়ুন
উপদেষ্টা আদিলুর: পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না
দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেবিস্তারিত পড়ুন