বাংলাদেশ কি পারবে দ. আফ্রিকাকে হারাতে?
ক’দিনের জন্য স্বপ্ন স্বপ্ন হয়ে আসা চারদিকটায় হঠাৎ যেন নৈঃশব্দ্য। বাংলাদেশ দলের ড্রেসিংরুমের সামনে কোথায় সেই সেলফিশিকারিদের ভিড়, কোথায় গ্যালারিতে সেই গগনবিদারী বাংলাদেশ-বাংলাদেশ ধ্বনি…। শেষ বিকেলের মরা আলোয় সেখানে কি-না চারটি লোকের চিন্তিত মুখ একসঙ্গে। তিন নির্বাচকের সঙ্গে অধিনায়ক মাশরাফির সেই গোল বৈঠকের আলোচ্য বিষয় কান না পেতেও আন্দাজ করা যায়- প্রোটিয়াদের ১৪৮ রানে আটকে রেখে কি-না ৯৬ রানে অলআউট! সদ্যমৃত ম্যাচটির পোস্টমর্টেম করতে বসে দুর্ঘটনা নয়, আত্মহত্যাই এসেছে প্রতিবেদনে। ‘এই রান তাড়া করা উচিত ছিল আমাদের। দু-একটি বড় জুটি হলেই সেটা সম্ভব হতো।
কিন্তু আমাদের ব্যাটসম্যানরা তা পারেনি’- শুকনো মুখে ম্যাচ শেষে আত্মসমর্পণের ব্যর্থ চেস্টা মাশরাফি বিন মর্তুজার। এমন নিয়ন্ত্রিত বোলিং করার পর আফসোস ছিল তার গলায়, যেটা বেরিয়ে এসেছিল ক্যামেরার সামনে। কিন্তু ভেতরের বিরক্তি, সেটা কিন্তু লুকানোই ছিল কোচ হাথুরুসিংহের মধ্যে। ব্যাটসম্যানদের অতি উন্মাসিক শট খেলা, অকারণে উত্তেজিত হয়ে যাওয়াটা মোটেই ভালোভাবে নিচ্ছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। যে ‘ফিয়ারলেস’ ক্রিকেটের স্লোগানে দৃঢ় হয়েছে অন্তরের বিশ্বাস, সেটারই স্থান আর কাল বিবেচনায় না এনে প্রয়োগ করতে গিয়ে তাসের ঘরের মতো ভেঙে গেছে ব্যাটিং লাইনআপ। তা না হলে প্রথম ওভার থেকেই কেন তামিম ডাউন দ্য উইকেটে আসবেন, কেন সাবি্বর রিভার্স সুইপ খেলতে যাবেন। নেটে কতটা সময়ই বা তিনি এই শট প্র্যাকটিস করেন। সিরিজের শুরুতেই হারের এই ধাক্কাটা হতাশার নয় সর্তক করে দেওয়ার।
মাশরাফি জানিয়েছেন, ম্যাচটির ভুলগুলো থেকে শিক্ষা নিয়ে তার ব্যাটসম্যানরা কালকের ম্যাচে নামবেন। যেমনটি তারা নেমেছিলেন কাল বোলিং নিয়ে। অনেক ভিডিও ফুটেজ আর রেকর্ড বিশ্লেষণ করে মাশরাফি ঠিক করেছিলেন, বোলিংয়ের শুরুটা তিনি করাবেন আরাফাত সানিকে দিয়ে। আর অন্যপাশ থেকে নাসির। তার আগে ভিলিয়ার্সরা যাতে বড় শট না খেলতে পারেন সেজন্য মিরপুরের চার নম্বর পিচটি ‘স্লো’ করেই তৈরি করা হয়েছিল। মূল পিচের ওপর যেন একপরত মাটি লেপা হয়েছিল!
বাইশ গজের মাঝেই যেন অদৃশ্য এক গতিরোধক গড়ে দেওয়া হয়েছিল। ফলও মিলেছিল তার, প্রথম ওভারেই সানির বল কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে মাশরাফির হাতে ক্যাচ তুলে দেন এ মুহূর্তে টি২০ ক্রিকেটের মূর্তিমান আতঙ্ক এবি ডি ভিলিয়ার্স। গ্যালারি ঠিকমতো বসতে না বসতেই চমক, এরপর ডি ককও একই ভাবে আউট হয়েছিলেন নাসিরের বলে লিটনের হাতে ক্যাচ তুলে। ৬ ওভারে ৩৭ রানে ২ উইকেট! স্পিন চলছিল বেশ। এরপর মুস্তাফিজকে আনতেই সেই বিখ্যাত কাটার, ক্যাচ তুলেছিলেন ফাফ ডু প্লেসিস। কিন্তু মুশফিক তা ধরতে পারেননি। ১৮ রানে থাকা সেই ডু প্লেসিসই এরপর ৭৯ রানে অপরাজিত থেকেছিলেন। বল ব্যাটে ধীরে আসছিল বলে কোনো তাড়াহুড়োও করেননি তিনি। মাঝে মাঝে আলগা বলগুলোকে শুধু বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছিলেন তিনি। ১০ ওভারে যখন ৭০ ওঠে অতিথিদের, তখনও প্রেসবক্সে বসে আলোচনা, পরের দশ ওভারে আরও একশ’ হতেও পারে। কিন্তু সেটা ভুল প্রমাণ করেছিলেন নাসির, সাকিব, মুস্তাফিজ আর সানি। শেষ দিকে দারুণ বোলিং করেছিলেন তারা। শেষ ওভারে হাতে ছয় উইকেট থাকতেও অতিথিরা নিতে পেরেছিলেন মাত্র ৫টি রান। তার মধ্যে আবার মুশফিক একটি স্টাম্পিংও মিস করেছিলেন। যদিও ডুমিনির ক্যাচটি প্রায় মাটি থেকে তুলে নাসির দেখিয়েছিলেন, সবাই ক্যাচ মিস করে না।
ফিল্ডিংয়ের এই ক্ষিপ্রতা, বোলিংয়ের এমন নিপুণ শৈলীর ছিটেও ছিল না ব্যাটিংয়ে। তামিম এসেই যেন ‘তেড়ে মেড়ে ডাণ্ডা…’ শুরু করে দিলেন। কোনো উস্কানি ছিল না বোলারদের পক্ষ থেকে, সামনে রানের এমন বোঝাও ছিল না, তার পরও কেন যে তিনি অ্যাবোটের বল শুরু থেকেই এগিয়ে এসে চালাতে গেলেন। এমনকি লেগের বল আগেরটিতে ওয়াইড পেলেও পরেরটি হাঁকাতে গেলেন। ফল, ৭ রানে ১ উইকেট। সৌম্য এরপর তার পছন্দমতো একটি শট খেলেছিলেন বটে, কিন্তু যে বলটি তিনি পুল করে আউট হলেন সেটার জন্য আগেই লেগ স্কয়ারে ফিল্ডার রেখে দিয়েছিলেন ভিলিয়ার্স। ফাঁদ ধরতে পারেননি সৌম্য।
১৩ রানে ২ উইকেট হারানোর পরও সাকিব আর মুশফিকের ৩৭ রানের জুটিতে ভরসা ছিল ড্রেসিংরুমের। অন্তত ৭ ওভার পর্যন্ত লড়াইয়ে এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার ছিল ২ উইকেটে ৪৫, বাংলাদেশের ২ উইকেটে ৪৮। অবশ্য ইনিংসের ওই সময়টায় বারবার হুমকি দিচ্ছিল আকাশের মেঘ। খবর এসে গিয়েছিল, মতিঝিলের কাছাকাছি প্রচুর বৃষ্টি। ডিএল মেথডে তখন দশ রানের মতো পিছিয়ে ছিল বাংলাদেশ। হয়তো সে তাড়া থেকেই মুশফিক এগিয়ে এসে খেলতে যান ডুমিনিকে। ডিপ মিড উইকেট ক্যাচ উঠে যায়। এরপর সাবি্বর পাঁচ নম্বরে উঠে এসেছিলেন।
কিন্তু যেভাবে তিনি রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে উইকেট দিলেন তাতে হয়তো অনেকেই উইকেটকিপার ডি কককে কৃতিত্ব দেবেন, কারণ বুক দিয়ে তিনি বলটি ঠেকিয়েছিলেন। ততক্ষণে দক্ষিণ আফ্রিকার দুই স্পিনার ফানগিসো আর ডুমিনি জেঁকে বসেছেন। টার্নও পাচ্ছিলেন বেশ। এর মধ্যেই নাসিরের উইকেট চলে যায় ভুল একটি শট খেলে। তার পর থেকেই মূলত হাত গলে বেরিয়ে যায় ম্যাচটি। জীবনের প্রথম আন্তর্জাতিক টি২০ খেলতে নেমে লিটন ২২ রান করেছিলেন বটে; কিন্তু যেভাবে তিনি আউট হলেন সেটার জন্য তার তিন বল আগে থেকেই তিনি প্রস্তুতি নিয়ে রাখছিলেন।
স্লো পিচে যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা দল তাদের ১৪৮ রানের মধ্যে বাউন্ডারি থেকে মাত্র ৬২ রান নিয়েছিল, তা দেখে কি বোঝা যায়নি যে, এই পিচে সিঙ্গেলস আর ডাবলসের মূল্য বেশি। ‘হয়তো আগের সিরিজগুলোতে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করেই ব্যাটসম্যানরা ফল পেয়েছেন। সে কারণেই এদিন এমনটা খেলেছেন। কিন্তু কখনও কখনও ম্যাচের পরিস্থিতি মেনেও ব্যাটিং করতে হয়’- আক্ষেপ নিয়েই বলছিলেন মাশরাফি। তবে হতাশ ছিলেন না তিনি। কারণ এই ব্যাটসম্যানদের নিয়েই পাকিস্তান, ভারতের মতো দলকে একঘাটে জল খাইয়েছেন। তাই এরাই পারবেন দক্ষিণ আফ্রিকাকেও হারাতে। হারা ম্যাচের মাঝেও এ বিশ্বাসটা রয়েছে ক্রিকেটারদের, সমর্থকদেরও।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন