বাংলাদেশ দলে নেতা যখন মাশরাফি
বাংলাদেশ দলে এই মুহূর্তে মুশফিকুর রহিমের সবচেয়ে কাছের মানুষ কে? নবাগত মুস্তাফিজুর রহমানকেই বা কে দিয়ে রেখেছে বটবৃক্ষের ছায়া?
এই দুজনের কথা আলাদা করে জানতে চাওয়ার কারণ আছে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আঙিনায় মুস্তাফিজ একেবারেই নতুন। বুকের ভেতর তাঁর দুরু দুরু কম্পন। অন্যদিকে মুশফিক আছেন দারুণ হতাশায়। আঙুলের ব্যথার কারণে উইকেট কিপিং তো করতে পারছেনই না, ব্যাটিংটাও হচ্ছে না মনের মতো। এমনিতেই ভাবাবেগে তাড়িত থাকেন, এই পরিস্থিতিতে তো তাঁর আরও ভেঙে পড়ার কথা!
আশার ব্যাপার হলো এখন পর্যন্ত সে রকম কিছুই হয়নি। মুস্তাফিজের কাছে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের অচেনা জগৎটাকে মনে হচ্ছে বাড়ির উঠোন। প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার প্রতিজ্ঞায় চোয়ালবদ্ধ মুশফিকুরও। কারণ, এই দুই ক্রিকেটারেরই মাথার ওপর মাশরাফি বিন মুর্তজার ছায়া। অধিনায়ক হিসেবে শুধু নন, কখনো বন্ধু হয়ে, কখনো ভাই হয়ে পাশে থাকছেন তিনি; যেমন থাকেন সব সময়।
মুশফিককে উজ্জীবিত রাখা বা মুস্তাফিজকে সাহস জোগানো আসলে অধিনায়ক মাশরাফির হাজারো কাজের খুব নগণ্য অংশ। হোটেল থেকে টিম বাস, ড্রেসিংরুম হয়ে মাঠ—মাশরাফির অভিভাবকত্ব বন্ধু-ভাইয়ের রূপেই থাকে সব সময়ই। খাদের কিনারায় দাঁড়ানো দলকেও চাঙা করে তোলার অদ্ভুত এক টনিক তাঁর রক্তে। মুখের কথায় থাকে অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলার প্রেরণা। জাতীয় দলের এক সিনিয়র ক্রিকেটারের চোখে অধিনায়ক মাশরাফির সবচেয়ে বড় গুণই হলো এটা, ‘উনি যেকোনো জিনিস আমাদের বিশ্বাস করাতে পারেন, এটাই সবচেয়ে বড় কথা। ড্রেসিংরুমে বা মাঠে যখন মাশরাফি ভাই কিছু বলেন, মনে হয় এটাই সত্যি। উনি যখন বলছেন, আমরা নিশ্চয়ই পারব। বিশ্বকাপ, পাকিস্তান সিরিজ এবং এবারও এ রকম ঘটনা অসংখ্যবার ঘটেছে।’
বিশ্বকাপে ওয়ানডের নেতৃত্বে ফিরে এলেন। এরপর পাকিস্তান সিরিজের পর ভারতের বিপক্ষেও সীমিত ওভারের ক্রিকেটে দলের ভার মাশরাফির কাঁধে। এই সময়ে ভোজবাজির মতো বাংলাদেশ দলের চেহারাটাও পাল্টে গেল। বছরের শেষ দিকে জিম্বাবুয়েকে ঘরের মাঠে হারানো ছাড়া ২০১৪ সালে দলটার সাফল্য বলতে কিছুই ছিল না। অথচ ২০১৫ সালটা দেখুন! মাশরাফির নেতৃত্বে ছুটে চলেছে সাফল্যের রেলগাড়ি। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলার পর পাকিস্তানকে ‘বাংলাওয়াশ’, এক ম্যাচ বাকি থাকতে সিরিজ হেরে এখন ভারতও আছে সেই অপেক্ষায়। বোর্ড সভাপতি থেকে শুরু করে কোচ, খেলোয়াড় সবাই একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন—মাশরাফির ছোঁয়াতেই বদলে যাচ্ছে দল। শুধু বাংলাদেশ কেন, ক্রিকেট বিশ্বও যেন মেনে নিচ্ছে মাশরাফি মানেই অধিনায়কত্বের ‘ব্র্যান্ড নেম।’
তবে শুধু উজ্জীবনী শক্তি দিয়েই মাশরাফি ‘মাশরাফি’ হয়ে ওঠেননি। তিনি তো আর মনোবিদ বা লাইফ সাকসেস কোচ নন, ক্রিকেটার। তাঁর মানসিক শক্তি আসে ক্রিকেটীয় অঙ্ক মিলিয়েই। বেশি আগে ফিরে যাওয়ার দরকার নেই। চলতি ভারত সিরিজের কিছু খণ্ড চিত্রে চোখ রাখলেই সেটা বুঝবেন।
সিরিজে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চমকের নাম মুস্তাফিজ। মাত্র ১৯ বছর বয়সী এই তরুণ যে দলে এসে দুটি ম্যাচও খেলে ফেললেন এবং দুটিতেই নতুন বলে বোলিং শুরু করলেন, সব মাশরাফির সিদ্ধান্তে। মুস্তাফিজের অচেনা বোলিং ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের দ্বিধায় ফেলতে পারে, মূলত এই চিন্তা থেকেই শুরু। ফলাফল চোখের সামনে। এক সপ্তাহ ধরে বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় নাম তো মুস্তাফিজই!
দ্বিতীয় ওয়ানডেতে বোলারদের ব্যবহারে দারুণ দূরদর্শিতা দেখালেন মাশরাফি। ভারতীয় ব্যাটসম্যানরা যেন কোনো বোলারের বলেই অভ্যস্ত না হয়ে যায় সে জন্য বারবার বদলাচ্ছিলেন বোলার। কারণটা সে রাতে ম্যাচ শেষে মাশরাফিই বললেন, ‘আমাদের দলে চারজন পেসার। এ ছাড়া সাকিব, নাসির আছে। এমনকি রুম্মানও (সাব্বির) ছিল। অনেক অপশন থাকায় আমি চেয়েছিলাম তারা যেন কোনো একজন বোলারকে পুরোপুরি পড়ে ফেলতে না পারে।’ তবে মুস্তাফিজ ব্যতিক্রম। এই কারণটাও শুনুন মাশরাফির মুখেই, ‘মুস্তাফিজই একমাত্র বোলার, যাকে ব্যাটিং পাওয়ার প্লের সময় ৫ ওভার বোলিং করিয়েছি। ওকে খেলাটা কঠিন ছিল।
বিরাট কোহলিও তার বলে ঝুঁকি নিয়েছে। আমার বিশ্বাস ছিল ও যে কোনো স্পেলে ভালো করতে পারবে।’
পরশু ভারতের ইনিংসের ৪৪তম ওভার চলার সময় প্রায় দুই ঘণ্টা বৃষ্টিতে খেলা বন্ধ ছিল। ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমে আসে ৪৭ ওভারে। দল যখন আবার মাঠে নামল, ড্রেসিংরুমের সামনে খেলোয়াড়-বৃত্তে দাঁড়িয়ে কিছু একটা বলছিলেন মাশরাফি। কী সেটা? মাশরাফি বলছিলেন, বাকি তিন ওভারের পুরোটাই যেন ভারত ব্যাটিংয়ের সুযোগ না পায়। আক্রমণাত্মক বোলিং আর ফিল্ডিং করে তার আগেই অলআউট করে দিতে হবে। কারণ, পুরো ৪৭ ওভার ব্যাট করলে আরও ১৫-২০টি রান বেশি হয়ে যাবে তাদের। শেষ পর্যন্ত মাশরাফির ইচ্ছাটাই তো পূরণ হয়েছে। ভারত অলআউট ২ ওভার বাকি থাকতেই।
এ রকম আরও অনেক ছোটখাটো জিনিস প্রতি মুহূর্তে বাংলাদেশ দলকে দিচ্ছে নতুন চেহারা, নতুন আত্মবিশ্বাস। ক্রিকেটারদের অভিধান থেকে সেটা মুছে দিচ্ছে ‘চাপ’ শব্দটাই। সিরিজ জিতে যাওয়ার পর গোটা দেশ যখন তাকিয়ে আরেকটি ‘বাংলাওয়াশে’র দিকে, মাশরাফি তখনো বলছেন, ‘কোনো চাপ নেই।’ তিনি দিলেন উপভোগের মন্ত্র, ‘সিরিজ শুরুর আগে তো কেউ এটাও ভাবেনি যে দুই ম্যাচ শেষে আমরা ২-০ ব্যবধানে এগিয়ে থাকব। সুতরাং আমাদের ওপর কোনো চাপ নেই। আমরা এখন শুধু মাঠে এসে খেলাটা উপভোগ করব।’
ভয়-আতঙ্ক, লজ্জা-অপমান কাটিয়ে ক্রিকেটটা যে উপভোগও করা যায়, বাংলাদেশকে বুঝি সেটা মাশরাফিই শেখালেন!
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন