বাঙালির কামচর্চা: একটি নিরলস নাভির সন্ধান
এ নাভি সেই নাভি। অধোবাসকে সরে জায়গা করে দিতে হয় তাকে। সে প্রকাশ্য। কারণ, সে-ই ঘোষণা করে সৃষ্টির সম্ভাবনা। এহেন নাভিকে কোন আক্কেলে জিনস বা সালোয়ার এসে ঢেকে দেয়!
ভারতীয় ইরোটিকা নিয়ে ছ্যাবলামি মারা তেমন সোজা নয়। কালিদাস রয়েছেন, ভবভূতি রয়েছেন, এমনকী নয় নয় করে বাঙালি ভারতচন্দ্রও রয়েছেন। দক্ষিণ ভারতে মাথালো মাথালো সব কবি রয়েছেন রাজা হাল-এর মতো। একদলা ‘গাথাসপ্তশতি’ ঠুকে দিলে বোলচাল এক্কেবারে বন্ধ হয়ে যাবে।
ইদানীংয়ের সেক্সুয়ালিটি দিয়ে যে প্রাচীন বা মধ্যযুগীয় প্রাচ্যের কামসন্দর্ভকে বোঝা যাবে না, সে কথা মিশেল ফুকো সাহেব পইপই করে বলে গিয়েছেন। তবু চোরা না শোনে ধরমকাহিনি।
কতগুলো শিটিঙ্গে শিটিঙ্গে বলিউডি নায়িকাকে সামনে রেখে আর যা-ই হোক কামচর্চা হয় না, এ কথা রসিকজন জানেন। কিন্তু তেমন লোকের সংখ্যা বাংলায় নেহাতই সামান্য।
ভারতের অন্যত্র জ্ঞানী ব্যক্তি থাকতেই পারেন। কিন্তু বাংলা যে অনেক দিনই সে লাইনে ল্যাকিং, তা নিশ্চয় আবার করে বলে দিতে হবে না।
কথা হচ্ছিল নাভিদেশ নিয়ে। সাহেবদের দিয়ে বিচার করলে চলবে না। যারা মরপৃথিবীর একমাত্র অবিনশ্বর বস্তুটিকে ‘বেলিবাটন’ বলে ডাকে, তাদের ইরোস-এর দৌড় কতটা বোঝা যায়। ভারতীয় উপমহাদেশে নাভির অবস্থান নিয়ে দু’চার কথা বলতে গেলেই মনে প্রথমে ঝাঁক মারে, সাম্প্রতিক প্রজন্ম কি বুঝবেন ব্যাপারটা?
গত ৩০-৩৫ বছরে বাঙালির ফ্যাশন যত বেশি বাহুমূলকে গুরুত্ব দিয়েছে, নাভিকে ততটা নয়। অথচ ভারতীয় ঐতিহ্য তেমন ‘বগলসই’ কোনও দিনই ছিল না। এইখানেই সাহেব-সংস্কৃতি আমাদের ঘাড়ে চেপে বসেছে। শাড়ি থেকে সালোয়ার-জিনস-স্কার্ট-আদিতে গমন সেই যে নাভিদ্বার রুদ্ধ করেছে, তার পরে থেকে শত সাধাসাধিতেও তা খোলেনি। এ এক প্যারাডাইস লস্ট। এ এক নির্মম নির্বাসন।
আদি শঙ্করাচার্য খুব ভেবেচিন্তেই তাঁর কাব্য নারীর বক্ষদেশ এবং নাভির দিকে তাকাতে বারণ করেছিলেন পুরুষদের। বক্ষদেশ বুঝলুম। কিন্তু হঠাৎ নাভি কেন? ‘মোহমুদ্গর’-এর লেখক তাঁর সাধনা আর প্রজ্ঞা দিয়েই জানতেন, মানবীশরীরে নাভি এমন এক আইটেম, যার সঙ্গে যুক্ত রয়েছে ইটারনিটি। এই ব্যাপারটা পুং-শরীরে তেমন খোলতাই নয়।
কারণ, নারীর নাভি এক দাত্রী-সম্ভাবনায় উজ্জ্বল। পুরুষের গ্রহিতা নাভি সেই স্ত্রী-নাভির সামলে তুশ্চু। জন্মসূত্রের অভিজ্ঞান-চিহ্নের কাছে হাঁটু দুমড়ে বসতে হয় তাকে। সঙ্গমের আগে নাভিতে তর্জনি স্পর্শ করে উচ্চারণ করতে হয়— ‘প্রসীদ জগজ্জননী’। আমাকে জন্ম থেকে জন্মান্তরে নিয়ে যাও।
বইয়ে নিয়ে যাও ঊরসকে। বহমান রাখো পরম্পরা।
এ নাভি সেই নাভি। অধোবাসকে সরে জায়গা করে দিতে হয় তাকে। সে প্রকাশ্য। কারণ, সে-ই ঘোষণা করে সৃষ্টির সম্ভাবনা। এহেন নাভিকে কোন আক্কেলে জিনস বা সালোয়ার এসে ঢেকে দেয়! এ ব্যাপারে দক্ষিণ ভারতীয়রা এক্কেবারে কনজারভেটিভ। নায়িকার নাভি উন্মুক্ত না-হলে সে নায়িকাই নয়।
ঈষৎ মেদযুক্ত কটিরেখা, মোম-উচ্ছ্বল উদর আর তাতে রত্নসদৃশ নাভি। যেন মহাজগতের কেন্দ্রদেশ। যেন এই সেই কোয়ার্কবিন্দু, যেখান থেকে জন্ম নেবে রাকাশশী, সপ্তর্ষি মণ্ডল, কোয়াসার, ব্ল্যাক হোল।
সেই নাভি একবার প্রদর্শিত হলে চিদাকাশে যে বিক্ষেপ দেখা দেয়, তা মরুঝঞ্ঝা, সুনামি, সৌরঝড় ইত্যাদির সংশ্লেষ।
বাঙালির জীবনে একদা এই সব ছিল। সে দিন খুব বেশি দূর অতীতের নয়। এই তো বছর তিরিশেক আগেও নুপূরদি রিকশ থেকে নামতেন, শাড়ি উপচে দেখা দিত নাভি। সে যেন মেঘের আড়াল থেকে পূর্ণচন্দ্রের প্রকাশ।
সেই চৌদভি কি চাঁদের দেড় ইঞ্চি নীচে শাড়ির কুঁচি। তার বাঁ-দিক ঘেঁষে প্রলম্বিত রয়েছে চাবির রিং। তার আওয়াজ হয়তো জাগতিকভাবে কানে আসে না। কিন্তু সে ফিরে আসে স্বপ্নে-জাগরণে।
তাকেই তো ‘নাভিশব্দ’ বলে জানত মফস্সল শহরের যুবাকুল। তার পরে কেটে গিয়েছে দিন। কিন্তু সেই অপার্থিব সৌন্দর্যকে ভুলতে পারেনি গণস্মৃতি। নুপূরদির পাশটিতে কথন বসে গিয়েছেন উন্মুক্তনাভি শ্রীদেবী, দক্ষিণ থেকে বলিউডে উড়ে আসা রম্ভা, কখন যেন সমস্ত স্মৃতিকে ডমিনেট করেছেন ‘উৎসব’ ছবির বসন্তসেনা রেখা। কোথায় আজকের ‘বেলিবাটন’-ঋদ্ধার দল! তুশ্চু তুশ্চু!!
ভারতীয়রা মনে রাখুন, যোনির আর এক নাম— ‘নিম্মনাভি’। মনে রাখুন, দেহভাণ্ড যদি মহাবিশ্বের প্রতিরূপ হয়ে থাকে, নাভি তার নেমিদেশের ভরকেন্দ্র। জিনস বা সালোয়ারে, স্কার্ট বা হটপ্যান্টে ঢেকে রাখা যায় না। ঢেকে রাখা সিম্পলি সম্ভব নয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন

হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন