বাঙালির ছোঁক ছোঁক
যৌবনে তাকে ডিশিসন নিতে হয়েছে সে কোন মার্গে যাবে। ক্যাশ না কাইন্ড? নারী না সুরা? ঠিক করতে করতে যৌবন শেষ হয়ে যায়, যৌবনবেদনা যায় না।
বাঙালি আর বোলতার মধ্যে একটা মৌলিক মিল ছেলেবেলা থেকে ভেবে এসেছি। বোলতা-সুলভ হুলবাজি বাঙালি ক্যারি করতে পারে না বটে, কিন্তু বোলতা-প্যাটার্নের ছোঁকছোঁকানি বাঙালির জিনগত বৈশিষ্ট্য। কার্যত, বাল্যকাল থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত বাঙলি একটা কাজই নিষ্ঠার সঙ্গে করে থাকে, সেটা বিশুদ্ধ ছোঁক ছোঁক। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এর নেচার ও টার্গেট বদলায় ঠিকই, বেসিক জায়গাটা একই রকম থেকে যায়। সেদিক থেকে দেখলে হুলো বেড়াল-কাটিং একটা ব্যাপার এর মধ্যে খুঁজে পেতেই পারেন, তবে সেটা আংশিক। হুলোর গ্ল্যামার বাঙালির কোনও দিনই ছিল না। গজাবে বলেও মনে হয়ে না।
ছোঁক ছোঁকের ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যেতে পারে, মঙ্গলকাব্যের কাল থেকেই মনে হয় এই বৃত্তির শুরু। তার পরে ক্রমাগত সমৃদ্ধ হয়েছে ছোঁক ছোঁক। বাল্যে খাদ্য ও উঞ্ছচিন্তা, কৈশোরে নিষিদ্ধ বিষয়, গোটা যৌবন ব্যেপি নারী-সুরা-ধান্দাবাজি, বার্ধক্যে কী নয় নিয়ে ছোঁক ছোঁকের বিরাট ভুবন। ছোঁক ছোঁক কখনও ঘরে, কখনও বাইরে, কখনও ঘর ও বাহিরের মধ্যবর্তী অনির্দেশ্য জায়গায় কিটকিট করে বয়েই চলেছে। তাকে থামানোর সাধ্যি কার! বাল্যে বাঙালির ননীচোরা স্বভাব একটু বিস্তৃতই থাকে। সেই ‘ভোম্বল সর্দার’-এর কাল আর নেই। পরের বাগানে আমটা-কুলটা-নোনাটা-আতাটার সন্ধানে দাপানো দুপুর সর্ব অর্যেই ছিল ছোঁক ছোঁকের। আর সেই রোদ-জ্বলা দুপুরেই যে রুবি রায়-মার্কা একটা ছমছম গজিয়ে উঠেছিল, তা নিয়েও কোনও সন্দেহ নেই। সেই সময় থেকেই বোলতাবৃত্তি বাঙালির মজ্জাগত হতে শুরু করে। কোনদিকে তার ছোঁক ছোঁক ধাবিত হবে, তা অবশ্য বাল্যে-কৈশোরে নির্ধারিত হয়নি। হতে সময় লেগেছে। যৌবনে তাকে ডিশিসন নিতে হয়েছে সে কোন মার্গে যাবে। ক্যাশ না কাইন্ড? নারী না সুরা? ঠিক করতে করতে যৌবন শেষ হয়ে যায়, যৌবনবেদনা যায় না।
ভরদুপুরের পাড়ার বৌদি থেকে রাতদুপুরের রিসর্ট-পরি পর্যন্ত বিস্তৃত ছোঁক ছোঁক পেরিয়ে বাঙালি প্রবেশ করতেই পারে এক নৈরাত্মবাদী ছোঁক ছোঁকের ছকে। অফিসে প্রমোশনের জন্য ছোঁক ছোঁক, বসের পিছনে চুকলির জন্য ছোঁক ছোঁক, পাসের টেবিলের নতুন জয়েন করা চিঙ্কিরানির জন্য ছোঁক ছোঁক। অফিস ছুটির পরে লোকাল ট্রেনের জানলা-সিটের জন্য ছোঁক ছোঁক, সিট না পেলে মহিলাদের পিছনে দাঁড়াবার জন্য ছোঁক ছোঁক। ট্রেন থেকে নেম চায়ের দোকানের আড্ডায় একে তাকে মুরগি করার জন্য ছোঁক ছোঁক, বাড়ি ফিরে বৌয়ের পিছনে ছোঁক ছোঁক, যাতে সাংসারিক তাপ এড়ানো যায়…। এভাবেই দিন-টিন কাটে। আবার এভাবে দিন-টিন কাটেও না। কোথাও শুনাপন ছেয়ে থাকে। মনে হয়, ছোঁক ছোঁকে কোথাও ফাঁক রয়ে গেল। পারফেক্ট হল না। তখন শুরু হয় ছোঁক ছোঁকের পিছনে ছোঁক ছোঁক। সেই বিশুদ্ধ ব্যাপার। বাঙালি ছাড়া কেউ বুঝবে না সেই মনের ব্যথা।
কিন্তু এত ছোঁক ছোঁকে কী লাভ হল? এইখানেই গোল। ছোঁক ছোঁক কি ধান্দাবাজি, যে লাভালাভ ভেবে তা করতে হয়? এ এক বিশুদ্ধ বৃত্তি। আর্ট ফর আর্টস সেক। আন্ডারমাইন করলে চলবে না। হুঁ হুঁ বাওয়া। এখানেই মোক্ষ, এখানেই সিদ্ধি। বাঙালির কিছু হল না বলে যাঁরা আক্ষেপবাজি করেন, তাঁরা একটু ভেবে দেখবেন ব্যাপারটা। বাঙলি ঠিক ধান্দাবাজ নয়, তলা দিয়ে গলে গিয়ে কাজ হাসিল করার তাগিদ বা উদ্দেশ্য তার নেই। সে সাধক। সে জানে বোলতার মতো বেঁচে থাকাটা জরুরি। বোলতা, মধু আছে কি নেই না-ভেবেই একেকটা জায়গায় ভোঁ ভোঁ করে চক্কর কাটে। কাটতেই থাকে। এটাকে ‘সন্ধানের সুখ’ বললে অন্যায় হবে না। আর এটাই ছোঁক ছোঁকের প্রধান ফিলোজফি। বাংলার বাইরে এর অর্থ কেউ বুঝবে বলে মনে হয় না। আর বোঝাতেও বাঙালি মোটেই আগ্রহী নয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন