“বাবা আমার সুখ”
রাগ করেই ঘর থেকে ভের হয়ে গেলাম। এতটাই রেগেছিলাম যে বাবার জুতাটাই পড়ে বেরিয়ে এসেছি। মনে মনে খুব বকছি বাইক যদি কিনে দিতে না পারে তবে ছেলেকে ইন্জিনিয়ার বানাবার এত সখ কেন? হাটার মধ্যেই হঠাৎ মনে হল পায়ে খুব লাগছে। জুতাটা খুলে দেখি একটি পিন উঠে আছে, পায়ে লেগে পা দিয়ে একটু রক্তও ভের হচ্ছে। তাও অবিরত হাটতে থাকলাম। কতক্ষন হাটার পরে আমার দুটি পা ভিজে ভিজে লাগল। রাস্তায় একটু খেয়াল করে তাকিয়ে দেখি পুরো রাস্তাটিতেই জল। পা তুলে দেখি জুতার নিচে পুরোটা রাস্তার মতই নষ্ট হয়ে গেছে। অবশেষে বাস টার্মিনালে এসে দেখি ১ ঘন্টা পর বাস যাবে। অগত্য বসে মনে মনে বাবাকে গালালাগ করছি।
.
হঠাৎ বাবার মানিব্যাগটার কথা মনে পড়ল, যেটা ভের হবার সময় আমার সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলাম। বাবা এটাতে কাউকে হাত দিতে দেয়না,এমন কি আমার মাকেও না। এখন দেখি কতো জমিয়েছে! খুলে দেখি একটি টাকাও নেই শুধু তিনটি কাগজের টুকরো। কাগজের টুকরো গুলো খুলে দেখতে লাগলাম। ১ম টাতে লেখা ল্যাপটপের জন্য ৪০০০০ টাকা লোন। কিন্তু আমার তো ল্যাপটপ আছে পুরোনো বটে। ২য় টা একটি ডাক্তারের প্রেস্কিপশন লেখা নতুন জুতা ব্যবহার করবেন। নতুন জুতা!! মা যখনই বাবাকে নতুন জুতার কথা বলত বাবা উত্তরে বলত আরে এটা আরও ছয়মাস চলবে। তাড়াতাড়ি করে শেষ কাগজটা খুললাম। লেখা স্কুটার বদলে নতুন বাইক নিন। স্কুটার তো আমার বাবার সেই পুরোনো বাইকটা, যেটা দিয়ে বাবা রোজ অফিসে যায়। বুঝতেই বাড়ির দিকে এক দৌড় দিলাম। এখন আর জুতা পায়ে লাগছে না। বাড়ি গিয়ে দেখলাম বাড়িতে বাবা নেই। বুঝতে দেড়ি হল না বাবা কোথাই আছে।
.
আবার দৌড়ে সেই শোরুমটায় গেলাম। যেখানে বাবা রেজ একবার যায়। দেখলাম বাবার স্কুটার নিয়ে বাবা দাড়িয়ে আছে। আমি দূর থেকে ছোটে গিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম। কাঁদতে কাঁদতে বাবার কাদটা ভিজিয়ে ফেললাম, বললাম বাবা আমি বাইক চাইনা। তুমি তোমার নতুন জুতা আগে কিন। আমি ইন্জিনিয়ার হবই তবে তোমার মত করে। মাও কেঁদতে শুরু করল। মা হল এমন একটা ব্যাংক যেখানে আমরা আমাদের সকল কষ্ট, রাগ, অভিমান জমা রাখতে পারি। আর বাবা হল এমন একটা ক্রেডিট কার্ড যেটা দিয়ে আমরা পৃথিবীর সমস্ত সুখ কিনতে পারি, যা কখনো ফুরাবার মত নয়।
লেখকঃ মো: শামমীম শিকদার
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আহা চিকুনগুনিয়া !
ঈদের দিন ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে মেঝেতে পা দিয়ে আমিবিস্তারিত পড়ুন
‘দৃষ্টিশক্তি থাকা, কিন্তু জীবনে লক্ষ্য না থাকা অন্ধত্বের চেয়েও খারাপ’
চক্ষু, কর্ন, জিহবা, নাসিকা, ত্বক – মানুষের এই পাঁচটি ইন্দ্রিয়েরবিস্তারিত পড়ুন
ধর্ষিতা মেয়েটির গল্প
পারিনি সেদিন নিজেকে শোষকদের হাত থেকে রক্ষা করতে, পারিনি সেদিনবিস্তারিত পড়ুন