বাবা-মায়ের বিচ্ছেদে সন্তানের অধিকার
মুনিয়ার (ছদ্মনাম) বয়স এখন ১৪। যখন সে একটু একটু করে বুঝতে পারে, তখন থেকেই দেখে আসছে, তার বাবা-মায়ের মধ্যে খুব একটা মিল নেই। দুজনে একই ছাদের নিচে থাকলেও তাদের মধ্যে কথা হয় না, একসঙ্গে খেতে বসে না, যে যার মতো থাকে। বাবা একভাবে চললে মা যেন তার ঠিক উল্টো। বাবা-মায়ের মধ্যে প্রায়ই ছোটখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া লেগে থাকে। একদিন খাবার টেবিলে মুনিয়াকে তার মা জানায়, সে আলাদা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এমনকি তাদের তালাকও হতে পারে। শুনে মুনিয়ার পৃথিবীটা যেন শূন্য অনুভব হতে লাগল। কী করবে সে, তার আইনগত অধিকার কী হবে, সে থাকবে কার কাছে—কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। আইন কি তার জন্য কোনো সুবিধা রেখেছে? তার ভবিষ্যৎ নির্ধারণে এখনই তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার কি কোনো সুযোগ রয়েছে? মুনিয়ার খুব একটা বুঝে ওঠার কথা নয় এ বয়সে, তবু সে যেন তার অধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়।
মুনিয়ার মতো অনেক সন্তানই আমাদের সমাজে রয়েছে, যাদের ভেঙে যাওয়া পরিবারে বাস করতে হচ্ছে। কিন্তু অপ্রাপ্তবয়স্ক হওয়ায় এ পরিবারে থেকেও তার আইনগত অধিকার নিয়ে সে ততটা বুঝে উঠতে পারে না। কিছু ক্ষেত্রে বাবা-মায়ের অবহেলার কারণে সন্তানটি তার ভবিষ্যৎ নিয়েও হয়ে পড়ে শঙ্কিত। কিন্তু আইনে কি সুযোগ আছে এ অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানটির তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার?
এর উত্তরে বলা যায়, আইনে সরাসরি একজন অপ্রাপ্তবয়স্ক বা নাবালক সন্তানের আইনগত প্রতিকার পাওয়ার সুযোগ না থাকলেও বিশেষ ব্যবস্থায় প্রতিকার করতে পারে। বিশেষ করে বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ বা তালাক হয়ে যাওয়ার পর একজন সন্তান কার কাছে থাকবে—এ প্রশ্ন যদি আদালত পর্যন্ত গড়ায়, তাহলে আদালত অনেকাংশেই সন্তানের কল্যাণের দিকটি বিবেচনা করে থাকেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে সন্তানের যদি একটু বোঝার মতো বয়স হয়, তখন পারিবারিক আদালতের বিচারক সন্তানের মতামতও জানতে চান যে সে কার কাছে থাকতে চায়। তখন সন্তান তার মতামত দিতে পারে এবং আদালত তার মতের গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করেন। অনেক ক্ষেত্রে বাবা-মা যদি নির্দিষ্ট সময় পরপর সন্তানের সঙ্গে দেখা করতে চায়, আদালত সে অনুমতিও দিয়ে থাকেন।
পারিবারিক আদালতে আপস মীমাংসার সুযোগ আছে। আদালত এই আপস মীমাংসার সময় সন্তানের কল্যাণের দিকটিও বিবেচনায় এনে বাবা-মায়ের মধ্যে মীমাংসার চেষ্টা করে থাকেন। অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানের নামে কোনো সম্পত্তি থাকলে সে সন্তানটি প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর অবশ্যই তাকে হস্তান্তর করতে হবে। নাবালকের নামে কোনো সম্পত্তি থাকলে তা ইচ্ছে করলে বিক্রি করে দেওয়া যাবে না। সন্তান সাবালক হওয়ার পর সন্তানের অধিকার রয়েছে আইনি প্রতিকার চাওয়ার। সন্তানের ভরণপোষণ অবশ্যই তার বাবাকে বহন করতে হবে। সন্তান কার কাছে থাকবে, এ ক্ষেত্রে তা বিবেচ্য হবে না। বাবা-মা আলাদা বসবাস করুক বা আইনগত বিচ্ছেদ ঘটুক না কেন, সন্তানের ভরণপোষণ পাওয়া সন্তানের অধিকার। এ জন্য সন্তান নিজে মামলা করতে না পারলেও সন্তানের জন্য তার মা ভরণপোষণ চেয়ে পারিবারিক আদালতে আশ্রয় নিতে পারে।
বাবা-মাকে যা মানতে হবে
বাবা-মায়ের মধ্যে বনিবনা না হলে, কোনো কারণে ঝগড়া-বিবাদ হলে এর প্রভাব যেন নাবালক সন্তানের ওপর না পড়ে, এ দিকে সচেষ্ট হওয়া উচিত। বিশেষ করে সন্তানটির ভবিষ্যৎ নির্মাণে যেসব অধিকার তার রয়েছে, তা নিশ্চিত করতে হবে। সন্তান নাবালক মানে হচ্ছে বাবা-মাকেই তার সব দায়দায়িত্ব ও অধিকার দিতে হবে।
আইনত বাবা-মা তা করতেও বাধ্য। আর যদি কোনো কারণে আলাদা থাকতে হয় বা বিচ্ছেদ ঘটাতে হয়, তাহলে সন্তানের আদালতে সন্তানটি বারবার গেলে এতে ওর মনে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
হোটেল ঘরে বিছানার চাদর সাদা হয় কেন ?
বেড়াতে গিয়ে হোটেলের ঘরে ঢুকে প্রথম যে বিষয়টি নজরে আসে,বিস্তারিত পড়ুন
ধনিয়া পাতার উপকারি গুণ
চিকিৎসকদের মতে, ধনে বা ধনিয়া একটি ভেষজ উদ্ভিদ যার অনেকবিস্তারিত পড়ুন