বাসস্টপেই প্রসব, তোয়ালে এনে আব্রু রক্ষায় মহিলা পুলিশকর্মী
ভরা রাস্তায় এক মায়ের আব্রু রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা করলেন তিনি। অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠিয়ে নবজাতককে বাঁচালেনও তিনি। তিনি ছবিলা খাতুন। পেশায় পুলিশ কনস্টেবল। শুক্রবার ভর দুপুরে যিনি ফিরিয়ে আনলেন অভিধান থেকে প্রায় হারিয়ে যেতে বসা একটা শব্দ—মনুষ্যত্ব!
দুপুর তখন পৌনে ১টা। বীরভূমের মহম্মদবাজার থানার কাঁইজুলি বাসস্টপে স্থানীয় লোকজনের কাছে পাগলের মতো পুরনো শাড়ি চেয়ে বেড়াচ্ছেন এক মাঝবয়সী মহিলা। আর সমানে কেঁদে চলেছেন। কিন্তু, কেউ-ই সাহায্যের হাত বাড়াচ্ছেন না। সে সময়েই থানার কাজে সিউড়ি যাওয়ার জন্য ওই বাসস্টপে আসেন মহম্মদবাজার থানার মহিলা পুলিশকর্মী ছবিলা খাতুন। মাঝবয়সী মহিলার কান্না দেখে ছবিলা এগিয়ে যান। মহিলা জানান, তাঁর মেয়ে প্রসব যন্ত্রণায় ছটফট করছেন। আব্রু বাঁচাতে একটা শাড়ি-কাপড়ের খুব দরকার। ছবিলা প্রথমেই খবর দেন অ্যাম্বুল্যান্সে।
সামনের দোকান থেকে নিয়ে আসেন একটা তোয়ালে। অ্যাম্বুল্যান্স পৌঁছনোর আগে রাস্তাতেই তরুণীর প্রসব হয়ে যায়। নিজের আনা তোয়ালে দিয়েই সদ্যোজাত শিশুপুত্রটিকে ধরে নেন ছবিলা। তত ক্ষণে হাজির অ্যাম্বুল্যান্স। ছবিলা প্রসূতিকে অ্যাম্বুল্যান্সে তুলে বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে স্থানীয় পটেলনগর ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যান। সেখানে মা-ছেলেকে ভর্তি ও চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেন। তার পর সেখান থেকে রওনা দেন সিউড়ি।
যে মহিলা শাড়ি খুঁজে বেড়াচ্ছিলেন, তাঁর নাম রেহেনা বিবি। বাড়ি মহম্মদবাজার থানার রাউতোড়া গ্রামে। বাপের বাড়িতেই ঘোরতর অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন তাঁর আসন্নপ্রসবা মেয়ে শামিনা বিবি। বাড়ির পুরুষেরা তখন সবাই বাইরে। ওই অবস্থায় তিনিই কোনও রকমে শামিনাকে নিয়ে বাসে চেপে যাচ্ছিলেন সিউড়ি সদর হাসপাতালে। বাসেই প্রসব যন্ত্রণা শুরু হয় মেয়ের। বাসকর্মীরা তাঁদের মহম্মদবাজারে নামিয়ে স্থানীয় ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যাওয়ার পরামর্শ দেন। কিন্তু, ওই বাসস্টপেই প্রসব হয়ে যায়।
গ্রামবাংলায় পথে প্রসবের ঘটনা নতুন নয়। কিন্তু, সাহায্য চেয়েও কারও এগিয়ে না আসাটা বিস্মিত করেছে ছবিলা খাতুনকে। তাঁর কথায়, ‘‘আমি অবাক হয়ে গেলাম, এত লোকজন! কিন্তু কেউ এগিয়ে এলেন না। বিশেষ করে কোনও মহিলার সম্ভ্রম বাঁচাতে কারও এগিয়ে না আসাটা যেমন লজ্জার, তেমনই বেদনার। পুলিশকর্মী বলে নয়। কোনও অভিধানে লেখা নেই, মানুষের বিপদে পুলিশকেই এগিয়ে যেতে হবে। এক জন সাধারণ সামাজিক মানুষ হিসেবেই আমি দায়িত্ব পালন করেছি।’’
ক’দিন আগেই প্রাথমিকের টেট পরীক্ষার সময়ে এক পরীক্ষার্থীর মাস চারেকের শিশুকে স্তন্যদান করে সুস্থ করেন এই ছবিলা। সে দিনের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘শিশুটির মা পরীক্ষা দিচ্ছিলেন। শিশুটি তার বাবার কোলে কাঁদছিল। কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থই হয়ে পড়ে। ওই স্কুলেই আমার ডিউটি ছিল। আমার নিজেরও বছরখানেকের বাচ্চা আছে। তাই ওই শিশুর কান্না দেখে আমি থাকতে পারিনি। তাকে কোলে নিয়ে দুধ খাইয়ে চুপ করাই। পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত শিশুটি আমার কাছেই ছিল।’’ স্থানীয় সিপিএম বিধায়ক ধীরেন বাগদি থেকে মহম্মদবাজার ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তাপস সিংহ, প্রত্যেকেই বলছেন, ‘‘প্রতিটি মানুষের ও পুলিশকর্মীর কাছে ছবিলা খাতুন এক নজির। আমাদের সকলেরই তাঁর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করা উচিত।’’ ছবিলাকে পুরস্কৃত করা হবে বলে জানান জেলার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমারও।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন