বাড়িতে থেকেও পুলিশের খাতায় তারা ‘নিখোঁজ’
নাটোরে নিজ বাড়িতে থেকেও পুলিশের খাতায় ‘নিখোঁজ’ রয়েছেন পাচঁজন। হাফেজ আবদুল বারিক সেলিম, সাইদুর রহমান প্রাং, আলী আল মাসুদ মিলন,শরিফুল ইসলাম ও আবদুল খালেক। এদের মধ্যে মসজিদের ইমাম, সমাজসেবক ও আইনজীবীও রয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাফেজ আবদুল বারিক সেলিম নলডাঙ্গা থানার পশ্চিম সোনাপাতিল গ্রামের আলহাজ্ব তছির উদ্দিন মোল্লার ছেলে অনার্স চতুর্থ বর্ষ ফলপ্রার্থী। তিনি স্থানীয় ঘেড়িয়া মসজিদের পেশ ইমাম। পুরো রোজায় এই মসজিদে পড়িয়েছেন তারাবির নামাজ। থানায় তার নামে নেই কোনো মামলা। এমনকি একটি জিডিও নেই তার নামে। নিয়মিত বাড়িতেই বসবাস করেন তারপরও নাটোরের পুলিশের খাতায় তিনি নিখোঁজ।
একই এলাকার ব্রহ্মপুর গ্রামের সাইদুর রহমান প্রাং। তিনি ব্রহ্মপুর বাজার ও হাট কমিটির সাধারণ সম্পাদক, ব্রহ্মপুর হাফেজী মাদরাসা ও এতিম খানা পরিচালানা কমিটির সদস্য, ব্রহ্মপুর বাজার মসজিদ কমিটির সাধারন সম্পাদক এবং নিজ গ্রামের সমাজের ও ব্রহ্মপুর সরকার পাড়া জামে মসজিদের ক্যাশিয়ার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সমাজসেবার কারণে এলাকায় তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। সর্বদা নিজের বাড়িতেই থাকেন। তার নামেও দেশের কোন থানায় নেই কোন মামলা। এমনকি একটি জিডিও নেই অথচ এই সমাজসেবক সাইদুর রহমান প্রাং নাটোরের পুলিশের খাতায় একজন নিখোঁজ ব্যক্তি।
একই থানার বুড়িরভাগ গ্রামের নজরুল ইসলামের ছেলে আলী আল মাসুদ মিলন নাটোর জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি। গত মাসে নিজবাড়িতে ঘটা করে বিয়ে করেছেন। জুনিয়র আইনজীবী হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করেছেন নাটোর জজ কোর্টে। রাজনৈতিক কারণে কয়েকটি মামলা থাকলেও সবগুলোতে জামিনে আছেন তিনি।
সেনভাগ এলাকার মোঃ শরিফুল ইসলাম ঢাকায় চাকরি করেন। মাঝে মধ্যেই বাড়িতে আসেন। তার নামে থানায় কোন জিডি বা মামলা নেই। তাকেও পলাতাক দেখানো হয়েছে। একই এলাকার মোঃ আবদুল খালেক নিজ বাড়িতেই থাকেন অথচ তাকেও পুলিশ পলাতক দেখাচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছেন, এদের পাঁচজনের পরিবারের কেউ সন্তান নিখোঁজের জন্য থানায় জিডি করতেও যায়নি। বা কোন অভিযোগও করেনি। তারা যার যার পরিবারের সাথেই বসবাস করছেন।
ঘটনার পর থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীরা তাদের বাড়ি যাচ্ছেন পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাৎকার নিতে। তবে মিলনের বাবা নজরুল ইসলাম ও সাইদুর রহমানসহ তাদের পরিবারের লোকজন মনে করেন তাদের মানক্ষুণ্ণ করতেই কেউ পুলিশের নিখোঁজের তালিকায় তাদের নাম দিয়ে দিয়েছে।
প্রতিকার পেতে তারা নাটোর শহরে এসে প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সাথে দেখা করে লিখিতভাবে জানিয়ে গেছেন।
হাফেজ আবদুল বারিক সেলিমের বাবা তছির উদ্দিন মোল্লা জানান, তার ছেলে নিজ বাড়ি থেকে নাটোর এনএস সরকারি কলেজে গত ১০ এপ্রিল থেকে ৬জুন পর্যন্ত অনার্স চতুর্থ বর্ষ পরীক্ষাও দিয়েছে। ওইদিন রাত থেকে পুরো রোজায় স্থানীয় মসজিদে তারাবির নামাজে ইমামতিও করেছেন। এখনও তিনি বাড়িতেই আছেন।তারপরেও কেনো নিখোঁজ এ প্রশ্নের উত্তর তার জানা নেই।
নলডাঙ্গা পৌরসভার এক নম্বর প্যানেল মেয়র ও সাত নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ জামাল উদ্দিন বলেন, আলী আল মাসুদ মিলনকে নিয়মিত বাড়িতে অবস্থান করতেই দেখি। পুলিশ কিভাবে তার নাম নিখোঁজের তালিকায় দিলো এটা বোধগম্য নয়।
এ ব্যাপারে নাটোরের পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার মুখার্জী জানান, পুলিশের তৈরি করা নাটোর জেলার প্রথম তালিকায় ৪৪ জনের মধ্যে নাটোরে জিডিভূক্ত ২৮ জন এবং জিডি ছাড়া নিখোঁজ সন্দেহের তালিকায় ছিল ১৬ জন।
পুলিশের তৎপরতায় ইতিমধ্যেই নিখোঁজ সন্দেহের তালিকার অনেকেই তাদের বাড়ি ফিরে জনসম্মুখে উপস্থিত হতে শুরু করেছেন।
এখন জেলার সংশোধিত চূড়ান্ত তালিকা অনুযায়ী জিডিভূক্ত এবং জিডি বহির্ভূত নিখোঁজ মোট ১৯ জন ইতিমধ্যেই বাড়ি ফিরে এসেছেন।
পুলিশ সুপার জানান, নিখোঁজ ব্যক্তিদের মধ্যে চারজনকে নিয়ে সন্দেহ থাকায় তাদের ব্যাপারে অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ চলছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নাটোরে পুকুরে ডুবে ৪ শিশুর মৃত্যু
জেলার গুরুদাসপুরে পুকুরের পানিতে ডুবে দুই পরিবারের চার শিশুর মৃত্যুবিস্তারিত পড়ুন
নাটোরে বিয়ের ঘটকালী করতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার নারী
নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলায় বিয়ের ঘটকালী করতে গিয়ে এক নারী ঘটকবিস্তারিত পড়ুন
নাটোরে প্রতিবন্ধীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ
আজ সোমবার নাটোরের লালপুর উপজেলা প্রশাসন ও উপজেলা সমাজ সেবাবিস্তারিত পড়ুন