বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গৃহবধূকে রাতভর গণধর্ষণ
লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় এক গৃহবধূকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে রাতভর গণধর্ষণের পর রেললাইনের পাশে অচেতন অবস্থায় ফেলে যায় কয়েকজন লম্পট। বৃহস্পতিবার রাতে এ ঘটনা ঘটে। শুক্রবার সকালে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। জ্ঞান ফেরার পর সন্ধ্যায় ওই গৃহবধূ তার বৃদ্ধ মাকে নিয়ে হাতীবান্ধা থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু গ্রামের প্রভাবশালী একটি মহলের চাপে তারা মামলা না করে আবার হাসপাতালে ফিরে আসেন। শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত প্রভাবশালীরা ধর্ষণের বিষয়টি স্থানীয়ভাবে রফাদফার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছিল। পরে রাত ৮টার দিকে থানায় মামলা হয়।
শনিবার দুপুরে হাতীবান্ধা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূ জানান, তিনি তার ছোট দুই ছেলেকে নিয়ে উপজেলার পূর্ব বিছনদই গ্রামের বাড়িতে থাকেন। তার স্বামী চট্টগ্রামে শ্রমিকের কাজ করেন। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে প্রকৃতির ডাকে বাইরে বের হলে গ্রামের হরিস চন্দ্রের ছেলে মিন্টুসহ কয়েকজন হঠাৎ আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। তারা আমার মুখ চেপে ধরে কাছেই রেললাইনের ধারে নিয়ে যায়। সেখানে একের পর এক লম্পট আমাকে ধর্ষণ করলে একসময় আমি অচেতন হয়ে পড়ি। পরদিন সকালে এলাকার লোকজন আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন।
ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর বৃদ্ধ মা জানান, গৃহবধূর জ্ঞান ফিরলে শুক্রবার সন্ধ্যায় তারা হাতীবান্ধা থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু তার ভাতিজা রহিমসহ এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের থানা থেকে ফিরিয়ে আনে। পরে ওই গৃহবধূ আবার হাসপাতালে ভর্তি হন। তিনি বলেন, অনেকেই মীমাংসার জন্য আমাদের চাপ দিচ্ছে। কিন্তু আমরা থানা পুলিশের মাধ্যমে আইন অনুযায়ী ধর্ষকদের শাস্তি চাই। নইলে ওরা (ধর্ষকরা) এলাকার অন্য কোনো মেয়ের ক্ষতি করবে।
থানায় মামলা করবেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে দুপুরে হাসপাতলে চিকিৎসাধীন ওই গৃহবধূ বলেন, মামলা করতেই তো থানায় গিয়েছিলাম। কিন্তু ওখানে আমার চাচাতো ভাই রহিমসহ এলাকার কিছু মানুষ আমাকে বলল আজ (শুক্রবার রাতে) হাসপাতালে চল, কাল (শনিবার) মামলা করব। গ্রামের একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুক্রবার সকালে অনেকেই শুনেছিলেন রেললাইনের পাশে এক মহিলার লাশ পড়ে আছে।
পরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ধর্ষণের শিকার হয়ে অচেতন অবস্থায় পড়ে আছেন এলাকারই পরিচিত এক গৃহবধূ। তাদের কেউ কেউ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অসহায় ওই গৃহবধূর বাবা না থাকায় তার চাচাতো ভাই রহিম ধর্ষকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের কিছু নেতার মাধ্যমে বিষয়টি রফদফার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ নিয়ে এলাকায় একাধিকবার বৈঠকও বসে বলে জানান তারা।
হাতীবান্ধা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুল মতিন প্রধান দুপুরে যুগান্তরকে বলেন, বিষয়টি আমি শুনেছি, কিন্তু এখনও কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। শুক্রবার সন্ধ্যায় ভিকটিম নিজেই আপনার থানায় গিয়েছিল তখন মামলা নেননি কেন- এমন প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, তখন আমি ছিলাম না। হয়তো কোনো দারোগাকে বিষয়টি বলেছেন তারা। ডাউয়াবাড়ি ইউপি চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বাবলা বলেন, আমি বিষয়টি শুনে তাদের বলেছি, এ ধরনের বিচার করার এখতিয়ার আমার নেই। তাদের প্রশাসনের আশ্রয় নেয়ার পরামর্শ দিয়েছি।
এদিকে ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর শারীরিক পরীক্ষা শনিবার বিকাল পর্যন্ত হয়নি। এতে রফদফার স্বার্থে ধর্ষণের আলামত নষ্টের আশংকা করা হচ্ছে। জানতে চাইলে হাতীবান্ধা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রমজান আলী বলেন, এ নিয়ে কেউ আবেদন না করায় ধর্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। তবে ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ বলেন, পরীক্ষার ব্যাপারে আমরা ডাক্তারকে বলেছি, চাচাতো ভাই রহিম বাড়ি এলেই পরীক্ষা হবে।
রাত ৮টার দিকে ওসি আবদুল মতিন হাসপাতাল থেকে ওই গৃহবধূকে থানায় নিয়ে তিনজনের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা নেন। মামলায় হরিস চন্দ্রের ছেলে মিন্টুকে প্রধান আসামি করা হয়। অপর দুই আসামি হল জুয়েল ও জহুরুল। তবে তখনও ধর্ষণের বিষয়ে তার প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়নি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আরতদাড়ের সাথে বিরোধ, রহনপুর বাজারে আম বিক্রি বন্ধ
আম চাষিরা আমের মণ সর্বোচ্চ ৪৮ কেজি করার দাবিতে চাঁপাইনবাবগঞ্জেরবিস্তারিত পড়ুন
ঢাকার সঙ্গে উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ শুরু
লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী এক্সপ্রেস ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়া ৩টি বগি উদ্ধারবিস্তারিত পড়ুন
পাটগ্রাম সীমান্তে ভারতীয় নাগরিক আটক
লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অণুপ্রবেশের দায়ে ভারতীয় নাগরিকবিস্তারিত পড়ুন