বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে রদবদল
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2024/06/1-118-622x350.jpg)
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে বড় ধরনের রদবদল হয়েছে, জাতীয় কাউন্সিল ছাড়াই। গতকাল শনিবার দলের ৩৯ নেতাকে বিভিন্ন পদে পদায়ন করা হয়েছে। এর মধ্যে কয়েকজনকে অবমূল্যায়ন ও অতিমূল্যায়ন করা হয়েছে। আবার আনকোরা কয়েকজনও গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গঠনতন্ত্র মোতাবেক একক ক্ষমতা বলে কমিটি পুনর্গঠন শুরু করেন।
দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গঠনতন্ত্র মোতাবেক একক ক্ষমতা বলে কমিটি পুনর্গঠন শুরু করেন।
এক্ষেত্রে আস্থাভাজন নেতাদের বেছে নিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে এ বিষয়ে আলোচনা হলেও পদায়নের বিষয়ে ফোরামের অনুমোদন নেওয়া হয়নি। পদায়নের বিষয়ে দলের মহাসচিবসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও জানতেন না।
যদিও বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেছেন, এ বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল। এখন বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এ নিয়ে দলে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে।
সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার কারণে অতি সম্প্রতি ঢাকাসহ চারটি মহানগর কমিটি ভেঙে দেওয়ার পর পরই গতকাল দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে ৩৯ নেতাকে পদায়ন করা হয়। ঈদের আগে হঠাৎ কিছু কমিটি বিলুপ্ত ও পুনর্গঠনের এই প্রক্রিয়ায় দলীয় নেতাকর্মীদের বেশ নাড়া দিয়েছে। এদিকে প্রত্যাশিত পদ পাওয়ায় ঈদ আনন্দে যেমন কারো বাড়তি খুশি যোগ হয়েছে। আবার প্রত্যাশিত পদ না পাওয়ায় কারো ঈদ আনন্দ নিরানন্দে পরিণত হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কারের শঙ্কায় ক্ষুব্ধ নেতারাও প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না।
বিএনপির নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গঠনতন্ত্র মোতাবেক একক ক্ষমতা বলে কমিটি পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু করেছেন। কমিটিতে বড় পরিবর্তন আনার আগে দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামে আলোচনা হলেও এ সংক্রান্ত কমিটি গঠনে ফোরামের অনুমোদনও নেওয়া হয়নি।
কমিটি ঘোষণার বিষয়টি দলের মহাসচিবসহ নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারাও জানতেন না। অবশ্য, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, কমিটি পুনর্গঠনের বিষয়ে আগেই সিদ্ধান্ত নেওয়া ছিল। এখন সেটি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সর্বশেষ কাউন্সিল হয়েছিল ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। ৮ বছরেরও বেশি সময় ধরে কাউন্সিল না হওয়ায় এই কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তিন বছর পরপর কাউন্সিল করার বিধান রয়েছে গঠনতন্ত্রে।
এবার কাউন্সিল না করেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কমিটিতে রদবদল আনা হলো। গঠনতন্ত্র মোতাবেক জাতীয় কাউন্সিলের মাধ্যমে নির্বাহী কমিটি গঠনের বিধান রয়েছে। কিন্তু গতকাল ৩৯ জনকে পদায়নের মাধ্যমে নির্বাহী কমিটি পুনর্গঠনের কাজ শুরু হয়েছে। এতে এটি স্পষ্ট যে, বিএনপিতে আপাতত কাউন্সিলের কোনো সম্ভাবনা নেই।
নতুন পদায়নের তালিকা বিশ্লেষণে দেখা গেছে, কমিটিতে এমন কিছু নেতাকে গুরুত্বপূর্ণ পদ দেওয়া হয়েছে; যারা রাজনৈতিকভাবে একেবারে আনকোরা। সাংগঠনিকভাবে দক্ষ কয়েকজন নেতাকে চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পদে পদায়ন করা হয়েছে।
এদের প্রতি তারেক রহমানের নেতিবাচক ধারণা আছে এবং কাউকে তিনি আস্থাভাজন মনে করেন না। এমন পদায়নকে শাস্তিমূলক বলে মনে করছেন তারা। এতে দীর্ঘদিন রাজনীতি করে আসা নেতারা হতাশা ব্যক্ত করেছেন।
বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন নেতা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দলের কিছু নেতা রয়েছেন যারা তারেক রহমানকে মানতে চান না। এই নিয়ে নানা সময়ে নানা গুঞ্জনও রয়েছে। সেই জায়গা থেকে কমিটি গঠনের মাধ্যমে মূলত তারেক রহমান দলে নিজের একটা শক্ত বলয় তৈরি করেছেন। দলের সব পর্যায়ের কমিটিতে নিজের পছন্দের নেতাকে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। এর ফলে বিএনপিতে তার একচ্ছত্র আধিপত্য তৈরি হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে তার সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ জানানোর মতো নেতা খুঁজে পাওয়া যাবে না।
বিএনপির গঠনতন্ত্রে যা আছে
বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক চেয়ারম্যানের সাময়িক অনুপস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান দলের চেয়ারম্যানের সমুদয় দায়িত্ব পালন করবেন। আর চেয়ারম্যানের কর্তব্য, ক্ষমতা ও দায়িত্বে বলা আছে, ‘চেয়ারম্যান প্রয়োজন মনে করলে জাতীয় নির্বাহী কমিটি, জাতীয় স্থায়ী কমিটি, বিষয়ভিত্তিক উপ-কমিটিসমূহ এবং চেয়ারম্যান কর্তৃক মনোনীত অন্যান্য কমিটিসমূহ বাতিল করে দিতে এবং পরবর্তী কাউন্সিলের অনুমোদন সাপেক্ষে পুনর্গঠন করতে পারবেন।’ জাতীয় নির্বাহী কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তারেক রহমান এই ক্ষমতা ব্যবহার করেছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য বলেন, কমিটি পুনর্গঠনের আলোচনা বিভিন্ন বিষয়ে স্থায়ী কমিটিতে হয়েছে। কিন্তু কখন ও কোন প্রক্রিয়ায় হবে সে বিষয়টি জানানো হয়নি। এমনকি কমিটি ঘোষণার আগে কারো মতামতও নেওয়া হয়নি।
দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলের নির্বাহী কমিটিতে কিছু পদে পরিবর্তন আনা হয়েছে। চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদেও কিছু নেতৃবৃন্দকে পদায়ন করা হয়েছে। দলের হাইকমান্ডের নির্দেশে এটি করা হয়েছে।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগর কমিটি বিলুপ্ত করে বিএনপি। একই সঙ্গে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু ও মুনায়েম মুন্নার নেতৃত্বাধীন যুব দলের কমিটিও ভেঙে দেয় বিএনপি। শিগগির এসব কমিটি পুনর্গঠন করা হবে।
পদায়ন হওয়া ৩৯ নেতা
কমিটি পুনর্গঠনে অনেক নেতার পদোন্নতি হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে সম্পাদকীয় থেকে নির্বাহী কমিটিতে পদায়ন করা হয়েছে। দলের বিশেষ সম্পাদক ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ড. আসাদুজ্জামান রিপনকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। এদিকে সাবেক সংসদ সদস্য জহির উদ্দিন স্বপন, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হারুন অর রশিদ, আসলাম চৌধুরী, সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক বেবী নাজনীন এবং সহ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক খালেদ হোসেন চৌধুরী ফাহিনকে দলীয় চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
স্বপন, খোকন, সরোয়ার, আলাল, হারুন, দুলুর মতো সাংগঠনিকভাবে দক্ষ নেতাদের জাতীয় নির্বাহী কমিটি থেকে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা (ভাইস চেয়ারম্যান পদমর্যাদা) পদে নিয়োগ দিয়ে তাদের অবমূল্যায়ন করা হয়েছে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মীরা।
এ বিষয়ে মোয়াজ্জেম হোসেন আলালের প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দেশ ভালো থাকুক, দল ভালো চলুক; এটাই আমার প্রত্যাশা।’
সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে যুগ্ম মহাসচিব পদে পদোন্নতি পেয়েছেন আবদুস সালাম আজাদ, সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স এবং শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী। সহ সাংগঠনিক সম্পাদক থেকে পদোন্নতি পেয়ে সাংগঠনিক সস্পাদক হয়েছেন কাজী সাইয়েদুল আলম বাবুল (ঢাকা বিভাগ), সৈয়দ শাহীন শওকত খালেক (রাজশাহী বিভাগ) ও শরীফুল আলম (ময়মনসিংহ বিভাগ)। এ ছাড়া সমবায় বিষয়ক সম্পাদক জি কে গউছ (সিলেট বিভাগ) সাংগঠনিক সম্পাদক হয়েছেন।
এর মধ্যে সাইয়েদুল বাবুল গাজীপুর জেলা বিএনপির কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে ভোটে পরাজিত হন, এরপর কয়েক মাস আগে তাকে সহ-সাংগঠনিক করা হয়েছে। আবার বিভিন্ন সময়ে শাহীন শওকতের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠেছে। সাংগঠনিকভাবে তিনি দক্ষও নন। এই দুই নেতাকে অতিমূল্যায়িত করা হয়েছে বলে মনে করেন নেতারা।
দলের প্রচার সম্পাদক করা হয়েছে সদ্য বিলুপ্ত যুব দলের কমিটির সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে। যদিও তার প্রত্যাশা ছিল যুগ্ম মহাসচিব। এ ছাড়াও সহ-প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক মোর্শেদ হাসান খানকে গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক, সহ-প্রচার সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীমকে গবেষণা বিষয়ক সম্পাদক এবং যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া বিএনপির সভাপতি নাহিদ খানকে সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, ডা. শাহ মুহাম্মদ আমান উল্লাহ হককে সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক এবং এ এস এম সাইফ আলীকে সহ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক করা হয়েছে।
সহ-প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীমকে রাজশাহী বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে। সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম আজাদকে ঢাকা বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক করা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলামকে রংপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক, জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর হেলাল উদ্দিনকে চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, আবু ওয়াহাব আকন্দকে ময়মনসিংহ বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এবং মিফতাহ সিদ্দিকীকে সিলেট বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে।
জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সস্পাদক জালাল উদ্দিন মজুমদার, রংপুর বিভাগের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলম, কুমিল্লা বিভাগের সহসাংগঠনিক সম্পাদক সায়েদুল হক সাঈদ, সহ-কৃষি বিষয়ক সম্পাদক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফারুক, সহ-তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এস এম গালিবের পদাবনতি হয়েছে।
এ ছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কয়সর এম আহমেদ, সুইডেন বিএনপির সদস্য মহিউদ্দিন আহমেদ ঝিন্টু, ডেনমার্ক বিএনপির সদস্য গাজী মনির এবং ছাত্রদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাশেদ ইকবালকে জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করা হয়েছে। একই কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েলকে কোথাও রাখা হয়নি।
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2024/06/cats6-1.jpg)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2024/06/1-176-622x350.jpg)
মুক্তিযুদ্ধের নামে বিএনপি ভাওতাবাজি করে : ওবায়দুল কাদের
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের নামে বিএনপিবিস্তারিত পড়ুন
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2024/06/1-133-622x350.jpg)
দেশের মানুষ ঈদ করতে পারেননি
দেশবাসীকে ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। দেশের মানুষবিস্তারিত পড়ুন
![](https://amaderkonthosor.com/wp-content/uploads/2024/06/1-113-622x350.jpg)
বিএনপির টপ টু বটম দুর্নীতিতে জড়িত: কাদের
‘বিএনপি টপ টু বটম সবাই দুর্নীতিবাজ বলেছেন, আওয়ামী লীগ সাধারণবিস্তারিত পড়ুন