বিএনপির নেতৃত্বে কে আসবেন? তারেক না জোবায়দা?
বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পর দলের শীর্ষ নেতৃত্বে কে আসবেন_ দলের বর্তমান সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান নাকি তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমান? খালেদা জিয়ার পর তারেক রহমানই দলের হাল ধরবেন_ দীর্ঘদিন ধরে এ রকম আলোচনা চলমান থাকলেও সম্প্রতি দলের ভেতরে ও বাইরে নতুন করে শুরু হয়েছে নানা জল্পনা-কল্পনা। ‘দুর্নীতি’র মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন কি-না, তা নিয়ে কিছুটা শঙ্কিত বিএনপি নেতারা।
এ পরিস্থিতির মধ্যেই বিএনপির আসন্ন জাতীয় কাউন্সিল সামনে রেখে ডা. জোবাইদা রহমানকে নিয়ে চলছে মাঠ জরিপের কাজ। জোবাইদা রহমানের রাজনীতিতে আসা উচিত কি-না? বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে রাজনৈতিকভাবে সহযোগিতা করতে জোবাইদা রহমান তার পাশে থাকলে কেমন হবে? এ ধরনের ১৮টি প্রশ্নের মাধ্যমে দলের মাঠ নেতাকর্মীদের মতামত নেওয়া হচ্ছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে ওই জরিপ সম্পন্ন হতে পারে। গত সপ্তাহে একটি বেসরকারি সংস্থা এ জরিপকাজ শুরু করেছে।
বিএনপির একাধিক নেতা বলেছেন, বিএনপির ভেতর থেকে এ ধরনের জরিপ চালানোর খবর তাদের জানা নেই। ডা. জোবাইদা রহমানকে বিএনপির পদ-পদবি দিয়ে রাজনীতিতে যুক্ত করতে জরিপের প্রয়োজন পড়ে না। তারেক রহমানের মতো দলের সর্বোচ্চ ফোরামের সিদ্ধান্তে জোবাইদাকেও প্রাথমিক সদস্য করে কেন্দ্রীয় পদ-পদবি দেওয়া যেতে পারে। তারা এও বলছেন, বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে দেশি-বিদেশি অনেকে
নানা হিসাব-নিকাশ করেছেন। নিজেদের প্রয়োজনে তারাও এ কাজটি করতে পারেন। তবে জোবাইদা রহমানকে নিয়ে এরই মধ্যে কয়েকটি জেলায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মতামত নেওয়ার তথ্য নির্ভরযোগ্য সূত্রে নিশ্চিত হয়েছে।
সূত্র জানায়, আগামী কাউন্সিলে ডা. জোবাইদা রহমানকে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটিতে রাখা হবে। তবে তাকে কোন পদে রাখা হবে, তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। কেউ কেউ প্রাথমিকভাবে তাকে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য করার পক্ষে মত দিচ্ছেন। কেউ কেউ দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরের পদে রাখার পক্ষে। এ ব্যাপারে দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটি ও দল-সমর্থিত বুদ্ধিজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের চেতনা ও আদর্শ লালন করতে বিএনপিতে নানা পরিবর্তনও আনা হতে পারে। তবে ডা. জোবাইদা রহমান রাজনীতিতে আসছেন কি-না_ এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই।
সূত্র জানায়, ২০০৭ সালে ওয়ান-ইলেভেনের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর থেকে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে। তার বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতি মামলার বিচার চলছে। দেশে ফিরে তার পক্ষে রাজনীতি করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি আগামী নির্বাচনে তার অংশগ্রহণও অনিশ্চিত। চলমান মামলাগুলোর রায়ে তিনি সাজাপ্রাপ্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন দলের হাইকমান্ড।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকে দলটির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব, পরবর্তী নির্বাচন ও দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থি্থতি উত্তরণে ভাবনা সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা স্টিফেনস ব্লুম বার্নিকাট। বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত বার্নিকাট বিএনপির ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সম্পর্কেও জানতে চান। আইনি জটিলতার মধ্যে থাকা দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত কোনো ধরনের শাস্তির রায় দিলে বিএনপি কীভাবে পরিচালিত হবে? খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে কে দলের হাল ধরবেন? কার নেতৃত্বে দল পরিচালিত হবে? তারেক রহমানকে কীভাবে দেশের রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করা হবে? এসব প্রশ্ন ছিল তার।
বিএনপির পক্ষ থেকে বারবার দাবি করা হচ্ছে যে, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়েছে। ন্যায়বিচার হলে রায়ে তাদের শাস্তি হবে না। শাস্তি না হলে স্বাভাবিকভাবে তারা স্ব-স্ব পদে দায়িত্ব পালন করবেন।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি লন্ডনে ছেলে তারেক রহমানের বাসায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া দলের শীর্ষ পদে পরিবর্তনের বিষয়ে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা তার পুত্রবধূ ডা. জোবাইদা রহমানকে জানিয়েছেন।
সূত্র জানায়, ডা. জুবাইদাকে বিএনপির শীর্ষ পদে বসানোর বিষয়ে হিসাব-নিকাশ করলেও তা বাস্তবায়ন করতে সময় লাগবে। খালেদা জিয়া গ্রেফতার হলে এবং তারেক রহমানের দেশে ফেরা অনিশ্চিত হলে আপদকালে জোবাইদা রহমানকে চেয়ারপারসনের পদে বসানো হতে পারে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট ও জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আদালত শিগগির চূড়ান্ত রায় দিতে পারেন। এ ছাড়া খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে আরও ক’টি মামলার রায় হওয়ার পথে। সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বিরুদ্ধে বেশ ক’টি ‘দুর্নীতি’ ও ‘স্পর্শকাতর’ মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। গ্রেফতার এড়াতে তার দেশে ফেরা অনিশ্চিত। এ পরিস্থিতিতে আপদকালের কথা চিন্তা করে ডা. জোবাইদা রহমানকে বিএনপির শীর্ষ পদে বসানোর পরিকল্পনা করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব।
ডা. জোবাইদা রহমান প্রয়াত নৌবাহিনীর প্রধান রিয়ার অ্যাডমিরাল মাহবুব আলী খানের বড় মেয়ে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পাস করে ১৯৯৫ সালে বিসিএস স্বাস্থ্য ক্যাডারে যোগ দেন তিনি। কর্মস্থলে অনুপস্থিতির কারণে ২০১৪ সালের ১২ আগস্ট তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন