বিএনপির শীর্ষ নেতাদের ভাগ্য নির্ধারণ হবে লন্ডনে
অবশেষে যুক্তরাজ্য সফরে গেলেন বিএনপি চেয়ারপরসন বেগম খালেদা জিয়া। আর সেই সফরেই দলের সিনিয়র ভাইস-চেয়ারম্যান ছেলে তারেক রহমানের সঙ্গে দলীয় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা-সমালোচনা করবেন তিনি। সফর শেষে দলীয় শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে চলবে শুদ্ধি অভিযান। এমনকি গত ৫ জানুয়ারি আন্দোলনের সময় বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে থাকা উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের নিষ্ক্রিয় শীর্ষ নেতাদের ব্যাপারেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। লন্ডন বিএনপির একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এমন তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র মতে, ২০ দলীয় জোটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গত ৫ জানুয়ারি সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছিল। সেই সময় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম-মহাসচিব রুহুর কবির রিজভী, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মুবিন চৌধুরী, খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুসহ একরে পর এক শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর প্রায় একাই দলীয় নেতাকর্মীদের দিকনিদের্শনা দিতে থাকেন মুখপাত্রের দায়িত্বে থাকা যুগ্ম-মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এক পর্যায়ে তাকেও হারিয়ে ফেলে দলটি। এমতাবস্থায় স্থায়ী কমিটির সদস্যরাও চলে যান আত্মগোপণে। খালেদাও গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।
তখন চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস ও প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান সোহেল দলীয় কর্মকাণ্ড পরিচালনা শুরু করেন। অবশ্য তারা তারেক রহমানের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ করেই দায়িত্ব পালন করেছে। ওই সময় চেয়ারপারসন কার্যালয়ে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা ও প্রভাব তৈরি নিয়ে শিমুল বিশ্বাস ও মারুফ কামাল খান সোহেলের মধ্যে দ্বন্দ্বও দেখা দেয়। এমনকি তাদের কারণেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে ফিরে আসতে হয়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। যা বিএনপির জন্য একটা বড় ক্ষতি হয়েছে বলেই অনেকে মনে করেন। এছাড়াও সোহেল-শিমুলদের কারণে বিএনপির আন্দোলন নষ্ট হয়েছে বলে মনে করেন তৃণমূল বিএনপি।
একপর্যায়ে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান বিষয়টি উপলব্ধি করতে পারেন। তখন তারা নিজেরাই বিভিন্ন জেলা ও বিভাগীয় শহরের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ শুরু করেন। ওই সময় সিলেটসহ সারাদেশের একাধিক নেতার সঙ্গে তারা ফোনে কথা বলেছেন। এরপরও আন্দোলনের গতি ফেরাতে পারেননি দলের দুই কাণ্ডারী।
কেন এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল, দলী নেতাদের বর্তমান অবস্থান, ৫ জানুয়ারি আন্দোলনের সময় সোহেল-শিমুলদের অবস্থান, যুবদল, ছাত্রদল, স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্মেলনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মা-ছেলের একান্ত আলাপ-আলোচনা হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
লন্ডন বিএনপির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, দলীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে গত রমজানে সৌদি আরব যাওয়ার কথা ছিল তারেক রহমানের। এছাড়াও বাংলাদেশ থেকে ওমরা হজে যাওয়ার কথা ছিল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার। কিন্তু ভিসা জটিলতার কারণে তারেক রহমান সৌদি আরব না যাওয়ায় খালেদাও হজযাত্রা বাতিল করেন। এছাড়াও গত ১৬ অগাস্ট খালেদা জিয়ার লন্ডন যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গৃহকর্মীর ভিসা জটিলতার করাণে সেই সময় তিনি লন্ডন সফর বাতিল করেছিলেন। অবশেষে গতকাল মঙ্গলাবার রাতে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি ফ্লাইটে লন্ডনের উদ্দেশে তিনি দেশত্যাগ করেছেন।
তার সফরসঙ্গী হিসেবে রয়েছেন- একান্ত সচিব এবিএম সাত্তার, উপদেষ্টা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, বিএনপি সমর্থিত ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচনকারী তাবিথ এম আউয়াল এবং গৃহকর্মী ফাতেমা।
সূত্র মতে, যুক্তরাজ্যের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে সরাসরি তারেক রহমানের বাসায় গিয়ে উঠবেন বেগম জিয়া। এবার দীর্ঘ ৪ বছর পর লন্ডনে বড় ছেলে তারেক রহমান, ছেলের বউ জোবায়দা রহমান, নাতনী জাইমা রহমানের সঙ্গে একান্তে সময় কাটাবেন খালেদা জিয়া। সফরকালে খালেদার প্রয়াত ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর স্ত্রী শর্মিলা রহমান সিঁথি, দুই মেয়ে জাফিয়া ও জাহিয়া রহমানের সঙ্গেও লন্ডনে দেখা হবে খালেদার। এরই মধ্যে মালয়েশিয়া থেকে দুই মেয়ে নিয়ে লন্ডন পৌঁছেছেন শর্মিলা।
সেই সঙ্গে ১৫/১৬ দিনের এ সফরে তিনি বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের সঙ্গে দল পুনর্গঠন, পরবর্তী আন্দোলন, আগামী দিনের কর্মপরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করবেন খালেদা জিয়া। এছাড়া ব্রিটেনের ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের চেষ্টা করবেন তিনি। পাশাপাশি তার চোখের চিকিৎসাও চলবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আ ন ম এহছানুল হক মিলন, অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক আবদুস সালামও লন্ডনে এসে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে দেখা করবেন বলে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এছাড়া যুক্তরাজ্য বিএনপির পক্ষ থেকে নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। ওইসব অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া উপস্থিত থাকবেন। খালেদাকে প্রধান অতিথি করে একটি সমাবেশ হওয়ারও কথা রয়েছে। এ নিয়ে ইতোমধ্যে গত সোমবার যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এমএ মালেক ও সাধারণ সম্পাদক কয়সর আহমেদের নেতৃত্বে একটি প্রস্তুতি সভাও করা হয়েছে বলে জানিয়েছে সূত্র।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লন্ডন বিএনপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘ম্যাডাম উনার ছেলে তারেক রহমান ও ছেলের স্ত্রী জুবায়দা রহমানের সঙ্গে দলীয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে। এ সময় বিগত আন্দোলনের পর্যালোচনা করা হবে। এমনকি ওই আন্দোলনে দলের শীর্ষ নেতাদের অবস্থান কি ছিল তাও খতিয়ে দেখা হবে।’ এছাড়াও গুলশান কার্যালয়ে থাকা নেতাদেরও অবস্থান খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান বিএনপির ওই নেতা।
বিএনপির ওই নেতা আরো বলেন, ‘ম্যাডামের যুক্তরাজ্য সফর শেষে নতুন তরে দল সাজানো হবে। কেন্দ্র থেকে তৃনমূল পর্যন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে আমাদের নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলে তা জানতে পেরেছি।’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন