বিএনপি এখনো শেষ হয়ে যায়নি: খালেদা জিয়া
বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা নড়বড়ে, শেষ হয়ে গেছে্-গণমাধ্যমের এমন খবর ও সরকারের এমন বক্তব্যের জবাবে দলটির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, “বিএনপি শেষ হয়ে যায়নি। আমরা রাজপথে আছি। জনগণের সঙ্গে আছি।”
সরকারি দলের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, “যারা জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন। যারা জনগণকে ভয় পায় তারা কাচের ঘরের এসি রুমে বসে মে দিবস পালন করছে। এটাই হলো বিএনপি ও আওয়ামী লীগের মধ্যে পার্থক্য।”
রবিবার বিকালে মহান মে দিবস উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রায় ৫০ মিনিটের বক্তব্যে খালেদা জিয়া সরকারের বিরুদ্ধে গুম,খুন, লুটপাট, দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচারের অভিযোগ আনেন। এ ছাড়া বিএনপিসহ বিরোধী দলকে কোণঠাসা করতে সরকার মিথ্যা মামলা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি। শ্রমিক সমাবেশ থেকে আগামী দিনে ক্ষমতায় গেলে সমতার ভিত্তিতে দেশের উন্নয়নে কাজ করারও ঘোষণা দেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘ বক্তব্যে খালেদা জিয়া নিজেকে স্বজনহারা দাবি করে নেতাকর্মী ও জনগণকে নিজের শেষ ভরসাস্থল বলে ঘোষণা দেন। তিনি বলেন, আমার মা-বাবা, ভাই-বোন নেই। এক ছেলে বিদেশে মারা গেছে। আরেক ছেলে বিদেশ মচিকিৎসা নিচ্ছে।” ছেলে এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মীরা আবেগ আপ্লুত হয়ে সমস্বরে তার পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন।
এর আগে বেলা ২টার কিছু আগে আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হয়। দুপুর থেকে কড়া রোদ উপেক্ষা করে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিলসহ সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। তীব্র গরমের কারণে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়লে সমাবেশস্থলের পাশে স্থাপিত ড্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পে অসুস্থদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।
বিকেল সোয়া চারটা নাগাদ সমাবেশে যোগ দেন খালেদা জিয়া। এ সময় নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানিয়ে স্লোগানে স্লোগানে গোটা এলাকা মুখরিত করে তোলে।
‘মানুষকে মানুষ মনে করে না আওয়ামী লীগ’
খালেদা জিয়া বলেন, “আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে শ্রমিকদের নির্যাতন করে। অত্যাচার চলে। দেশে সরকারি দল ছাড়া কারো কোনো অধিকার নেই। আর আওয়ামী লীগ মানুষকে মানুষ মনে করে না।”
তিনি বলেন, “মে দিবসে থেকে শিক্ষা নিতে হবে। রক্ত দিয়ে তারা অধিকার আদায় করেছে। আজ শ্রমিকরা মোটেও ভালো নেই। আজ তারা নির্যাতিত। তাই আমাদের আন্দোলনের মাধ্যমে অধিকার আদায় করতে হবে।”
খালেদা জিয়া অভিযোগ করেন,‘আজীবন ক্ষমতায় থাকতে আওয়ামী লীগ নতুন নতুন আইন করছে, সংবিধান সংশোধন করছে। তারা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে চায়। কিন্তু সে অবস্থায় নির্বাচন কেমন হয় তা দেখা যাচ্ছে। নির্বাচনের নামে তারা ভোটকেন্দ্র দখল করে জোর করে নিজেদের প্রার্থীদের বিজয়ী করছে। আর তাদের সহযোগিতা করছে আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন।”
প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে মেরুদণ্ডহীন আখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “হাসিনাও যেমন, নির্বাচন কমিশনও তেমন।”
এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত কি না- এমন প্রশ্ন রেখে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, এরা জোর করে ক্ষমতায় বসে আছে আর শুধু লুটপাট করছে।
খালেদা জিয়া বলেন, “মানুষ আওয়ামী লীগকে বিশ্বাস করে না। কিন্তু এই বাংলাদেশকে আওয়ামী লীগ মনে করে পৈতৃক সম্পত্তি। তারা দখল করে, জবরদস্তি করে ক্ষমতায় আছে। তাই আজকে তারা ক্ষমতায় থেকে নির্বাচন করতে চায়।”
খালেদা জিয়া বলেন, রানা প্লাজা ধসে শ্রমিক মারা গেল। এখনো পর্যন্ত অনেককে ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়নি। রানা প্লাজার জন্য অনেক টাকা তোলা হয়েছে। এসব টাকা কোথায় গেল? শ্রমিকরা কেন সে টাকা পেল না।
‘সাত বছরে ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার’
আওয়ামী লীগের গত সাত বছরের ক্ষমতাকালে ৩০ হাজার কোটি টাকা পাচার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন, দেশের মানুষের কষ্টের টাকা পাচার হলে কীভাবে উন্নয়ন হবে? উন্নয়নের নামে প্রকল্প নিয়ে সে টাকা লুটপাট করা হয়। প্রকল্প নেয়া হয় কিন্তু উন্নয়ন হয় না। আর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কাজ শেষ করতে না পারায় প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়।”
আওয়ামী লীগ যত দিন ক্ষমতায় থাকবে তত দিন দেশকে শেষ করে দেবে বলেও আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ ও হত্যা চেষ্টা মামলায় সাংবাদিক পরিচয়ে বাসা থেকে শফিক রেহমানকে গ্রেপ্তার করার নিন্দা জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “তার দোষ কী ছিল। তিনি স্বঘোষিত প্রধানমন্ত্রীর ছেলে, কী যেন নাম (সজীব ওয়াজেদ জয়) ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বিদেশের ব্যাংকে জমা রেখেছেন, সেই তথ্য সংগ্রহ করেছেন। তিনি (শফিক রেহমান) তা প্রকাশও করেননি।”
অবিলম্বে শফিক রেহমান, মাহমুদুর রহমান, শওকত মাহমুদ, মাহমুদুর রহমান মান্নার মুক্তি দাবি করেন খালেদা জিয়া।
গুপ্তহত্যার সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “এর সঙ্গে বিএনপি নয়, আওয়ামী লীগের লোকজন জড়িত। বলা হচ্ছে, ক্ষমতায় যেতে না পেরে বিএনপি এসব করছে। আরে ক্ষমতায় গেলাম কীভাবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিয়ে দেখুন, কার জনপ্রিয়তা বেশি।” সরকারের মদদে গুম, খুন হচ্ছে বলেও দাবি করেন খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া বলেন, “বিএনপির ঠিকানা বাংলাদেশ। এক-এগারোর সময় আমাকে এবং আমার সন্তানদের বিদেশে যেতে বলা হয়েছিল। কিন্তু আমরা বলেছি এখানেই থাকব। সে কারণেই আমার এবং ছেলেদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে। নির্যাতন করা হয়েছে।”
শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে এতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, জমির উদ্দিন সরকার, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, অর্থনৈতিক বিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম প্রমুখ বক্তব্য দেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন