বিএনপি নেতাদের কপালে জামায়াত নেতার চুম্বন!
অন্তরের আবেগ মানুষ অনেক সময় ধরে রাখতে পারে না। যেমন পারেননি জামায়াত নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তিনি চুম্বন দৃশ্যের অবতারণা করেছেন দেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপির ইফতার মাহফিলে। প্রচলিত আছে, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল থেকে ‘জামায়াতেবাদী’ দল হয়ে পড়া বিএনপির আসল শক্তি ওই জামায়াত শিবিরই। কিন্তু বিএনপি নেতাদের কপালে জামায়াত নেতা কর্তৃক চুম্বন, সে চুম্বন হবে প্রকাশ্যে- তা বোধ হয় এভাবে কেউ দেখেনি!
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আহ্বানে আয়োজিত ইফতার মাহফিলে দলটির নেতাদের সঙ্গে সৌজন্য বিনিময়কালে বিএনপি নেতাদের কপালে চুম্বন করেন জামায়াতের সিনিয়র নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। গত ৯ জুন বৃহস্পতিবার বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের কপালে এই চুম্বনভাগ্য জোটে।
জামায়াতের ওয়াজী নেতা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিত দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী একসময় প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, বিএনপি ও জামায়াত একই মায়ের পেটের দুই ভাই। পরে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও একই উক্তি করেছিলেন। তো ভাই ভাইয়ের কপালে চুম্বন করবে-এ আর বিচিত্র কী! বরং এর মধ্য দিয়ে বিএনপি-জামায়াতের সম্পর্কটাই যথাযথ ভাবে প্রকাশিত হয়েছে। গভীর ভালোবাসার সম্পর্ক ছাড়া সাধারণত আমাদের দেশে প্রকাশ্য চুম্বনের রীতি নেই।
জামায়াত-বিএনপি নেতাদের এই প্রকাশ্য চুম্বন নিয়ে বলার কিছু নেই। এই চুম্বনটি প্রথম, না নিয়মিত চুম্বনের অংশ-সেটা অবশ্য জানা যায়নি। আমরা এ বিষয়ে কোনো বিতর্কে যাব না। বরং চুম্বনের মতো পবিত্র বিষয়ে কিছু প্রয়োজনীয় কথা আলোচনা করি। চুম্বন আলাদা এক অনুভূতি। কবি কায়কোবাদ ‘প্রথম চুম্বন’ কবিতায় লিখেছেন, ‘প্রথম চুম্বন!/মানব জীবনে আহা শান্তি-প্রস্রবণ!/কত প্রেম কত আশা,/কত স্নেহ ভালবাসা,/বিরাজে তাহায়, সে যে অপার্থিব ধন!/মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন!……/ সে চুম্বন, আলিঙ্গন, প্রেম-সম্ভাষণ,/অতৃপ্ত হৃদয় মূলে/ভীষণ ঝটিকা তুলে,/উন্মত্ততা, মাদকতা ভরা অনুক্ষণ,/মনে কি পড়ে গো সেই প্রথম চুম্বন !’
চুম্বন নিয়ে কবিগুরু লিখেছেন, ‘ব্যাকুল বাসনা দুটি চাহে পরস্পরে-/দেহের সীমায় আসি দুজনের দেখা।/প্রেম লিখিতেছে গান কোমল আখরে-/অধরেতে থরে থরে চুম্বনের লেখা।/দুখানি অধর হতে কুসুম চয়ন-/মালিকা গাঁথিবে বুঝি ফিরে গিয়ে ঘরে/দুটি অধরের এই মধুর মিলন/দুইটি হাসির রাঙা বাসরশয়ন।’
মানব জীবনে চুম্বন খুবই আলাদা এক অনুভূতি। প্রথম চুম্বনের স্মৃতি প্রত্যেকের কাছে চরম রোমাঞ্চকর! এক আলাদা শিহরণ! মনে পড়ে বিনিদ্র বিকেল জুড়ে থরে থরে কৃষ্ণচূড়া। শ্যাওলা ও সন্ধ্যা-মালতীর সবুজ লাল আঁশটে সুগন্ধী সময়। তুমি এসেছিলে বসন্তের শুভ লগ্নে। একদিকে পলাশের রক্তিম রং অন্যদিকে বসন্ত জাগ্রত দ্বারে। সেই তো প্রথম চোখে চোখ। হাতে হাত।
হাজারো দ্বিধা দ্বন্দ্বের নক্সা বোনা বেগুনি সন্ধ্যা। প্রথম চুরি করে চুমু। ফার্স্ট স্টোলেন কিস। একবার নয়। বার বার। চুমুর চরৈবেতি। শিরা উপশিরায় বেপরোয়া স্রোত । ঠোঁটে ঠোঁট আর ম্যাজিকের মত যৌবনের ঝিলিক। এই প্রথম যৌবন ফিনকি দিয়ে বলেছিল- ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত। শিরশিরে হাওয়ায় স্নাতক পাঠ্যক্রমের বৈষ্ণব পদাবলির এলোমেলো পাতা আর রোমকূপের সে কী ভীষণ রতি সিঞ্চন! ওগো তুমি কোথা থেকে এলে চুম্বন?
চুম্বন কি শুধু ভেজা ঠোঁটের ছোঁয়াছুঁয়ি? না কি ত্বকের ব্যারিকেড ভাঙা ভাষা? চর্ম সুখ ছাপিয়েও অন্য আগুনের অনুভূতি? বৃহত্তর সাংস্কৃতিক অর্থে চুম্বনের প্রয়োগ বহুবিধ। কখনও প্রেম, স্নেহ, বিশুদ্ধ বন্ধুত্ব, কখনও ধার্মিক রীতি নীতি, সৌজন্য বিনিময়, শান্তির শিলমোহর, কখনও আবার যৌন চাহিদার আদান প্রদান। প্রত্নতত্ত্ববিদের মতে চুম্বনের উৎস বিভাজিত দুই ভাবে। প্রথমটি হল প্রবৃত্তিগত। অন্যটি পরিবেশগত। জন্মের পর প্রথম চুম্বন আসে মাতৃ সৌজন্যেই। শিশু শিখে ফেলে চুম্বনের ভাষা । সাহিত্যে, মহাভারতের মত মহাকাব্যে পাওয়া যায় প্রথম চুম্বনের বীজ -সে ছুঁয়েছিল আমার ওষ্ঠ/ তৃপ্তির ফুল ফুটেছিল বুকে/ চারদিক জ্যোৎস্নাময়/ কী অফুরন্ত সুখে!
সংস্কৃত চুম্বন থেকে বাংলায় চুমু, চুমা বা চুমো শব্দের উৎপত্তি। পবিত্র ধর্মগ্রন্থের বিভিন্ন জায়গায়ও চুম্বন বর্ণিত। হোমারের রচনা থেকে জানা যায় প্রাচীন গ্রিসে ঠোঁট হাত আর পায়ের পাতায় চুম্বন প্রথা প্রচলিত ছিল।
চুম্বন হলো মনের চূড়ান্ত অনুভূতির শরীরী স্বতঃস্ফূর্ত অভিব্যক্তি। চুম্বন ক্রিয়ার সময় নির্দিষ্ট কিন্তু চুম্বন চিন্তা দীর্ঘ সময়ের। শরীর বুড়িয়ে গেলেও অতীতের চুম্বন বর্তমান সময়কে এতটাই সতেজ-সজীব করে তোলে যে, যে কোনও নারী-পুরুষ বলে উঠতেই পারেন-আই রিফিউজড টু গ্রো ওল্ড।
চিকিৎসা শাস্ত্রেও চুম্বনের স্বপক্ষে অনেক সমর্থন রয়েছে। ডাক্তারি বিদ্যা অনুযায়ী চুম্বন ওজন কমানোর সঠিক মেডিসিন । বিষয়টি গল্প হলেও সত্যি। প্রতি এক মিনিট চুম্বনে দুই থেকে পাঁচ ক্যালোরি পর্যন্ত খরচ হয়। যা ঘণ্টায় দুই মাইল হাঁটার সমান। অর্থাৎ প্রতিদিনের দশ মিনিটের একটানা চুম্বন এক সঙ্গে বছরে পাঁচ পাউন্ড বা তার বেশি ওজন কমিয়ে ফেলে। গভীর গাঢ় চুম্বনে মেটাবলিজমের গতি বেড়ে যায়। যা ওজন ঝরাতে সাহায্য করে। অন্তরঙ্গ নিয়মিত দুই ওষ্ঠের সংস্পর্শে মুখের মাংসপেশী সুগঠিত হয়। এবং মুখের বলিরেখা বার্ধক্যের ছাপ ফেলতে পারে না।
এই পদ্ধতির সঙ্গে অ্যাড্রিনালিন যুক্ত হয়ে নিউরোট্রান্সমিটারের উপস্থিতি ক্রমাগত কমাতে থাকে। চুম্বনে কতটা ক্যালোরি ক্ষয় হয় তা নির্ভর করে তা কী ধরনের চুম্বন, তার ওপর। আলতো চুম্বনে কম ক্যালোরি খরচ হয়। আর গভীর চুম্বনে বেশি। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য, সেটা হল নিদ্রাহীনতা বা ইনসোমনিয়ার সমস্যা কিছুটা হলেও চুম্বনের ফলে দূর হয়। চুম্বনের ফলে দেহে অক্সিটোসিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যা দেহকে শান্ত রাখে । এভাবেই প্রত্যহ নিয়মিত চুম্বন; রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা বাড়ায়।
জীবিত মানুষের চুম্বনের কথা তো সকলেই শুনেছে। কিন্তু মৃত মানুষের চুম্বন দৃশ্য কজনের চোখে পড়েছে! এমন প্রশ্নের উত্তরে সকলেই এক নিঃশ্বাসে বলবেন-এও আবার হয় না কি? যত আজগুবি …। কথাটা অলৌকিক বা ভৌতিক গল্পের মতো মনে হলেও ইতিহাসের পাতায় এর নজির স্পষ্ট। ১৯৭২ সালে ইরানের হানসালুতে মাটির নীচে চুম্বনরত দুটি কঙ্কাল পাওয়া যায়। পেনিসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মতানুসারে ওই প্রেমিক যুগলের মৃত্যু আটশো খ্রিষ্টপূর্বাব্দে। আবার কারও কারও মতে ওই প্রেমিক যুগল দু-হাজার বছরের বেশি পুরনো নয়। অনেকেই এই প্রেমিক যুগলের মৃত্যুকে সহমরণ হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন। সুতরাং চুম্বনের বিস্তৃতি এক সভ্যতা থেকে অন্য সভ্যতায়।
চুম্বন শুধুমাত্র ক্ষণিকের খেলা নয়। যুগে যুগে ভালোবাসার (অনেক ক্ষেত্রে যৌনতার) ধারক ও বাহক রূপে চুম্বন চির চিহ্নিত। কবি টমাস হার্ডির কবিতা ”In time of the breaking of nations”-এর ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ হল- ‘War is a phasing phase. It comes and goes. But love comes and grows down the ages’ চুম্বন তো এমনভাবেই যুগে যুগে প্রেমের প্রদীপ জ্বালিয়ে রাখে। কবি জীবনানন্দ দাশ তো বলেইছিলেন- কোনও রাজনন্দিনীর চোখে আমি এঁকেছিনু বর্বর চুম্বন!/অন্দরে পশিয়াছিনু অবেলার ঝড়ের মতন! অন্য একটি কবিতায় জীবনানন্দ লিখেছিলেন-প্রগাঢ় চুম্বন ক্রমে টানিতেছে তাহাদের তুলোর বালিশে/মাথা রেখে আর মানবীয় ঘুমে স্বাদ নেই …। এখানেই চুম্বন বস্তু জগত অতিক্রম করে ছুঁয়ে ফেলছে কালজয়ী কল্লোল। আদিম থেকে আধুনিক যুগে বদলে যাচ্ছে চুমু খাওয়ার ধর । কিন্তু থেকে যাচ্ছে; থেকে যাবে চির চুম্ব । সগৌরবে সে যেন বলে উঠবে-I change but I can’t die.
আর প্রেমিক-প্রেমিকার দল সন্দেহের যাবতীয় পোশাক ছিঁড়ে জড়ো হবে একে একে। আবেগের আকাশে প্রেমের পালক বুলিয়ে তারা করে যাবে চির চুম্বন চর্চা !
বিশেষে প্রার্থনা করি: বিএনপি-জামায়াত নেতাদের এই চুম্বন চিরজীবী হোক!
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
সাময়িক বরখাস্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ঊর্মির দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনেবিস্তারিত পড়ুন
কমলা হ্যারিসের ভোটের প্রচারণায় বাজবে এ আর রহমানের গান
আগামী নভেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে ডেমোক্রেটিক প্রার্থী কমলা হ্যারিসেরবিস্তারিত পড়ুন
উপদেষ্টা আদিলুর: পূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের ছাড় দেওয়া হবে না
দুর্গাপূজায় বিশৃঙ্খলাকারীদের কোনো ছাড় দেওয়া হবে না বলে সতর্ক করেবিস্তারিত পড়ুন