বিচার বিভাগ শৃঙ্খলার বাইরে চলে যাচ্ছে: আপিল বিভাগ
মাসদার হোসেন মামলার রায় অনুসারে অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা না হওয়ায় পুরো বিচার বিভাগ জিম্মি হয়ে আছে বলে মন্তব্য করেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
আগামী ২৪ নভেম্বরের মধ্যে শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা গেজেট আকারে প্রকাশ করে তা আদালতকে অবহিত করার জন্য অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের নয় বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আজ সোমবার অ্যাটর্নি জেনারেলের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে এই আদেশ দেন।
মামলা শুনানির শুরুতেই অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এফিডেভিট আকারে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো খসড়া বিধিটি দাখিল করেন।
হলফনামা আকারে দাখিল করা এই খসড়াটি দেখে আদালত ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আদালত বলেন, ‘এটা কি হলো, এটা কথা হলো? আমরা কি এটা ফ্রিজ করে রেখে দিবো? ড্রাফট পাঠিয়েছিলেন। আমরা কারেকশন করে দিয়েছি। এটা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানোর কি দরকার ছিলো?’
আদালত বলেন, ‘হলফনামা প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানোর কথা বলেছেন, কবে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করলেন, কি হলো কিছুইতো নেই। দুই মাস আগে আমরা এটা চূড়ান্ত করে দিয়েছিলাম।
এখন বলছেন, বিধিমালার খসড়া রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন। এর মধ্যে দুইবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা হয়েছে; সেসময় আমরা রাষ্ট্রপতির কাছে গেজেটের কথা বলেছিলাম। আমাদের কাছে ইনফরমেশন আছে, পুরো বিচার বিভাগ শৃঙ্খলার বাইরে চলে যাচ্ছে, আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। একজনতো রাষ্ট্রপতির কাছে অভিসংশন চেয়ে চিঠি দিয়েছেন; একজন অতিরিক্ত জেলা জজ রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দেয় সাহস কত?’
এক পর্যায়ে আদালত অ্যাটর্নি জেনারেলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘আপনি না পারলে বলেন, সারেন্ডার করেন। আমরা দেখছি। যে পিটিশন দিয়েছেন এটা ফলস স্টেটমেন্ট। এর কোনো সত্যতা নেই। কবে এ বিধি রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন তা সাড়ে এগারোটার মধ্যে বলেন।’
অ্যাটর্নি জেনারেল জবাবে বলেন, ‘উনি-তো দেশের বাইরে।
আদালত বলেন, ‘সারা বিচার বিভাগ জিম্মি হয়ে আছে। কাজ করতে পারছে না। আপনাকে একটা শব্দ বাদ দিতে বলেছিলাম। পারেননি। একটি শব্দের জন্য বছরের পর বছর কেটে গেছে।’
এসময় অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘এ মামলায় এর আগে অনেকবার দাঁড়িয়েছি। এটা অনেকটা আসামির মতো।’
আদালত বলেন, ‘১৪ বছর পার হয়ে যাচ্ছে, মাসদার হোসেন মামলার আসল জিনিস বাস্তবায়ন হচ্ছে না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘হবে; এটাও হবে।’
আদালত বলেন, ‘এমন কিছু বলবেন না, এর মধ্যে দুইবার প্রেসিডেন্টের সাথে আমার দেখা হয়েছে। মন্ত্রী বলতে পারবেন, কবে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠিয়েছেন? অক্টোবরের এ সপ্তাহ বা অমুক তারিখে। এটা অ্যাবস্যুলুটলি ভেইক। আড়াইমাস হয়ে গেছে, কিছু করতে পারলেন না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘কথা হয়েছে। দেখা হয়েছে। আমি নিজেও হাসপাতালে ছিলাম।’
আদালত বলেন, ‘একটি দেশের একটি বিভাগ জিম্মি হয়ে থাকবে, এটা হতে পারে না। আপনাদের সুবিধার জন্য খসড়ায় লাল কালি দিয়ে মার্ক করে দিয়েছিলাম। একজন বিচারককে হাতে নাতে ধরে ফেললে তখন মিনিস্ট্রি বলে রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের জন্য পাঠাবে। এভাবে কি চলবে? আর কতদিন অপেক্ষা করবো। বিচার বিভাগ চলছে না।’
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘লেট আস ট্রাই। সময় দেন আট সপ্তাহ।’
আদালত বলেন, ‘৪টি বিধি করছেন। ১৭০ জন বিচারক বসে বসে আড্ডা দিচ্ছেন। তাদের কোর্ট রুম নাই। একটা ভবন নির্মাণে তিন বছর সময় নেন। পরে বলেন বিদুৎ নেই।’
আদালত বলেন, ‘সর্বশেষ আদেশে গেজেট প্রকাশ করতে বলেছি। রুলস অফ বিজসেন অনুসারে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা মন্ত্রণালয় নিয়ে নিয়েছেন। রাষ্ট্রপতির দোহাই দিয়ে আইন মন্ত্রণালয় কাজ করছে। আমরা রুলস করেছি মাসদার হোসেনের মামলায় দেওয়া গাইড লাইনের বাইরেও না। এখানে রাষ্ট্রপতির কথা নেই। বন্ধের দুই মাস পরেও পারলেন না।’
আদেশে আদালত বলেন, পিটিশন ভেইক। শেষ সময় দিচ্ছি। ২৪ নভেম্বররের মধ্যে গেজেট দাখিল করবেন। একদিকে রাষ্ট্রপতির কথা বলবেন, আবার আইনমন্ত্রীর কথা বলবেন, এভাবে সময় ক্ষেপণ করা যাবে না।
১৯৯৯ সালের ২ ডিসেম্বর মাসদার হোসেন মামলায় ১২দফা নির্দেশনা দিয়ে রায় দেয়া হয়। ওই রায়ের আলোকে নিš§ আদালতের বিচারকদের চাকরির শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা ছিলো। আপিল বিভাগের নির্দেশনার পর গত বছরের ৭ মে আইন মন্ত্রণালয় একটি খসড়া শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিধি প্রস্তুত করে সুপ্রিমকোর্টে পাঠায়।
গত ২৮ আগষ্ট এ সংক্রান্ত মামলার শুনানিকালে আপিল বিভাগ বলেছিলো, শৃঙ্খলা বিধিমালা সংক্রান্ত সরকারের খসড়াটি ছিলো ১৯৮৫ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালার হুবুহু অনুরূপ। যা মাসদার হোসেন মামলার রায়ের পরিপন্থি। এরপরই সুপ্রিম কোর্ট একটি খসড়া বিধিমালা করে আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। একই সঙ্গে ৬ নভেম্বরের মধ্যে তা প্রণয়ন করে প্রতিবেদন আকারে আদালতকে অবহিত করতে আইন মন্ত্রণালয়কে বলা হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন
ময়মনসিংহে ওসি-এসপি’র বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর
সরকারি দায়-দায়িত্ব ও কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথবিস্তারিত পড়ুন
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণের সাথে রায়েছে বিচার বিভাগ
দেশের মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিচার বিভাগ জনগণের সঙ্গে আছেবিস্তারিত পড়ুন