বিডিআর বিদ্রোহ: রায় হলেও কার্যকর হচ্ছে না
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি। সকালে ঘুম থেকে ওঠার আগেই পিলখানার সদর দফতর মুহুর্মুহু গুলিতে কেঁপে ওঠে। ভেতরে দুদিন ধরে চলতে থাকে বিডিআর বিদ্রোহে অংশ নেওয়া জওয়ানদের নৃশংস হত্যাকাণ্ড-তাণ্ডব। তারা গুলি করে সেনাবাহিনীর ৫৭ জন কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে হত্যা করে। ওই ঘটনায় ৮৫০ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়। বিচার শেষ হলেও উচ্চ আদালতে আসামিদের আপিলের কারণে সাজা কার্যকর করা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ ঘটনার পর বিডিআর বিদ্রোহ এবং ফৌজদারি অপরাধে মামলা হয়। এর মধ্যে বিডিআরে স্থাপিত একটি আদালতে ৭৩৩ জন জওয়ানের বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে ১০ জন বেকসুর খালাস পান, ৬৪ জনকে সাত বছরের এবং বাকিদের নানা মেয়াদে কারাদ- দেওয়া হয়। বিদ্রোহের পর গত তিন বছরে বিশেষ আদালতগুলোতে ৫৭টি মামলায় মোট ৬ হাজার ৪৬ জন জওয়ানের বিচার হয়। এ ঘটনায় ৮৫০ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেয় সিআইডি।
দীর্ঘ শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর রায় দেন ঢাকার একটি বিশেষ জজ আদালত। এর মধ্যে বন্দি অবস্থায় চার জওয়ান মারা যান। বাকি ৮৪৬ আসামির মধ্যে ১৫২ জনের ফাঁসি, ১৬১ জনের যাবজ্জীবন কারাদ- এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয় ২৫৬ জনের। খালাস পান ২৭৭ জন। তবে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ১৫২ আসামির মধ্যে ১৪ জন এখনো পলাতক। অন্যদিকে রায়ের পর মৃত্যুদ-প্রাপ্ত কারাগারে থাকা ১৪১ জনের পক্ষে জেল আপিল এবং রাষ্ট্রপক্ষে ১৫২ জনের মৃত্যুদ- অনুমোদনের বিষয়ে হাইকোর্টে একটি আবেদন করা হয়। এদের মধ্যে ডিএডি রহিম মারা যাওয়ায় বাকিদের শুনানি চলছে। আর কারাগারে থাকাকালীন এ মামলার সাজাপ্রাপ্ত অপর আসামি বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন আহমেদ পিন্টু মারা যান।
বাংলাদেশের ইতিহাসে বৃহৎ এ মামলার তদন্তে দায়িত্ব পালন করেন সিআইডির তৎকালীন বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দ। তিনি বলেন, ‘তদন্ত করতে গিয়ে অনেক কিছু জানতে হয়েছে। অনেক জওয়ানকে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তারা ঘটনার যা বর্ণনা দিয়েছেন, তা ইতিহাসের যেকোনো বর্বরতাকে হার মানায়। একই সঙ্গে এই মামলার তদন্ত শেষ করতে বেশ বেগ পেতে হয়।’
বিডিআর বিদ্রোহ মামলার সরকারি কৌঁসুলি ছিলেন মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, মামলার বিচার হয়েছে নতুন আইনে। আর ওই আইনের ফলে তৎকালীন বিডিআরের ১৯৭২ সালের আইন অকার্যকর করা হয়। আর বিচার চলকালে আসামিপক্ষকে সব ধরনের বিচারিক সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রে আসামিদের আইনজীবী পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় দেওয়া হয়। আর এসবই করা হয়েছে একটি নিরপেক্ষ বিচারের স্বার্থে। মামলাটি পরিচালনা করাও ছিল বড় চ্যালেঞ্জ। কেননা, এক মামলায় এত আসামি আর কখনো হয়নি। এই মামলার রায় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। বাদীপক্ষের ৬৫৪ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হয়।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর (বর্তমানে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ- বিজিবি) সদস্যরা ঢাকা পিলখানা এলাকায় অবস্থিত বিডিআর সদর দফতরে সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের কর্তৃত্বের অবসান, রেশন ও বেতনবৈষম্য দূর করাসহ বেশ কিছু দাবিতে সশস্ত্র বিদ্রোহ করে। সকালে দরবার হলে একটি অনুষ্ঠানে তৎকালীন মহাপরিচালক শাকিলের বক্তব্য শুরুর কিছুক্ষণ পরই উত্তেজনা বাগ-বিত-া শুরু হয়। এভাবে হইচই না করে একজনকে সামনে এসে বক্তব্য দিতে বলেন শাকিল। সামনে একজনের জায়গায় দুজন এসেছিলেন বলে জানা যায়। বাকবিত-ার একপর্যায়ে একজন জোয়ানকে মঞ্চের ওপরে দেখা যায়। তিনি হুমকির সুরে কিছু একটা বলেন। তখন একজন অফিসার তাকে ধরে ফেলে বলেন, ‘কী বলছ পাগলের মতো?
অপমানিত ডিজি শাকিলের হাতে পিস্তল। হট্টগোলের ভেতর মঞ্চে সৈনিকটি জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়েন। লুটিয়ে পড়া সৈনিকটি শাকিলের গুলিতেই মারা যান বলে প্রচার আছে। এর পর উপস্থিত সৈনিকরা একযোগে আসন ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করেন। এর পর সবাই হল ছেড়ে চলে যান। এরপরের ঘটনা ভয়াবহ। সৈনিকরা দরবার হলে ত্যাগ করার পর বাইরে গুজব ছড়িয়ে যায় যে জেনারেল শাকিল এক সৈনিককে গুলি করে হত্যা করেছেন। এরপর বিডিআর সদস্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে অস্ত্রাগাররক্ষীকে মারধর করে চাবি কেড়ে নিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র এবং ভিন্ন আরেকটি গোলাবারুদের গুদাম থেকে গুলিভর্তি ম্যাগাজিন বের করে তারা। জওয়ানদের একটি দল দরবার হলের দিকে যায়, এর পর প্রথম গুলিবর্ষণের শব্দ, অটোমেটিক রাইফেলের ব্রাশফায়ার।
প্রত্যক্ষদর্শী সৈনিকের বক্তব্যে জানা যায়, হত্যাকারীরা প্রথমে আকাশের দিকে ফাঁকা গুলিবর্ষণ করে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে। উত্তেজনা বেড়ে গেলে কয়েক জন দরবার হলের দেয়াল, বদ্ধ দরজা-জানালা লক্ষ্য করে এলোপাথারি ব্রাশফায়ার করতে থাকে। ডিজি শাকিল ও অফিসাররা বারবার ধমক দিয়ে সৈন্যদের দরবারে ফিরে আসতে বলতে থাকেন। এর ভেতর সেনাপ্রধানের সঙ্গে ফোনে কথা হয়। এর কিছু পরেই একপশলা গুলি ছুটে আসে, কিছু গুলি নরম দেয়াল-পার্টিশন কাঁচের দরজা ভেদ করে শাকিলসহ অন্যদের দেহে বিদ্ধ হয়।
অনেকেই মাটিতে শুয়ে প্রাণে রক্ষা পান। অনেকে মঞ্চের পাশের ঢুকে গুলির হাত থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন। দরবার হল লক্ষ্য করে হাজার হাজার গুলি নিক্ষিপ্ত হলেও অধিকাংশ সেনা কর্মকর্তার গায়ে কোনো গুলি লাগেনি। হত্যাকারীরা হত্যা নিশ্চিত করতে একবারও হলে ঢোকেনি বা লক্ষ্য স্থির করে গুলি করতে দেখা যায়নি। বিডিআর এর ১৬ হাজার উচ্ছৃঙ্খল জোয়ানের গুলিবর্ষণে প্রাণ হারান বিডিআর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদসহ ৭৭ জন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা। বিদ্রোহী জওয়ানরা পিলখানার ভেতরে বসবাসরত বিডিআরের কর্মকর্তা ও তাদের পরিবার-পরিজনদের জিম্মি করে। এভাবে তারা দুদিন ধরে ভেতরে তাণ্ডব চালায় এবং নিহত সেনা অফিসারদের মৃতদেহ মাটি চাপ দেয়। পরে তারা পালিয়ে যায়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
আজিমপুরে বাসায় ডাকাতি, মালামালের সঙ্গে দুধের শিশুকেও নিয়ে গেছে ডাকাতরা
ঢাকার আজিমপুরে মেডিকেল স্টাফ কোয়ার্টারে একটি বাসায় দিনে দুপুরে ডাকাতিরবিস্তারিত পড়ুন
সুনামগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই পক্ষের সংঘর্ষ
সুনামগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়াবিস্তারিত পড়ুন
ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগে বিক্ষোভে উত্তাল প্যারিস
উয়েফা নেশন্স লিগে ফ্রান্স-ইসরায়েল ম্যাচের আগে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল হয়েবিস্তারিত পড়ুন