বিদায় ১৪২২ বঙ্গাব্দ
প্রকৃতির চলমান নিয়মেই বিদায় নিচ্ছে আরও একটি বছর। বিদায় নিচ্ছে বাংলা সন ১৪২২ বঙ্গাব্দ। পুরোনো বছরে প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তি যেমন ছিলো, ছিলো হারানোর বেদনাও। পাওয়া-না পাওয়া, আনন্দ-বেদনার সাতকাহন জীবনকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি কখনও বেদনায় নীল হয়েছে মন। কিন্তু সময়তো থেমে থাকে না। সময় চলে যায় তার নিয়মে। বর্তমান অতীত হয়, ভবিষ্যৎ হয় বর্তমান। আমরাও এগিয়ে যাই নতুনের আহ্বানে। পুরোনোর গ্লানি ঝেড়ে মুছে ওড়াতে চাই নতুনের কেতন। কালে কালে কবিরাও গেয়েছেন পুরোনোকে ফেলে নতুনের বন্দনা। বিদায় মুহূর্তের আবেগে রবীন্দ্রনাথও আলাদা নন। রবীন্দ্রনাথের ভাষায়-
পুরাতন বৎসরের জীর্ণক্লান্ত রাত্রি
ওই কেটে গেল; ওরে যাত্রী।
তোমার পথের পরে তপ্ত রৌদ্র এনেছে আহ্বান
রুদ্রের ভৈরব গান।
দূর হতে দূরে
বাজে পথ শীর্ণ তীব্র দীর্ঘতান সুরে,
যেন পথহারা
কোন বৈরাগীর একতারা।
প্রাচীনকাল থেকেই পুরোনো বছরকে বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানো মানুষের আবেগেরই বহিঃপ্রকাশ। অতীত থেকে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে যে চলমান প্রবাহমানতা, তাকে মানুষ প্রহণ করেছে। মেনে নিয়েছে। আজ সেই বিদায়কে উৎসবে রূপ দিয়েছে। মানুষ বর্ষ বিদায়ের বেদনাময় অনুষ্ঠান যেমন রূপায়িত করতে চেয়েছে, তেমনি জীবনের শুভ কামনায় জগতের অনিবার্য নিয়মে নতুনকেও অভিনন্দিত করতে সে ভোলেনি।
সুপ্রাচীনকালে মেসোপটেমিয়ায় নববর্ষ অনুষ্ঠান পালন করতো সুখ-সমৃদ্ধি ও শান্তিপূর্ণ সুন্দর ভবিষ্যতের প্রত্যাশায়। প্রার্থনা জানাতেন দেবতার কাছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই বর্ষ বিদায় এবং শুভ নববর্ষকে অভিনন্দিত করে অনুষ্ঠান পালনের রীতি চলে আসছে। কারণ মানুষের জীবনের সীমাবদ্ধতায় সভ্যতার প্রয়োজনে সূচিত হয়েছিলো আচার অনুষ্ঠানের।
বাংলা সনের শেষ মাসটির নামকরণ করা হয়েছে চৈত্রা নক্ষত্রের নামানুসারে। হিন্দু পুরাণমতে, সাতাশটি নক্ষত্র রয়েছে, যেগুলোর নামকরণ করা হয়েছে রাজা প্রজাপতি দক্ষের সুন্দরী কন্যাদের নামানুসারে। দক্ষ তার সুন্দরী কন্যাদের বিয়ে দিতে উৎকণ্ঠিত। এরপর বিধির বিধান অনুসারে চন্দ্রদেবের সঙ্গে বিয়ে হলো দক্ষের সাতাশ কন্যার। দক্ষের এক কন্যার নাম চিত্রা। তার নামানুসারে চিত্রানক্ষত্র আর চিত্রানক্ষত্র থেকে বাংলা সনের শেষ মাসটির নাম রাখা হয়েছে।
বর্ষ বিদায় এবং বর্ষ বরণের ঐতিহ্যও বাঙালির হাজার বছরের। সেই আদিকালের আচারাদির হাত ধরে এই বাংলায় চালু হয়েছেলো বর্ষ বিদায় ও বরণের আয়োজন। বছরের শেষ দিন অর্থাৎ চৈত্রের শেষ দিন ‘চৈত্র সংক্রান্তি’কে ঘিরে আবহমানকাল থেকে এই জনপদে নানা আয়োজন সাজানো হয়। কালে কালে, যুগে যুগে হৃদয় ব্যথিত করে বছর চলে গেছে। সেই কষ্ট বাঙালি ভুলেছে নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়ে। কবি নজরুল বলেছেন-
‘আমরা চলিব পশ্চাতে ফেলি পচা অতীত
গিরিগুহা ছাড়ি খোলা প্রান্তরে গাহিব গীত
সৃজিব নূতন ভবিষ্যৎ।’
তাই সুরে সুর মিলিয়ে, তালে তাল মিলিয়ে আমরাও বলবো, নতুন ভবিষ্যৎ গড়ার প্রেরণা নিয়ে আসুক ১৪২৩ বঙ্গাব্দ। বিদায় পুরনো বছর ১৪২২ বঙ্গাব্দ।
শেষ করবো রবীন্দ্রনাথের বাণী দিয়ে-
ঈশানের পুঞ্জমেঘ অন্ধবেগে ধেয়ে চলে আসে
বাধাবন্ধহারা
গ্রামান্তরে বেণুকুঞ্জে নীলাঞ্জনছায়া সঞ্চারিয়া
হানি দীর্ঘধারা।
বর্ষ হয়ে আসে শেষ, দিন হয়ে এল সমাপন,
চৈত্র অবসান—
গাহিতে চাহিছে হিয়া পুরাতন ক্লান্ত বরষের
সর্বশেষ গান।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
টসে জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ
দুই ম্যাচ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে টসে জিতে স্বাগতিক ওয়েস্টবিস্তারিত পড়ুন
রাস্তা আটকে যমুনা ফিউচার পার্কের ব্যবসায়ীদের বিক্ষোভ
যমুনা ফিউচার পার্কে মোবাইলের দোকানে চুরির প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভবিস্তারিত পড়ুন
যে ৫ দেশে যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশিদের জন্য সতর্কতা
থাইল্যান্ড, মিয়ানমার, লাওস, ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়ায় যাওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশি নাগরিকদেরবিস্তারিত পড়ুন