বিপর্যস্ত ছাত্রদল নতুন কমিটির অপেক্ষায়
বিএনপির অন্যতম সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের ৩৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আগামী রোববার। দিবসটি উপলক্ষে সংগঠনের পক্ষ থেকে নানা কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুলেল শ্রদ্ধা জানানোর পাশাপাশি আলোচনা সভারও আয়োজন করা হয়েছে।
তবে বর্তমান ছাত্রদলের এ কমিটিকে অতীতের সবচেয়ে ব্যর্থ কমিটি বলে দাবি করেছে খোদ ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাই। তাদের অভিযোগ ছাত্রদলের বর্তমান কমিটি দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাতে পারেনি। তারা শুধু গ্রুপিং, কমিটি বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ থেকেছে। দলের মধ্যে কোনো সমন্বয় তৈরি করতে পারেনি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দলের নেতাকর্মীদের সাথে পরমর্শ না করেই সবকিছু করেন। তাই তারা রাজপথে আন্দোলন, সংগ্রাম করতে পারেনি। বছরজুড়েই বিবৃবি, নিন্দা, মিলাদ মাহফিলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
আবার অনেকে অভিযোগ করে বলেন, আমরা রাজপথে থেকেও লাভ নেই। আবার অনেকে লবিংয়ের কারণে পদ পেয়ে থাকেন। কমিটি বাণিজ্য ও আত্মীয়তার কারণে ঢাকা মহানগর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্নাঙ্গ কমিটি দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। এরমধ্যে ছাত্রদল ঢাকা মহানগর উত্তরের ছয়শত দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি দেওয়া হয়েছে। অনেকের অভিযোগ কমিটি গঠনে আর্থিক লেনদেনের কারণে এত বড় কমিটি হয়েছে। ছাত্রদলের কমিটির আকার বড় হলেও রাজপথে কিছু সংখ্যক নেতাকর্মী দেখা যায়।
এদিকে সংগঠনটির মেয়াদোত্তীর্ণ বর্তমান কমিটি ভেঙে নতুন কমিটি গঠনের দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠছে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে কয়েকটি সভাও করেছে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা। এমনিকি ছাত্রদলের দফতর সম্পাদক আব্দুস সাত্তার পাটোয়ারীকে দপ্তর থেকে বের করে দিয়েছে। অনেকের অভিযোগ বিভিন্ন ইস্যুতে কেন্দ্র ঘোষিত বিক্ষোভ মিছিলে অনেকে অংশ না নিয়েও ছাত্রদলের দফতরের কল্যাণে মিডিয়া নাম চলে আসে। এতে যারা আন্দোলনে রাজপথে থাকে তারা আগ্রাহ হারিয়ে ফেলেছে।
সংগঠনটির নেতাকর্মীরা জানান, বিএনপির মতো ঝিমিয়ে রয়েছে রাজপথের আন্দোলন ভ্যানগার্ড আর নেতৃত্ব তৈরির সূতিকাগার জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। দলটির গুরত্বপূর্ণ এ সহযোগী সংগঠনটির মেয়াদও শেষ হয়েছে প্রায় দুই মাস আগে। কিন্তু কবে-কিভাবে নেতৃত্ব বাছাই করা হবে, নতুন কমিটি গঠন করা হবে তা নিয়ে পুরো অন্ধকারে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা। এদিকে নতুন কমিটি গঠন করা হবে এমন প্রত্যাশায় নিজেদের পাল্লা ভারি করে শোডাউন-মিছিল মিটিং-এ অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দিয়েছেন পদ প্রত্যাশী নেতৃবৃন্দ।
পদপদবী প্রত্যাশি নেতৃবৃন্দের মধ্যে আবার অনেকে রয়েছেন মৌসুমি নেতা। যারা আন্দোলন কিংবা সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ না করেও শীর্ষ পদ পেতে লবিং-তদবির শুরু করেছেন পুরোদমে। তাদের দেখাদেখি রাজপথের নেতারাও নিজেদের প্রাপ্যতা বুঝে নিতে সরব হয়ে উঠেছেন। নিজেদের আমলনামার ফর্দ তৈরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন নেতাদের দ্বারে-দ্বারে। তবে পদ-পদবীর প্রাপ্তিতে এখনো তারা সন্দিহান। কোট-টাই পড়া ফেসবুক নির্ভর নেতারাই আবার দায়িত্ব পাচ্ছেন, নাকি নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে দল ও জিয়া পরিবারের নির্দেশনায় রাজপথে লড়াই করেছেন তারা নেতৃত্ব পাচ্ছেন তা নিয়েই চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
ছাত্রদল নেতাকর্মীরা জানান, দুই বছর মেয়াদী ছাত্রদলের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে ১৪ অক্টোবর। ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর রাজীব আহসানকে সভাপতি ও মো. আকরামুল হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি ৭৩৪ জন সদস্যকে নিয়ে ওই কমিটি পূর্ণাঙ্গ রূপ পায়। কিন্তু ২০১৫ সালের সরকারবিরোধী আন্দোলনে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ১৫৩ সদস্যের মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ২৫ জন ছাত্রনেতা সক্রিয় ছিলেন। এর বাইরে পদ-পদবী বিহীন অনেক ছাত্রনেতার ভূমিকাও ছিলো উল্লেখ্যযোগ্য। আর ৭৩৪ জনের মধ্যেও ওই কয়েকজন ছাড়া বাকিরা রয়ে গেছেন আড়ালেই। তবে নেতৃত্বে প্রতিযোগিতায় তারাও দাবিদার হয়ে মাঠে সরব হয়ে উঠেছেন।
ছাত্রদল কমিটির গঠনের সাথে জড়িত এমন একজন জানান, এবারের মতো এত নেতৃত্ব প্রতিযোগিতা আগে কখনো ছিল না। যে ছাত্রটি মেধায়, দক্ষতায় কর্মী হবারও যোগ্যতা রাখেন না সেও এবার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক কিংবা সুপার ফাইভে থাকতে চাচ্ছেন। একটি রাজনৈতিক দলে নেতৃত্ব প্রতিযোগিতা ভালো। কিন্তু যার যোগ্যতা নাই, রাজনৈতিক দক্ষতা নাই সে কিভাবে নেতা হবে।
ছাত্রদলের সভাপতি পদপ্রত্যাশী একজন ছাত্রনেতা জানান, বর্তমান কমিটি ২০১৫ সালের আন্দোলনে সফলতার দাবিদার হলেও সাংগঠনিকভাবে ব্যর্থ। এর মধ্যে ক্লিন ইমেজের সভাপতি রাজিব আহসান নতুন কমিটি গঠনের ব্যাপারে প্রত্যয়ী। সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান আগামী জাতীয় নির্বাচনে নরসিংদি জেলা থেকে নির্বাচন করার যাবতীয় প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন। ওই দুজন ছাড়াও সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন আর রশিদ কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য হওয়ায় ছাত্র রাজনীতি অসাধ্য হতে পারে। তাই নেতৃত্ব প্রতিযোগিতায় তারা তেমন না থাকলেও অন্যরা পিছিয়ে নাই।
আরেকজন ছাত্রনেতা বলেন, বিএনপির মধ্যে একমাত্র ছাত্রদলের কমিটি গঠনের সময় ঘনিয়ে আসলেই সিনিয়র-জুনিয়র, বিবাহিত-অবিবাহিত, সংস্কারপন্থি আর আঞ্চলিকতার অজুহাত সামনে তুলে আনেন এক শ্রেণির তল্পীবাহক। তারা নিজেদের আজ্ঞাবাহ কমিটি গঠনের জন্যই সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের খোলস পরিবর্তন করেন। আর ওই সকল যুক্তি সামনে তুলে এনে যোগ্যদেরকে আড়াল করে দেন।
আগামী কমিটিতে শীর্ষ পদে যারা বেশি আলোচনায় আছেন তারা হলেন, আলমগীর হাসান সোহান, নাজমুল হাসান, ইখতিয়ার রহমান কবির, আবু আতিক আল হাসান মিন্টু , ইসহাক সরকার, মিয়া রাসেল, মেহবুব মাসুম শান্ত, আবদুর রহিম হাওলাদার সেতু, বায়েজিদ আরেফিন, কাজী মোকতার হোসেন, মির্জা ইয়াসিন আলি, সৈয়দ মাহমুদ, আসাদুজ্জামান মিয়া প্রমুখ। এরা সবাই নিজেদের মতো করে সিনিয়র নেতাদের কাছে গিয়ে লবিং-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন