বিশ্বকাপজয়ী শর্মা এখন পুলিশের ডিএসপি
২০০৭ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আসর কারো ভুলে যাবার কথা নয়। পাকিস্তান-ভারতের ফাইনাল ম্যাচ দিয়ে বিশ্বকাপের পর্দা নেমেছিল। রোমাঞ্চকর ফাইনাল ম্যাচটি পেন্ডুলামের মত ভারত-পাকিস্তানের দিকে দুলতে থাকে। তবে শেষপর্যন্ত স্বপ্নের শিরোপা জিতেছিল ভারত।
শেষ ওভারে লড়াইটি ছিল পাকিস্তানের মিসবাহ-উল-হক ও ভারতের যোগিন্দর শর্মার। প্রয়োজন ৬ বলে ১২। ২০১০ এর বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান সঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু ভাগ্যদেবী সঙ্গে না থাকায় ২০০৭ এর শিরোপা পায়নি আফ্রিদি-মালিকরা। ৫ রানে জয় পায় ভারত। আর সেই মহারণে খলনায়ক থেকে নায়ক বনে যান পেসার যোগিন্দর শর্মা।
মিসবাহকে আউট করে ডানহাতি এ পেসার ভারতকে ২০ বছর পর বৈশ্বিক কোনো শিরোপার স্বাদ দেন। মাহেন্দ্র সিং ধোনির হাতে তুলে দেন টি-টোয়েন্টির প্রথম শিরোপা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের প্রথম নায়ক যোগিন্দর শর্মা কোথায় আছেন? ক্রিকেট ছেড়ে তিনি এখন কি করছেন? ভারতে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ কাভার করতে এসে যোগিন্দর শর্মার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রাইজিংবিডি’র ক্রীড়া প্রতিবেদক ইয়াসিন হাসান। তারই চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল:
প্রশ্ন: কেমন আছেন? কি নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
যোগিন্দর শর্মা: খুব ভালো আছি। ব্যস্ত আছি নিজের চাকরি নিয়ে। ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পর চাকরি করেই তো দিন পার করছি।
প্রশ্ন: কিসের চাকরি করছেন যেন?
যোগিন্দর শর্মা: চাকরি বলতে বিশ্বকাপ জয়ের পর ২০০৭ সালের অক্টোবরে হরিয়ানা পুলিশ আমাকে ডেপুটি পুলিশ সুপার (ডিএসপি) পদে নিয়োগ দেয়। সেটা সম্মানসূচক থাকলেও ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার পর আমি পূর্ণ পদে যোগদান করি।
প্রশ্ন: আপনাকে তো হরিয়ানা সরকার থেকেও সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল?
যোগিন্দর শর্মা: ভারতের জয়ে অবদান রাখার জন্যে পুরস্কার হিসেবে ২১ লক্ষ টাকা দিয়েছিল হরিয়ানা সরকার।
প্রশ্ন: পুলিশ কর্মকর্তার জীবন কতটুকু উপভোগ করছেন?
যোগিন্দর শর্মা: ক্রিকেট যেমন মন থেকে ভালোবেসে খেলেছি; পুলিশ কর্মকর্তা হয়েও সেই একই কাজ করছি। মন থেকে ভালোবেসে কাজটি করছি। যেহেতু আমাকে সম্মান দিয়ে এখানে বসানো হয়েছে তাই আমার দায়িত্বটা খানিকটা বেশি। সব মিলিয়ে ভালোই আছি। বলতে পারেন এটা আমার জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস। যেটা আমি খুব উপভোগ করছি।
প্রশ্ন: ক্রিকেটের থেকেও বেশি কি এখনকার জীবনটাকে উপভোগ করছেন?
যোগিন্দর শর্মা: না সেটার সুযোগ নেই। কারণ ক্রিকেট ছিল আমার জীবনের ভালোবাসা। মন দিয়ে উজাড় করে খেলতাম। ওটা ছেড়ে দেওয়ার পর এখন পুলিশের চাকরি করছি। এখন যে চাকরিতে কম কিছু দিচ্ছি তা নয়। এখানো রাত-দিন পরিশ্রম করি। কিন্তু ক্রিকেট ছিল আমার জীবনে বিশেষ কিছু।
প্রশ্ন: ক্রিকেট থেকে সরে আসলেন কেন?
যোগিন্দর শর্মা: ২০১১ সালের নভেম্বরে সাউদ দিল্লীর দোয়ারকাতে ভয়াবহ গাড়ী দূর্ঘটনার শিকার হই আমি। ওই সড়ক দূর্ঘটনা আমার ক্যারিয়ার শেষ করে দেয়। আমি হাসপাতালে ছিলাম প্রায় ১০-১২ দিন। ৩-৪ দিনের মত ছিলাম আইসিইউতে। প্রায় চার মাস আমি বিছানায় পড়ে ছিলাম।
প্রশ্ন: তারপরও আপনি ক্রিকেটে ফিরেছিলেন?
যোগিন্দর শর্মা: হ্যাঁ প্রায় নয় মাস পর আমি ফিজিওর সঙ্গে দেখা করি। চার-পাঁচ মাসের মত তার তত্বাবধায়নে কাজ করার পর আমি ক্রিকেটে ফিরে আসি। ২০১৩ সালের অক্টোবরে হরিয়ানার হয়ে রঞ্জি ট্রফি খেলেছি। সে বছরই মুম্বাইকে প্রথমবারের মত রঞ্চি ট্রফি জয় করে হরিয়ানা। যতটুকু মনে পড়ছে ফাইনালে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলাম।
প্রশ্ন: টিম ইন্ডিয়াকে মিস করেন?
যোগিন্দর শর্মা: মিস না করার কোনো কারণ নেই। যতদিন ক্রিকেট খেলেছি ততদিন টিম ইন্ডিয়া ছিল আমার পরিবার। ধোনি,যুবরাজ,রায়নাদের সঙ্গেই তো অনেক ক্রিকেট খেলেছি। তাদের খেলতে দেখে এখানো খেলতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কিছু তো করার নেই।
প্রশ্ন: আগে তো বল হাতে বাউন্স দিতেন, ইয়র্কারও দিতেন। এখন ক্রিমিনালদেরও কি এভাবে হ্যান্ডেল করে থাকেন?
যোগিন্দর শর্মা: খুব মজা পেলাম। ক্রিমিনালদের হ্যান্ডেল করার কাজটা বাইরে থেকে মনে হতে পারে অনেক সহজ। কিন্তু ভিতরে আসলে বোঝা যায় কতটা কঠিন। আপনাকে প্রতিটি মুহুর্তে সজাগ থাকতে হবে। মানুষের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে হবে। আপনার উপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু।
প্রশ্ন: ২০০৭ বিশ্বকাপের ফাইনাল ওভারের কথা কি মনে আছে?
যোগিন্দর শর্মা: হ্যাঁ মনে থাকবে না কেন। আমার জীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহুর্ত সেটি। কত কিছুই না মনে পরে আজও।
প্রশ্ন: স্মৃতির খাতা খুলে কিছু শেয়ার করবেন?
যোগিন্দর শর্মা: মনে তো পড়ে কত কিছুই। শেষ ওভার, আমাদের বাঁচা-মরার লড়াই। মিসবাহ-উল-হক তো তখন পুরো মারমুখী। শুরুতেই আমার বলে ছয় মেরে সব হিসেব ওলট-পালট করে দিল। এরপরই তো নাটকীয় সেই মুহুর্ত। আমি বল করলাম। ও পিছনে মারতে গিয়ে শ্রীশান্তের হাতে ক্যাচ দিল। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলাম। প্রথম আসরেই ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করাতে পেরেছি সেটা ভেবে যে কি ভালো লেগেছিল তা কল্পনাও করতে পারবেন না।
প্রশ্ন: যতটুকু শুনেছি ফাইনাল ওভারটি করার জন্যে অধিনায়কের থেকে আপনি বল কেড়ে নিয়েছিলেন?
যোগিন্দর শর্মা: হ্যাঁ অনেকটাই সত্য কথা। আমি শেষ ওভার করব সেটা আগেই বলে রেখেছিলাম। হিসেব করেই অধিনায়ক আমাকে বল দিয়েছিল। ততটুকুই।
প্রশ্ন: বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। ফাইনাল ওভার করতে হবে এটা ভেবেই অনেকের অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। সে জায়গায় আপনি নিজ থেকে বল করতে চাইলেন?
যোগিন্দর শর্মা: ঘরোয়া ক্রিকেটে সব সময় ফিনিশিং করতাম বলে ওই আত্মবিশ্বাস আমার আগের থেকেই ছিল। হয়ত বিশ্বকাপে করেছি বলে এখন অনেক হাইলাইট পাচ্ছি। তবে সত্যি বলতে ওই ওভারের থেকেও অনেক ভালো ওভার আমি আমার ক্যারিয়ারে করেছি।
প্রশ্ন: ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর পর তো জীবন পাল্টে যায়?
যোগিন্দর শর্মা: হ্যাঁ জীবন তো পাল্টে যায়। জীবনে অনেক পরিবর্তন চলে আসে।
প্রশ্ন: এবারের টুর্নামেন্টে টিম ইন্ডিয়ার থেকে আপনার প্রত্যাশা কি?
যোগিন্দর শর্মা: ভারত তো বেশ ভালো খেলেই সেমিফাইনালে উঠল। আশা করছি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বেশ ভালো খেলবে। আমরা আবারো ফাইনালের পথেই এগিয়ে যাচ্ছি। এবার ঘরের মাটিতে ফাইনাল জিততে পারব। তবে দল হিসেবে ওয়েস্ট ইন্ডিজও খারাপ নয়। ক্রিস গেইল তো আছেই। তাকে তো কোনো ভাবেই আলাদা করা যাবে না। যে কোনো সময় যেকোনো মুহুর্তে খেলা পাল্টে দিতে সক্ষম গেইল।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
নারী ফুটবল দলের বেতন বকেয়া, দ্রুত সমাধানের আশ্বাস
টানা দ্বিতীয়বার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেবিস্তারিত পড়ুন
প্রোটিয়াদের রানের পাহাড়, টাইগাররা নামতেই বদলে গেল পিচের ধরন!
চট্টগ্রাম টেস্টে প্রথম ৫ সেশনেরও বেশি সময় ব্যাটিং করেছে দক্ষিণবিস্তারিত পড়ুন
নেপালকে হারিয়ে সাফ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে স্বাগতিকদের ২-১ গোলে হারিয়ে সাফবিস্তারিত পড়ুন