বিশ্বব্যাপী ঝড় তোলা আয়লানের চেয়েও মর্মান্তিক মৃত্যু বাংলাদেশি শিশু ইউসুফের!

গ্রিক উপকূলে গত সেপ্টেম্বরে উদ্ধার হওয়া নিষ্প্রাণ আয়লানের কথা মনে আছে? ভয়ংকর সাগর যাত্রা নিয়ে সারা বিশ্বের ঘুম ভাঙানো সেই সিরীয় শিশু! এরই সপ্তাহখানেক আগে আগস্টে প্রায় অভিন্ন ঘটনার শিকার হয়েছিল ছয় বছর বয়সী বাংলাদেশি শিশু ইউসুফ। আয়লানের নিথর মরদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও গত বছরের ২৭ আগস্ট রাতে ভূমধ্যসাগরে ভেসে গেছে ইউসুফ এবং তার মা ও বাবার মরদেহ। তারা সবাই প্রতিকূল পরিবেশ ও অবৈধ অভিবাসনের শিকার। ডুবে যাওয়া একই নৌকায় থাকা বাংলাদেশি রহমান আলী (২২) উদ্ধার হওয়ার পর তাঁর ভাই ইউসুফ এবং মা-বাবা হারানোর যে বিবরণ দিয়েছেন তা যেন আয়লানের চেয়েও মর্মান্তিক।
সেদিন যাত্রা শুরুর সময় নৌকার আকার দেখে নিমেষেই সব উচ্ছ্বাস উধাও হয়েছিল ভাগ্যতাড়িত কয়েক শ অভিবাসীর। লিবিয়ার জোয়ারা উপকূল থেকে মাত্র দুই কিলোমিটার দূরের জলসীমায় দালালচক্রের একচ্ছত্র শাসন। পা ফেলার জায়গা নেই, তবু সবাইকে পিটিয়ে তোলা হয় ছোট্ট কাঠের নৌকায়। কষ্টের কথা বলতেই নেমে আসে নির্যাতনের খড়্গ। ইতালির উদ্দেশে যাত্রা শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই গভীর সাগরে নৌকাটি ডুবে যায়। এরপর শুরু রাতের আঁধারে হাতে গোনা কয়েকটি লাইফ জ্যাকেট কাড়াকাড়ি করে কয়েক শ অভিবাসীর বেঁচে থাকার লড়াই; সহযাত্রীর মরদেহ ধরে ভেসে থাকা কিংবা অন্য যাত্রীর লাইফ জ্যাকেট খুলে নিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা। রহমান আলী সেই লড়াইয়ে বেঁচে গেলেও ওই অভিশপ্ত রাতে সাগরে হারিয়েছেন তাঁর মা, বাবা ও আদরের ছোট ভাই ইউসুফকে। লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাদের কাছে বলা সেসব ঘটনা যেন একেকটি মর্মান্তিক শোকগাথা। কম্পিউটারের কাজ জানা ও বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া রহমানের অবশেষে ঠাঁই হয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাসে। তাঁর মতো আরো অনেক বাংলাদেশি সপরিবারে গত কয়েক বছরে লিবিয়া ছেড়ে ইতালি বা ইউরোপে যাওয়ার চেষ্টা করেছে। তাদের সবাই সফল হয়নি। পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠদের মতো অনেক আয়লান, অনেক ইউসুফ ভূমধ্যসাগরে ডুবে হারিয়ে গেছে চিরদিনের জন্য।
সুন্দর জীবনের আশায় ভয়ংকরতম ফাঁদে : ইউসুফের ভাই রহমান আলী জানান, ১৭ বছর (১৯৯৭ থেকে ২০১৫ সাল) ধরে লিবিয়ায় থাকলেও এত অনিশ্চয়তায় আগে কখনো পড়েননি তিনি। ২০১১ সালে যুদ্ধের পর থেকে বন্ধ হয়ে গেছে বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া। সিরত শহরে কাজের সুযোগ কমেছে। আইএস এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ায় ভর করেছে নানা শঙ্কা। প্রতিবেশীদের অনেকেই লিবিয়া ছেড়ে ইতালি যাচ্ছে। পরিচিত এক পাকিস্তানি পরিবারও ইউরোপ পৌঁছে ফোনে রহমান আলীর বাবাকে ইতালি ও জার্মানির সুযোগ-সুবিধার কথা জানায়। এ প্রেক্ষাপটে জনপ্রতি এক হাজার ১০০ দিনার (প্রায় ৬৩ হাজার টাকা) খরচে দালালের ব্যবস্থাপনায় ইতালি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন তিনি এবং মা-বাবা, বোন খাদিজা (১২), ভাই শাহনেওয়াজ (১৬) ও ইউসুফ (৬)।
শুরুতেই ধাক্কা ত্রিপোলিতে : কথা ছিল, ত্রিপোলি পৌঁছার দুই দিনের মধ্যে জোয়ারায় নিয়ে যাওয়া হবে রহমান আলীদের। এরপর তারা চড়বে ইতালিগামী নৌকায়। দালালদের সঙ্গে কথা বলে নির্ধারিত দিনে সব কিছু গুছিয়ে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারা ত্রিপোলিতে পৌঁছায় ঠিকই, কিন্তু আবহাওয়া খারাপসহ নানা টালবাহানায় যাত্রার দিন এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয় দালালরা। ত্রিপোলিতে ছোট্ট দুই কক্ষের এক বাসায় তাদেরসহ মোট ৫৫ জনকে রাখা হয়।
দুঃস্বপ্নের সেই দিন : একবার সাগরের তীরে নিয়ে তাদের আবার ফিরিয়ে আনে দালালচক্র। এভাবে আরো প্রায় এক মাস প্রতীক্ষার পর আসে সেই দিন। গত বছরের ২৭ আগস্ট দিনটিকে এখন নিজের জীবনের সবচেয়ে দুঃস্বপ্নময় দিন বলে মনে করেন রহমান আলী। তাঁর ভাষ্য, ‘জানানো হলো, বিকেলের মধ্যে আমাদের সাগরের তীরে নিয়ে গিয়ে ওই রাতেই নৌকায় তোলা হবে। নির্দিষ্ট সময়ের কিছুক্ষণ পর একটি ট্রাকে করে আমাদের সাগরতীরের একটি বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলো। সেখানে গিয়ে দেখলাম, আমাদের মতো আর পাঁচ থেকে ছয় শ জনকে সেখানে নিয়ে আসা হয়েছে ইতালি পাঠানোর
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

সিলেটে মোহসিন আহমেদ চৌধুরীর বাসভবনে হামলা ও ডাকাতি
নিজস্ব সংবাদদাতাঃ আওয়ামী লীগ নেতা মোহসিন আহমেদ চৌধুরীর সিলেট শহরেরবিস্তারিত পড়ুন

রাবিতে অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনের দাবিতে বিক্ষোভ
রাবি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন নির্বাচনের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বর্তমান ওবিস্তারিত পড়ুন

ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন