বিশ্বের ভয়াবহ ১০ ভূমিকম্প
ভূমিকম্পের আগাম খবর মানুষ জানতে পারে না, আর এ কারণেই এই প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ হয় বেশি। অপরিকল্পিত নগরায়ণের কারণেও এই ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বেড়ে যায়। বাংলাদেশসহ পুরো বিশ্বেই ইদানীং ভূমিকম্পের ঘটনা বারবার ঘটছে। ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান মাত্রার বিচারে বিশ্বের শীর্ষ ১০ ভূমিকম্পের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। নিচে দেওয়া হলো সেসব বড় ভূমিকম্পের কথা :
১. চিলি, ২২ মে ১৯৬০ : মাত্রা—৯ দশমিক ৫
এটাকেই এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় মাত্রার ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে ৯ দশমিক ৫ মাত্রার এই ভূমিকম্পে চিলিতে মারা গিয়েছিল চার হাজার ৪৮৫ মানুষ। আহত হয়েছিল ২০ লাখের বেশি। ১৯৬০ সালে লাতিন আমেরিকার দেশ চিলির দক্ষিণাঞ্চলে এই শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছিল। এই ভূমিকম্পে পুয়ের্তো সাভেদ্রা নামে একটি সমুদ্রবন্দর পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এই ভূমিকম্পের ফলে সাগরে সুনামির সৃষ্টি হয়। সুনামিতে সৃষ্ট ঢেউয়ের কবলে পড়ে ফিলিপাইন ও জাপানে মারা গিয়েছিল আরো ১৭০ জন।
২. প্রিন্স উইলিয়াম সাউন্ড, আলাস্কা, ২৪ মার্চ ১৯৬৪ : মাত্রা—৯ দশমিক ২
এই ভূমিকম্পের ফলে আলাস্কায় ভয়ংকর ভূমিধসের সৃষ্টি হয়েছিল। এতে সাগরে সুনামিরও সৃষ্টি হয়। মৃতের সংখ্যা ছিল ১২৮ জন আর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল ৩১ কোটি ১০ লাখ মার্কিন ডলার।
৩. উত্তর সুমাত্রার পশ্চিম উপকূল, ২৬ ডিসেম্বর ২০০৪ : মাত্রা—৯ দশমিক ১
ভূমিকম্পের সঙ্গে সমুদ্রপৃষ্ঠের পানির উচ্চতা বেড়ে যাওয়ার একটা সম্পর্ক রয়েছে, এটাই সুনামি নামে পরিচিত। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী সুনামি বলা হয় ২০০৪ সালে, একটি ৯ দশমিক ১ মাত্রার ভূমিকম্পের পর। এশিয়া ও পূর্ব আফ্রিকার ১৪টি দেশে অনুভূত হয়েছিল এই ভূমিকম্প ও সুনামি। এই সুনামিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল ইন্দোনেশিয়া; এক লাখ ৭০ হাজার মানুষ এতে প্রাণ হারায়। অনেক মৃতদেহই উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। মৃতের সংখ্যা নিরূপণ করতে কয়েক মাস সময় লেগে যায়। ইন্দোনেশিয়ার মৎস্য শিল্প ও কারখানার প্রায় ৬০ শতাংশ পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায় এই সুনামিতে।
৪. কামচাটকা, ৪ নভেম্বর ১৯৫২ : মাত্রা—৯
রাশিয়ার দূরপ্রাচ্যে আঘাত হেনেছিল শক্তিশালী এই ভূমিকম্প। এর ফলে প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্টি হয়েছিল সুনামি। কামচাটকা উপদ্বীপ ছিল এই ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল। তিন হাজার মাইলজুড়ে অনুভূত হয়েছিল এই ভূকম্পন, যা রাশিয়ার দূরপ্রাচ্য ও হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জে অনুভূত হয়েছিল। তবে এই ভূমিকম্পে হতাহতের কোনো ঘটনা ঘটেনি। পেরু ও চিলিতেও আঘাত হেনেছিল এই ভূমিকম্প।
৫. আরিকা, পেরু (বর্তমান চিলি), ১৩ আগস্ট ১৮৬৮ : মাত্রা—৯
প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট এই ভূকম্পন হাওয়াই দ্বীপপুঞ্জ পর্যন্ত অনুভূত হয়েছিল। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল দক্ষিণ আমেরিকার আরেকুইপা শহর। সেখানে মারা যায় ২৫ হাজার মানুষ। বলিভিয়ার লা পাজ শহরেও অনুভূত হয়েছিল ভূকম্পন। প্রথম আঘাত হানার চার ঘণ্টা পর ভূমিকম্পটির আফটার শক আঘাত হানে সমুদ্রে। এতে ১৬ মিটার উঁচু ঢেউ আছড়ে পড়েছিল সৈকতে।
৬. যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূল, ২৬ জানুয়ারি ১৭০০ : মাত্রা—৯ (আনুমানিক)
অনেক আগের এই ভূমিকম্পের কোনো দালিলিক প্রমাণ না থাকলেও উত্তর আমেরিকার বাসিন্দারা মুখে মুখে শুনেছেন এই ভূমিকম্প এবং তার ক্ষয়ক্ষতির কথা। উত্তর আমেরিকা মহাদেশের অন্যতম ভয়াবহ ভূমিকম্প মনে করা হয় এটিকে। ভ্যাঙ্কুভার দ্বীপের পাচেনা উপকূলে বসবাস করা জনগোষ্ঠী সুনামিতে সৃষ্ট ঢেউয়ের কারণে তলিয়ে গিয়েছিল।
৭. চিলি, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১০ : মাত্রা—৮ দশমিক ৮
সপ্তদশ শতক থেকেই চিলিতে ছোট-বড় ভূমিকম্প অনুভূত হয়ে আসছে। ২০১০ সালের এই ভূমিকম্পে প্রাণ হারান ৫২১ জন মানুষ। আহত হন অন্তত ১২ হাজার। আট লাখ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েন।
৮. ইকুয়েডরের উপকূল, ১৩ জানুয়ারি ১৯০৬ : মাত্রা—৮ দশমিক ৮
ইকুয়েডর ও কলম্বিয়ার সমুদ্র উপকূলে সৃষ্ট এই সুনামিতে মারা যায় পাঁচ শতাধিক মানুষ। আহত হয় আরো দেড় হাজার। মধ্য আমেরিকা ও সানফ্রান্সিসকোতেও অনুভূত হয় এই ভূমিকম্প। ভূমিকম্পের প্রভাবে হাওয়াইয়ের নদীগুলো প্লাবিত হয়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছিল।
৯. লিসবন, ১ নভেম্বর ১৭৫৫ : মাত্রা—৮ দশমিক ৭
পর্তুগালের রাজধানী লিসবনে আঘাত হানা শক্তিশালী এই ভূমিকম্পে শহরের প্রায় অর্ধেক মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। ভূকম্পনের ফলে সৃষ্ট সুনামি এবং অগ্নিকাণ্ড পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ করে তোলে। উত্তর আমেরিকা, ফ্রান্স ও উত্তর ইতালিতে অনুভূত হয়েছিল এই ভূমিকম্প।
১০. আসাম-তিব্বত, ১৫ আগস্ট ১৯৫০ : মাত্রা—৮ দশমিক ৬
ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে আসাম-তিব্বতের ৭০টি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ভারতের আসাম প্রদেশ। এতে মারা যায় এক হাজার ৫২৬ জন মানুষ। ভূমিকম্পের পরে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন