বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস, যক্ষ্মা থামান এখনই
যক্ষ্মা আমাদের দেশের বেশ পরিচিত রোগ। যক্ষ্মা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের তালিকা করা হয়েছে। এ তালিকায় ২২টি দেশকে বিশেষভাবে চিহ্নিত করা হয়েছে। তালিকায় বাংলাদেশ তার অবস্থান জানান দিয়েছে বেশ ভালোভাবেই। বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রায় এক লাখ ৫০ হাজার ব্যক্তি নতুন করে যক্ষ্মায় আক্রান্ত হন। প্রতিবছর মারা যান প্রায় ৭০ হাজার। কাজেই যক্ষ্মা আমাদের দেশের জন্য কতটা অভিশাপ, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য প্রতিবছর বিশ্বব্যাপী বিশ্ব যক্ষ্মা দিবস পালন করা হয়। এ বছর মার্চের ২৪ তারিখ এ দিবস পালন করা হচ্ছে।
যক্ষ্মা একটি খুব পুরোনো রোগ। এটি ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে। এই ব্যাকটেরিয়ার নাম মাইকোব্যাকটেরিয়াম টিউবারকিউলোসিস। এটি যক্ষ্মা আক্রান্ত ব্যক্তির কফ, হাঁচি, কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি হাসি, কথা বলার মাধ্যমেও এ জীবাণু বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। পরে এ জীবাণু শ্বাসের মাধ্যমে অন্য ব্যক্তির ফুসফুসে প্রবেশ করে।
জীবাণু ফুসফুসে প্রবেশ করলেই কিন্তু রোগ হয় না। জীবাণু শরীরে প্রবেশ করার পর ওই ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা যদি ঠিক থাকে, তাহলে যক্ষ্মা রোগ সাধারণত হয় না। এ অবস্থায় জীবাণু দীর্ঘদিন বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলেই সমস্যা। দেখা দিতে পারে যক্ষ্মা। তাই বেশি বয়সী, পাঁচ বছরের কম বয়সী, ডায়াবেটিস আক্রান্ত, কিডনি রোগাক্রান্ত, ক্যানসারে ভোগা ব্যক্তি, এইডসে আক্রান্ত, স্টেরয়েড সেবনকারীরা সাবধান। তবে অনেকের শরীরে জীবাণু প্রবেশ করার পর যক্ষ্মা দেখা দিতে পারে।
যদি কাশি তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে হয়, জ্বর তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে চলে, অ্যান্টিবায়োটিক সেবন করার পরও ভালো না হয়, যদি জ্বর সন্ধ্যার দিকে বাড়ে, ওজন কমতে থাকে, কাশির সঙ্গে রক্ত আসে, তাহলে যক্ষ্মা হতে পারে বলে ভাবা হয়। অনেক সময় শরীরে গলায় বা বগলে গোটা দেখা দিতে পারে। যক্ষ্মা আক্রান্ত কারো সংস্পর্শে এলে যক্ষ্মা হওয়ার আশঙ্কা বেশি হয়।
যদি ওপরের লক্ষণ দেখা দেয়, তবে দেরি না করে চিকিৎসককে দেখান। তিনি প্রয়োজনমতো পরীক্ষা করে সঠিক রোগ নির্ণয় করবেন।
যক্ষ্মা সন্দেহ করলে কফ পরীক্ষা করা হয়। দুবার কফ দিতে হয়। এ ছাড়া রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। হাতে একটি ইনজেকশন দিয়ে পরীক্ষা করতে হয়। বুকের এক্স-রেও করতে হবে। এ ছাড়া আরো অনেক পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।
যক্ষ্মা ধরা পড়লে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। যক্ষ্মার অনেক ভালো চিকিৎসা আছে। এ চিকিৎসায় কোনো খরচ হয় না। সরকারিভাবে ব্যয় বহন করা হয়। সরকারি যেকোনো হাসপাতালে এর ওষুধ পাওয়া যায়। প্রতিদিন এ ওষুধ সেবন করতে হয়। স্বাস্থ্যকর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে ওষুধ সরবরাহ করেন। ছয় মাস ধরে ওষুধ সেবন করতে হয়। ওষুধ সেবন করলে যক্ষ্মা পুরোপুরি ভালো হয়।
যক্ষ্মার ওষুধ সেবনের পর রোগীরা বেশ ভালো অনুভব করেন; জ্বর, কাশি ভালো হয়। ওজন বাড়তে থাকে ও খাবারে রুচি আসে। এতে অনেকে মনে করেন, তিনি সুস্থ হয়েছেন। ওষুধ সেবন বন্ধ করে দেন। এতেই ঘটে বিপত্তি। রোগ তো ভালো হয় না, উল্টো জীবাণু ওষুধের প্রতি রেজিস্টেন্ট হয়ে যায়। মানে ওষুধ আর কাজ করে না। ব্যাপারটা দাঁড়াল, যে রোগের সহজেই চিকিৎসা করা যেত, তা অপ্রতিরোধ্য হয়ে গেল।
এটি দেশের জন্য একটা বড় সমস্যা। কারণ, যক্ষ্মা একবার রেজিস্টেন্ট হয়ে চিকিৎসা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। একে বলে ড্রাগ রেজিস্টেন্ট যক্ষ্মা। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসা করতে হয় আরো বেশি সময় ধরে ও হাসপাতালে ভর্তি থেকে। এ ক্ষেত্রে মারা যাওয়ার হার আনেক বাড়ে। আমাদের দেশে কিন্তু দিন দিন এ যক্ষ্মা আক্রান্তের হার বাড়ছে। বর্তমানে ২ দশমিক ২ শতাংশ নতুন যক্ষ্মা রোগী শুরুতেই ড্রাগ রেজিস্টেন্ট হচ্ছে আর পুরানদের মধ্যে ১৭ শতাংশ, যা খুবই বিপজ্জনক। তাই ওষুধ সেবনে সাবধান। ওষুধ সেবন কোনোভাবেই বাদ দেবেন না।
আর একটা ব্যাপারে না বললেই নয়। অনেকে মনে করেন, শিশুদের যক্ষ্মা হয় না। এটা একেবারেই ভুল কথা। আমাদের দেশে শিশু যক্ষ্মা নিয়ে চিকিৎসকদের ধারণা কম, অন্যদের তো নেই বললেই চলে।
শিশু যক্ষ্মা নিয়ে সচেতনতা খুবই কম। যক্ষ্মাপ্রবণ দেশে মোট রোগীর কিন্তু শতকরা ২৫ ভাগ শিশু। তাই কোনো শিশুর জ্বর ও কাশি অ্যান্টিবায়োটিক সেবনের পর তিন সপ্তাহ থাকলে, ওজন না বাড়লে, ক্ষুধামন্দা দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসককে দেখান।
লেখক : মেডিকেল অফিসার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন
জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন