শনিবার, নভেম্বর ২৩, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

বুদ্ধিজীবী হত্যায় ফাঁসি বহাল মুজাহিদের

জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যার অভিযোগে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের ফাঁসি বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। ট্রাইব্যুনাল দুটি অভিযোগে এই বদর কমান্ডারকে ফাঁসির আদেশ দিয়েছিলেন। প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের চার বিচারপতির বেঞ্চ মঙ্গলবার একটিতে মুজাহিদের ফাঁসি বহাল রাখেন। বেঞ্চের অপর তিন বিচারপতি ছিলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

এটি হচ্ছে যুদ্ধাপরাধ বিচারের চতুর্থ চূড়ান্ত রায়। এ রায়টিই প্রথম আপিল বিভাগ ঐকমত্যের ভিত্তিতে দিলেন। বাকি তিনটি রায়ের ক্ষেত্রে সব বিচারপতি একমত ছিলেন না। রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘আসামি মুজাহিদের ফাঁসির রায় এসেছে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে। এই রায়ে বাংলাদেশের সবাই খুশি হবে। বাংলাদেশকে মেধাশূন্য করতে মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যার মধ্য দিয়ে যে ক্ষতি করেছে, তা এক শতাব্দীতেও পূরণ হওয়ার নয়। জাতিকে মেধাশূন্য করার যে নীলনকশা ছিল, এর চেয়ে বড় অপরাধ আর হয় না। হিটলারের হিংস তা আর এদের হিংস তার মধ্যে আমি কোনো তফাৎ

দেখি না।’ আপিল আদালত ‘সঠিকভাবেই’ রায় দিয়েছেন উল্লেখ করে মাহবুবে আলম বলেন, ‘এক শতাব্দীতে এ রকম বুদ্ধিজীবী তৈরি হবে না। তবে এটুকু সান্ত্বনা, বুদ্ধিজীবী হত্যার বিচার পাওয়া গেল।’ রায় ঘোষণার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় মুজাহিদের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘মৃত্যুদণ্ড দেয়ার মতো পর্যাপ্ত সাক্ষ্যপ্রমাণ এ মামলায় ছিল না বলেই আমি মনে করি। রায়ের পূর্ণাঙ্গ কপি হাতে পেলেই এ রায় রিভিউয়ের আবেদন করা হবে। আশা করি রিভিউ শুনানির সময় আপিল বিভাগ আমাদের যুক্তি আমলে নেবেন।’ ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ মুজাহিদের মামলার রায় দেন। ওই রায়ে তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টি প্রমাণিত হয়েছিল। এর মধ্যে ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগে তাকে ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। অভিযোগ দুটি হচ্ছে যথাক্রমে একাত্তরে বুদ্ধিজীবী হত্যা এবং ফরিদপুরের বকচর গ্রামে গণহত্যা। সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনকে হত্যার অভিযোগটি বুদ্ধিজীবী হত্যার মধ্যে পড়ে যাওয়ায় ট্রাইব্যুনাল এই বিষয়ে আলাদা কোনো সাজা দেননি। সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হত্যার বিষয়টি মামলায় এক নম্বর অভিযোগ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা ছিল।

এক নম্বর অভিযোগ থেকে মুজাহিদকে খালাস দিয়েছেন আপিল বিভাগ। আর ৬ নম্বর অভিযোগে তার ফাঁসির আদেশ বহাল রেখেছেন। পাশাপাশি সাত নম্বর অভিযোগে ফাঁসির সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। বুদ্ধিজীবী হত্যা সংক্রান্ত রাষ্ট্রপক্ষের আনা ৬ নম্বর অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ২৭ মার্চের পর ঢাকার মোহাম্মদপুর ফিজিক্যাল ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্যাম্প তৈরি করে। পরে রাজাকার ও আলবদর বাহিনী প্রতিষ্ঠার পর তারাও ওই স্থানে ক্যাম্প করে প্রশিক্ষণ গ্রহণসহ অপরাধমূলক নানা কার্যক্রম চালায়।

আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ইসলামী ছাত্রসংঘের সেক্রেটারি হওয়ার সুবাদে আর্মি ক্যাম্পে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। ছাত্রসংঘ ও আলবদর বাহিনীর সুপিরিয়র (ঊর্ধ্বতন) নেতা হিসেবে আর্মি ক্যাম্পে ঊর্ধ্বতন সেনা অফিসারের সঙ্গে স্বাধীনতাবিরোধী নানা অপরাধের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্র করতেন। এ ধরনের পরামর্শ ও ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মুজাহিদ ১০ ডিসেম্বর থেকে পরিচালিত বুদ্ধিজীবী নিধন অভিযান, সারা দেশে দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সহযোগী বাহিনী পরিচালনা, হত্যা, নির্যাতন, দেশত্যাগে বাধ্য করা ইত্যাদি যাবতীয় মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যা সংঘটিত করেন।

এই অভিযোগের বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, ‘৭১-এর ১৬ ডিসেম্বরের বিজয়ের ঊষালগ্নে এদেশের অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করা হয়েছে। যেটা গভীরভাবে বাঙালি জাতিকে মর্মাহত করে। ওই সব শহীদ বুদ্ধিজীবী ছিল এদেশের শ্রেষ্ঠ নারী ও পুরুষ। জাতি ৭১-এর ১৪ ডিসেম্বরকে ‘বুদ্ধিজীবী’ দিবস ঘোষণা করে ওইসব বুদ্ধিজীবীর প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে আসছে। এখনও সেই বুদ্ধিজীবীদের পরিবার বিচারের আশায় রয়েছেন। ১৬ ডিসেম্বরের আগে পরিকল্পিতভাবে অসংখ্য বুদ্ধিজীবীকে হত্যা একটি জঘন্য মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পড়ে। বুদ্ধিজীবীদের হত্যার দায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এড়াতে পারেন না। কারণ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে জামায়াতে ইসলামীর অঙ্গসংগঠন আলবদর বাহিনী। আর এই আলবদর বাহিনীর প্রধান ছিলেন মুজাহিদ।
সে যেহেতু আলবদর বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়েছে এবং ঢাকায় তাদের প্রধান অফিস যা ‘টর্চার ক্যাম্প’ হিসেবে পরিচিত, সেখানে বাঙালিদের ধরে নিয়ে ‘দুর্বৃত্ত’, ‘ভারতের দালাল’ আখ্যা দিয়ে নির্যাতন করা হতো। অভিযুক্ত যেহেতু আলবদর বাহিনীর প্রধান এবং ঢাকায় তাদের প্রধান অফিস এবং তার অপরাধ সংঘটনের ধরন, সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে তার ‘সর্বোচ্চ শাস্তি’ (ক্যাপিটাল পানিশমেন্ট) না দিলে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে না।

এ রায়ে আরও বলা হয়, একাত্তরে সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেন, ড. ফজলে রাব্বী, সেলিনা পারভীন, মুনীর চৌধুরী প্রমুখ বুদ্ধিজীবী অপহৃত হন এবং তাদেরসহ আরও বুদ্ধিজীবীকে হত্যা করে ঢাকার রায়েরবাজার ও মিরপুর বধ্যভূমিতে ফেলে দেয়া হয়। অনেকের লাশ চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও সিরাজুদ্দীন হোসেনসহ কয়েকজনের লাশ চিহ্নিত করা যায়নি। তবে এটা নিশ্চিত যে তাদের হত্যা করা হয়েছে। আর তাদের অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে আলবদর বাহিনী জড়িত ছিল বলে সাক্ষ্য-প্রমাণে পাওয়া গেছে। এছাড়া স্বাধীনতার মূল্যবান দলিলপত্রেও এ ধরনের প্রমাণ পাওয়া যায়।
ট্রাইব্যুনাল তার রায়ের পর্যবেক্ষণে আরও বলেন, আলবদর বাহিনীর নীতি ও পরিকল্পনা ছিল স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র বাঙালি, জাতীয়তাবাদী বুদ্ধিজীবী ও হিন্দু সম্প্রদায়কে ধ্বংস করা। তাদের আলবদর বাহিনী দুষ্কৃতকারী বলত। এই আলবদর বাহিনী ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ‘ডেথ স্কোয়ার্ড’। তাদের কাজ ছিল সাংবাদিক, শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে হত্যা করা।
রায়ে আরও বলা হয়, ময়মনসিংহে আলবদর বাহিনীর এক সভায় আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ বলেন, ‘আলবদর একটি নাম, একটি বিস্ময়! আলবদর একটি প্রতিজ্ঞা! যেখানে তথাকথিত মুক্তিবাহিনী সেখানেই থাকবে আলবদর। মুক্তিবাহিনী তথা ভারতীয় চরদের কাছে আলবদর হবে সাক্ষাৎ আজরাইল।’ এছাড়া চকবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বক্তব্য-বিবৃতিতে মুজাহিদ বুদ্ধিজীবীদের দেখে নেয়ার হুমকি দেন। সুতরাং আলবদর বাহিনীর অপকর্মের দায় অবশ্যই মুজাহিদের। এই অভিযোগের দায়ে তাকে ট্রাইব্যুনাল ফাঁসির দণ্ড দেন যা বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।
প্রমাণিত হওয়া ৭ নম্বর অভিযোগে বলা হয়েছে, একাত্তরের ১৩ মে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের নির্দেশে রাজাকার বাহিনী ফরিদপুরের কোতোয়ালি থানার বকচর গ্রামে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর আক্রমণ করেন। শান্তি কমিটির বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বকচর গ্রামের হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় হামলা চালিয়ে বীরেন্দ্র সাহা, উপেন সাহা, জগবন্ধু মিস্ত্রি, সত্য রঞ্জন দাশ, নিরদবন্ধু মিত্র, প্রফুল্ল মিত্র ও উপেন সাহাকে আটক করা হয়। উপেন সাহার স্ত্রী রাজাকারদের স্বর্ণ ও টাকা দিয়ে তার স্বামীর মুক্তি চান। রাজাকাররা সুনীল কুমার সাহার কন্যা ঝুমা রানীকে ধর্ষণ করে। পরে আটক হিন্দু নাগরিকদের গণহত্যা করে। এই অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল মুজাহিদকে ফাঁসির আদেশ দেন। আপিল বিভাগ এই সাজা কমিয়ে তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।

ট্রাইব্যুনালের রায়ে প্রমাণিত হওয়া পঞ্চম অভিযোগে সুরকার আলতাফ মাহমুদ, গেরিলা যোদ্ধা জহিরউদ্দিন জালাল ওরফে বিচ্ছু জালাল, শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ছেলে শাফি ইমাম রুমি, বদিউজ্জামান, আবদুল হালিম চৌধুরী জুয়েল ও মাগফার আহমেদ চৌধুরী আজাদসহ কয়েকজনকে ঢাকার নাখালপাড়ায় পুরনো এমপি হোস্টেলে আটকে রেখে নির্যাতন এবং জালাল ছাড়া বাকিদের হত্যার ঘটনায় সংশ্লিষ্টতার জন্য মুজাহিদকে দেয়া হয় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আপিল বিভাগের রায়ে সেই সাজাই বহাল রাখা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে তৃতীয় অভিযোগে ফরিদপুর শহরের খাবাসপুরের রণজিৎ নাথ ওরফে বাবু নাথকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয় মুজাহিদকে। এই সাজাও বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ।

এছাড়া তার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগে ফরিদপুরের চরভদ্রাসনে হিন্দু গ্রামে গণহত্যা এবং চতুর্থ অভিযোগে আলফাডাঙ্গার আবু ইউসুফ ওরফে পাখিকে আটকে রেখে নির্যাতনের ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেলেও তাতে মুজাহিদের সংশ্লিষ্টতা প্রসিকিউশন প্রমাণ করতে না পারায় ট্রাইব্যুনাল খালাস দিয়েছিলেন। এ কারণে এ দুটি অভিযোগ আপিল বিভাগের রায়ে বিবেচনায় নেয়া হয়নি।
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগের একটি মামলায় ২০১০ সালের ২৯ জুন আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর একই বছরের ২ আগস্ট তাকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতার দেখানো হয়। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ২০১২ সালের ২১ জুন ট্রাইব্যুনালে বিচার শুরু হয়। ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই ট্রাইব্যুনালে এই জামায়াত নেতার ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৩ সালের ১১ আগস্ট আপিল করেন মুজাহিদ। রাষ্ট্রপক্ষ আপিল না করলেও শুনানিতে অংশ নিয়ে দণ্ড বহাল রাখতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করে। ২৯ এপ্রিল আপিল শুনানি শুরু হয়। নয় দিন আপিলের ওপর শুনানি গ্রহণ করেন আপিল বিভাগের চার বিচারপতি। ২৭ মে আপিলের শুনানি শেষে রায়ের জন্য দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ।

রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি উপস্থাপন শেষ করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রশির আহমেদ। আদালতে আসামিপক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এসএম শাহজাহান। সঙ্গে ছিলেন শিশির মনির। মঙ্গলবার সকাল ৯টা ৫ মিনিটের পর মাত্র দুই মিনিটে এই রায়ের সংক্ষিপ্তসার জানিয়ে দিয়ে আপিল বিভাগ বলেন, ‘আপিল আংশিক মঞ্জুর করা হল। এক নম্বর অভিযোগ থেকে তাকে খালাস দেয়া হল। এছাড়া ৩, ৫, ৬ ও ৭ নম্বর অভিযোগে সাজা বহাল রাখা হল। সাত নম্বর অভিযোগে সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হল।’ এখন পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশের অপেক্ষা। রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশের পর তার ফাঁসি কার্যকরের পরবর্তী প্রক্রিয়া শুরু হবে।

বদর নেতা থেকে মন্ত্রী : এই প্রথম বাংলাদেশের মন্ত্রিসভায় দায়িত্ব পালন করা কোনো রাজনীতিবিদ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলতে যাচ্ছেন। মুজাহিদের জন্ম ১৯৪৮ সালের ২ জানুয়ারি, ফরিদপুর জেলার পশ্চিম খাবাসপুরে। ১৯৬৪ সালে মাধ্যমিক পাসের পর তিনি ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হন এবং উচ্চ মাধ্যমিকের ছাত্র থাকাকালেই জামায়াতের তখনকার ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘে যোগ দেন। ১৯৬৮ সালে তাকে সংগঠনের জেলা শাখার সভাপতির দায়িত্ব দেয়া হয়।

১৯৭১ সালে বাংলার মানুষের স্বাধীনতার সংগ্রাম যখন চূড়ান্ত পর্যায়ে, সেই বছর জানুয়ারিতে ইসলামী ছাত্রসংঘের ঢাকা জেলা শাখার সভাপতি হন মুজাহিদ। মুক্তিযুদ্ধ শুরুর পর জুলাই মাসে সংগঠনের পূর্ব পাকিস্তান শাখার সেক্রেটারি এবং এরপর প্রাদেশিক সভাপতির দায়িত্ব পান। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতায় ইসলামী ছাত্রসংঘের সদস্যদের নিয়ে আলবদর বাহিনী গঠিত হলে ১৯৭১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তার নেতৃত্ব দেন ইসলামী ছাত্রসংঘের তখনকার সভাপতি ও জামায়াতের বর্তমান আমীর মতিউর রহমান নিজামী। অক্টোবরে ওই বাহিনীর প্রধান হন মুজাহিদ।

তার নেতৃত্বে আলবদর বাহিনী যুদ্ধের মধ্যে ফরিদপুর, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হত্যা, অপহরণ, লুটপাটের মতো ব্যাপক মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালায় বলে ট্রাইব্যুনালের রায়ে উঠে এসেছে। এমনকি ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের প্রস্তুতির সময়ও বাহিনী নিয়ে আত্মসমর্পণ না করার সিদ্ধান্ত নেন মুজাহিদ। স্বাধীনতার পর মুজাহিদ জামায়াতের রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং ১৯৮২ সালে কেন্দ্রীয় পরিষদের সদস্য হন। ১৯৮৯ থেকে দুই বছর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেলের দায়িত্ব পালনের পর ২০০০ সালে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল হন তিনি।

কোনো নির্বাচনে জয়ী হতে না পারলেও বিগত চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে সমাজকল্যাণমন্ত্রীর দায়িত্ব পান মুজাহিদ। জামায়াতের মুখপত্র দৈনিক সংগ্রামের পরিচালনা পর্ষদেরও প্রধান ছিলেন তিনি। যুদ্ধাপরাধের মামলায় গ্রেফতার হওয়ার আগে ২০১০ সালের মার্চে জামায়াতে ইসলামীর এক সংবাদ সম্মেলনে মুজাহিদ বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে জামায়াতে ইসলামী রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত হিসেবে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছে। কিন্তু মানবতাবিরোধী অপরাধ বা যুদ্ধাপরাধের মতো কোনো ধরনের অপরাধে জামায়াত নেতারা জড়িত ছিলেন না।’

চতুর্থ চূড়ান্ত রায় : এ রায়টি হল মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচারের চতুর্থ চূড়ান্ত রায়। এর আগে আপিল বিভাগ থেকে তিনটি চূড়ান্ত রায় হয়েছে। এর মধ্যে প্রথম চূড়ান্ত রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদেও মোল্লাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়। যে রায়টি ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর রাতে কার্যকর হয়। এছাড়া দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতের নায়েবে আমীর দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। এই দণ্ড মাথায় নিয়ে তিনি বর্তমানে কারাভোগ করছেন। সর্বশেষ চূড়ান্ত রায়ে জামায়াতের অপর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ কামারুজ্জামানকে ফাঁসির দণ্ড দেয়া হয়, যা ২০১৫ সালের ১১ এপ্রিল রাতে কার্যকর হয়।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

ভরিতে এবার ১,৯৯৪ টাকা বাড়লো স্বর্ণের দাম

দেশের বাজারে স্বর্ণের দাম কমানোর ঘোষণা দিয়েছিল বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনবিস্তারিত পড়ুন

সংস্কার হলে পেট্রোল-ডিজেলের দাম কত কমানো সম্ভব জানালো সিপিডি

মূল্য নির্ধারণ কাঠামোর সংস্কার হলে লিটার প্রতি পেট্রোলের দাম ১১বিস্তারিত পড়ুন

রাজশাহীতে সমন্বয়ককে হাতুড়ি দিয়ে পেটানোর অভিযোগ

রাজশাহীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের স্থানীয় এক সমন্বয়ককে হাতুড়িপেটা করার অভিযোগবিস্তারিত পড়ুন

  • ড. ইউনূস: খালেদা জিয়াকে আনতে পেরে আমরা গর্বিত
  • দেশের নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার নাসির উদ্দীন
  • ঢাবি ক্যাম্পাসে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে শাটল বাস সার্ভিস
  • পাকিস্তানে যাত্রীবাহী গাড়িতে বন্দুকধারীর গুলি, নিহত ৩৮
  • সায়েন্সল্যাব এলাকা থেকে সিটি কলেজ সরিয়ে নেওয়ার দাবি ঢাকা কলেজের
  • ড. ইউনূস: আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা চাকরিপ্রার্থী তৈরি করে, এটি ত্রুটিপূর্ণ
  • আইসিটি অধ্যাদেশ অনুমোদন, ধারণ করা যাবে বিচার প্রক্রিয়ার অডিও-ভিডিও
  • জাবি ক্যাম্পাসে নিষিদ্ধ হলো ব্যাটারিচালিত রিকশা ও মোটরসাইকেল
  • অবসরের চার বছর পর আইজিপি হলেন বাহারুল আলম
  • ধর্ম উপদেষ্টা: ইসলামি বইমেলা হেরার জ্যোতির পথ দেখায়
  • ব্যাংকিং ব্যবস্থার অপব্যবহারে সংকটাপন্ন ব্যাংকগুলোর ক্ষতি ১,৬৬৪ কোটি টাকা
  • আজিমপুরে বাসায় ডাকাতি, মালামালের সঙ্গে দুধের শিশুকেও নিয়ে গেছে ডাকাতরা