‘বুদ্ধির খেলায় হেরে গেল বিএনপি’
আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনে আমন্ত্রিত হয়েও বিএনপির কোনো পর্যায়ের প্রতিনিধিই গতকাল যোগ দেননি। বিএনপির এ সিদ্ধান্তকে আরেকটি ‘বড় ভুল’ বলে মনে করছেন দলটির উদারপন্থি নেতা ও দল-সমর্থিত বুদ্ধিজীবীরা। তাদের মতে, সম্মেলনে গেলে বিএনপি রাজনৈতিকভাবে লাভবান হতো।
বক্তব্য রাখার সুযোগ পেলে অনেক কিছু বলা যেত। পর্যায়ক্রমে আসন্ন নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন ও নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচনের বিষয়টি নিয়েও হয়তো উভয় দলের মধ্যে আলোচনার সূত্রপাতও ঘটত। কিন্তু দলের কিছু কট্টরপন্থি নেতার পরামর্শে হাইকমান্ড সিদ্ধান্ত নেয় সম্মেলনে না যাওয়ার।
তাদের মতে, প্রতিনিয়ত আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে গালমন্দ করেন। বিএনপির বিগত সম্মেলনে আওয়ামী লীগও কোনো প্রতিনিধি পাঠায়নি। এসব বিষয় মাথায় রেখে বিএনপি সম্মেলনে যায়নি বলেও সূত্র দাবি করছে। তাদের দাবি, সম্মেলনে গেলে বিএনপির দুর্বলতা প্রকাশ পাবে।
অন্যদিকে, বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্ক ও দলের সমর্থক বুদ্ধিজীবীরা বলেছেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে না গিয়ে আবারও বুদ্ধির খেলায় হেরে গেল বিএনপি। তারা মনে করেন, রাজনীতিতে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। একটি রাজনৈতিক দল ভুল সিদ্ধান্ত নিলে আরেকটি রাজনৈতিক দল একই ভুল করবে কেন? ওরা এলো না, আমরা গেলাম না- এ ধরনের রাজনীতি বর্জন করাই শ্রেয়।
গতকাল শনিবার দু’দিনব্যাপী আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলন শুরু হয়েছে। আজ রোববার সম্মেলন শেষ হবে। এ সম্মেলনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে বৃহস্পতিবার আমন্ত্রণ দেয় আওয়ামী লীগ। দলের একাধিক নেতা জানান, আমন্ত্রণ পাওয়ার আগে দলের হাইকমান্ডের মনোভাব ছিল সম্মেলনে যাওয়ার পক্ষে।
এই মনোভাবের পর দলের কয়েকজন নেতা বলেন, বিএনপির সম্মেলনে আওয়ামী লীগ আসেনি। তাই বলে বিএনপি যাবে না কেন? বিএনপির ছোটখাটো একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হতে পারে। কিন্তু সম্মেলনে যাওয়ার আমন্ত্রণপত্র পাওয়ার পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করা হয়। সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হওয়ায় দলের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভও তৈরি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির থিঙ্কট্যাঙ্ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. এমাজউদ্দীন আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপি গেলে ভালো হতো। হিংসা-প্রতিহিংসার রাজনীতি পরিত্যাগ করতে হবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি দেশবাসী কখনও চায় না, মেনেও নেবে না। রাজনীতি করতে হলে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ ভুল করে থাকলে বিএনপির আবার একই ভুল করবে, তা ঠিক নয়। আওয়ামী লীগকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, তারাও বিএনপির সম্মেলনে যায়নি- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওরা এলো না, তাই আমরা গেলাম না- এভাবে রাজনীতি হয় না। রাজনীতিতে শ্রদ্ধাবোধ সবার ওপরে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ্ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার যাওয়া উচিত ছিল। আওয়ামী লীগ তাদের সম্মেলনে যায়নি বলে বিএনপি যাবে না- এটা সঠিক সিদ্ধান্ত নয়। সম্মেলনে গেলে বিএনপি রাজনীতির খেলায় জিতে যেত। না যাওয়ায় বুদ্ধির খেলায় বিএনপি আবারও হেরে গেল। তিনি বলেন, ২০১৪ সালের নির্বাচনের সময় ছলচাতুরীতে বিএনপি হেরেছে। এবার হারল বুদ্ধির খেলায়। তিনি বলেন, সম্মেলনে গিয়ে বিএনপি বলতে পারত যে, এই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আমরা সমাবেশ করতে চেয়েছিলাম, অনুমতি দেওয়া হয়নি। আগামীতে আমরা সমাবেশ করতে চাই। এই মাঠ দিতে হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল এক নেতা জানান, প্রথম দিকে ভাবছিলাম, হয়তো সম্মেলনে যাওয়া হবে। শুক্রবার দুপরের পর থেকে বুঝতে পারলাম, সম্মেলনে যাওয়া হচ্ছে না। এই নেতার নিজের মতামত হচ্ছে, সম্মেলনে গেলে বিএনপির জন্য ভালো হতো। অতীতের সব দোষত্রুটি মুছে যেত। রাজনীতিতে বিএনপি কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকত।
এদিকে আজ রবিবার দুপুরে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সন্মেলনে আওয়ামীলীগের সন্মেলনে না যাওয়ার কারণ জানান বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী।
গণতান্ত্রিক পরিবেশ না থাকায় বিএনপি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে যায়নি বলে মন্তব্যকরেন তিনি।
রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে বিএনপি না যাওয়ার সিদ্ধান্ত সঠিক। গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে যাওয়া যেত। যেখানে তারা বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে আক্রমণ করে বক্তব্য দিচ্ছে। দলের নেতাকর্মীদের গুম খুন মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করছে এরকম পরিবেশে কিভাবে তাদের কাউন্সিলে উপস্থিত হওয়া যায়। এছাড়া তারাও বিএনপির সম্মেলনে আসেনি।
তিনি বলেন, সরকার নিজেকে জনগণের প্রতিনিধি নয় জমিদার মনে করে। তারা গোটা রাজধানীকে দখল করে অবৈধভাবে কাউন্সিল করছে। সরকার দস্যুবৃত্তির মাধ্যমে কাজ করছে। এরই প্রতিফলন দেখছি আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে। তারা ঝাড়বাতি লাগিয়ে ঢাকাকে একাকার করে ফেলছে। এভাবে রাজনৈতিক কাউন্সিলে হতে পারে না।
বিএনপির এই নেতা বলেন, বিএনপির কাউন্সিলে সরকার বিভিন্নভাবে বাধা দিয়েছে। রাস্তায় রাস্তায় নেতাকর্মীদের আসতে বাধা দিয়েছে। কাউন্সিলের অনুমতি দিয়েছে দুই/তিনদিন আগে। যেন সকলের মনে একটা সন্দেহ জাগে কাউন্সিল হবে কিনা। আমাদের ব্যানার পোস্টার লাগাতে দেয়নি।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন