বুশরা কি তাহলে খুন হয়নি!
বুশরা হত্যা মামলায় সবাই খালাস। বুশরার মা প্রশ্ন করেছেন, “বুশরা কি কখোনো ছিলো? “দীর্ঘ১৬ বছর একটি মামলা চলার পর কত কষ্টে একজন মা এই প্রশ্ন করেছেন, এটা একজন মানুষ হিসেবে সহজেই অনুমেয়! যদি বুশরা নাই থাকতো তাহলে বুশরা ধর্ষণ ও হত্যা মামলা হলো কি করে?
নিম্ন থেকে উচ্চ আদালত যে রায়ই দিক না কেন– এটা সত্য বুশরা ছিলো। বুশরা ধর্ষণ ও খুন হয়েছে। ধর্ষণ ও খুন কেউ কাউকে দেখিয়ে, বলে-কয়ে করে না। এখানে অভিযোগকারীর বক্তব্যকেই প্রাথমিকভাবে সত্য বলে ধরে নেয়া হয়।
তাহলে এই প্রশ্ন আসছে কেন যে বুশরা কি কখোনো ছিল? যার ঘরভর্তি চমৎকার চমৎকার সব প্রাণবন্ত ছবি– সে ছিলো না? যার হত্যা মামলা দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলেছে, সে ছিলো না?
অনেক দিন আগের একটি মামলার কথা মনে পড়ে গেল। “জয়ন্তী রেজা হত্যা মামলার” কথা। সেটা নিয়েও অনেক যুদ্ধ করতে হয়েছিল জয়ন্তী রেজা পরিবারকে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির পক্ষে অন্যান্য আইনজীবীদের সাথে আমিও ছিলাম জয়ন্তী রেজার পক্ষে। শেষমেশ রায় জয়ন্তী রেজার পক্ষেই আসে।
এই বিষয়টির অবতারনা করলাম এই জন্য যে, আসামিদের আইনজীবী জনাব খন্দকার মাহবুবউদ্দীন বলেছেন, বুশরাকে ধর্ষণ বা হত্যা করতে কেউ দেখেনি। একজন আইনজীবী তার পেশার স্বার্থে যে কোনো পক্ষেই দাঁড়াতে পারেন। তাই বলে এই বয়সে এত দিনের অভিজ্ঞতার পর তার কি বিশ্বাস হয় যে, কেউ কাউকে বলে-কয়ে ধর্ষণ ও খুন করবে?
আইন অন্ধ। আইন চায় প্রমাণ। আইনজীবীর দক্ষতা। পুলিশের সহায়তা। এখানে বিচারকদের বিচার করার সুযোগ আমাদের নাই। সঠিক রায় প্রদানে সহযোগিতা করা ছাড়া আমরা আর কিছুই করতে পারি না। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এত অদক্ষ ??
প্রশ্ন দাঁড়ায়, বুশরা হত্যা মামলায় যদি সকলেই খালাস পায়, তার মানে কি দাঁড়ায়- বুশরা খুন হয়নি? বুশরা বলে কেউ ছিলোই না? একটা মেয়ে ধর্ষিত হলো, খুন হলো অথচ কেউ তাকে ধর্ষণ বা খুন করেনি? সেলুকাস!
যদি ধর্ষণ বা খুন নাই হয়ে থাকে তবে কিভাবে এই মামলা হলো বা এই ধরনের রায় বিজ্ঞ আদালত দিলো–এই তো প্রশ্ন? অনেক কথাই থেকে যায় এই সবের মাঝে। আমরা যারা ভিকটিম মামলা করতে গেলে আমাদের মাঝে আবেগ অনেক বেশি কাজ করে। কিন্তু আবেগ দিয়ে তো আর আইন চলে না। আইন চলে যুক্তি দিয়ে, প্রমাণ দিয়ে। কোন হত্যাকাণ্ড ও ধর্ষণের মত ঘটনা ঘটার পর সবচেয়ে জরুরি আবেগ নিয়ন্ত্রণে এনে খুব সাবধানে মামলা দায়ের করা। এই মামলা থানায় হলে দায়িত্ব থানা কর্তৃপক্ষের। ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য মামলাটির “ প্রাথমিক তথ্য বিবরণি লিখতে হবে সাবধানে। “ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা থেকে শুরু করে মানচিত্র অংকন, আলামত জব্দ, সাক্ষীদের ১৬১ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ, গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্তদের যদি রিমান্ড চাওয়া হয়, সেই ক্ষেত্রে সঠিক পদ্ধতি মেনে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের আদালতে পাঠানো ও ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে প্রদেয় ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি রেকর্ডে রাখা সর্বোপরি অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণ করার জন্য অভিযোগপত্র লেখার সময়ও সচেতন থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
উপরে উল্লিখিত কোন কাজটি পুলিশ সততা ও নিষ্ঠার সাথে আইন–কানুন–নিয়ম– নীতি–আদর্শ মেনে করে? পুলিশ কি তার পক্ষ থেকে যথাযথভাবে মামলার তদন্ত করেছিল?
অভিযোগপত্র বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণের পরের দায়িত্ব বিজ্ঞ আদালতের ও আইনজীবীদের। থানায় দায়ের করা মামলার বাদী রাষ্ট্র। সুতরাং রাষ্ট্রের দায়িত্ব ছিল এটা প্রমাণ করা “বুশরা ধর্ষিত হয়েছিলো, নাকি হয়নি?। খুন হয়েছিলো নাকি হয়নি? “রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী কতটুকু প্রস্তুত ছিলেন এসব প্রশ্নের উত্তর দেবার জন্য?
আইন এর সৃষ্টি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য। এই দায় থানা পুলিশ উকিল সকলের। তেমনি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে না পারার ব্যর্থতার দায়ও আমাদের সকলের।
বুশরার মামলার ক্ষেত্রে পুলিশ ব্যর্থ। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ব্যর্থ। কিন্তু বিজ্ঞ আদালত ??? তাকে কি সংবিধান সহজাত ক্ষমতা প্রদান করেনি? এমনকি প্রতিটি আইনের ধারাভাষ্য বারংবার আদালত এর সর্বোচ্চ ক্ষমতা সম্পর্কে বলা হয়েছে। সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী আদালত এর রায় বা সিদ্ধান্তই যে চূড়ান্ত এবং আদালত স্বপ্রণোদিত হয়ে যে অনেক কিছুই করতে পারেন, সেটা আর কতবার কতভাবে বলতে হবে? আদালত এর অসীম ক্ষমতার বিষয়ে করিয়ে দিলেও কি “আদালত অবমাননা হয়ে যাবে?” আদালতের নিজস্ব ক্ষমতা বলে বা স্বপ্রণোদিত হয়ে কিছুই কি করার ছিল না এই মেয়েটির জন্য??? তাহলে মহামান্য আদালত ও বিশ্বাস করেন যে বুশরা “ধর্ষিতবা খুন “ হয়নি ???!!
আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ড. ইউনূসের মন্তব্য দেশের মানুষের জন্য অপমানজনক : আইনমন্ত্রী
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কর ফাঁকি দেওয়ার মামলাকে পৃথিবীর বিভিন্নবিস্তারিত পড়ুন
ময়মনসিংহে ওসি-এসপি’র বার্ষিক কর্ম সম্পাদন চুক্তি স্বাক্ষর
সরকারি দায়-দায়িত্ব ও কর্মকান্ডে স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা বৃদ্ধি, সম্পদের যথাযথবিস্তারিত পড়ুন
ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় জনগণের সাথে রায়েছে বিচার বিভাগ
দেশের মানুষের ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বিচার বিভাগ জনগণের সঙ্গে আছেবিস্তারিত পড়ুন