বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণে ডেঙ্গু জ্বর
মাঝে ডেঙ্গু সংক্রমণের তেমন কোনো সংবাদ না পাওয়া গেলেও অতি বৃষ্টি আর জলাবদ্ধতার কারণে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বেশ ক’টি নগরীতে এবার ডেঙ্গু সংক্রমিত হয়েছে। সমগ্র বিশ্বে ডেঙ্গি নামে পরিচিত হলেও এডিস মশাবাহিত এই রোগটি বাংলাতে ডেঙ্গু নামেই সমধিক পরিচিত।
যেভাবে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত কোনো রোগীকে এডিস মশা কামড়ালে ডেঙ্গু ভাইরাস সেই মশার দেহে প্রবেশ করে। ভাইরাস বহনকারী সেই এডিস মশা কোনো সুস্থ মানুষকে কামড়ালে ডেঙ্গু ভাইরাস তার দেহে ঢুকে পড়ে এবং ওই ব্যক্তি আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ডেঙ্গু মশা সাধারণত দিনের বেলায় কামড় দিয়ে থাকে।
ডেঙ্গুর লক্ষণ
এ জ্বরে আক্রান্ত হলে রোগীর জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড শরীর ব্যথা, মাথাব্যথা, চোখের পেছনের অংশে ব্যথা, পেটে ব্যথা, শরীরের পেছনের অংশে ব্যথা অনুভূত হয়। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে রোগীর বমি হওয়া, খাওয়ায় অরুচিসহ শরীরে প্রচণ্ড ক্লান্তি দিতে পারে ও সেই সঙ্গে লাল চাকাসহ দাগ, দাঁত মাজার সময় রক্ত পড়া ও পায়খানার রঙ কালো হতে পারে। পায়খানার রঙ কালো বা কালচে কালো হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মস্তিষ্কেও রক্তক্ষরণ হয়। এসব সমস্যা দেখা দেওয়ার আগেই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া উচিত।
ডেঙ্গু হেমারেজিক জ্বর বোঝার উপায়
রক্ত পরীক্ষায় যদি প্লাটিলেটের সংখ্যা কমে যায়, তবে বুঝতে হবে এটি হেমোরেজিক বা রক্তক্ষরণী জ্বর। রোগী অজ্ঞান হওয়া, শকে চলে যাওয়া, অবসন্নতা, অস্থিরতা, তীব্র পেট ব্যথা, রক্তচাপ কমে যাওয়া, হাত-পা ঠাণ্ডা হওয়া, প্রস্রাবের পরিমাণ কমে যাওয়া_ এসব লক্ষণ দেখা দিলে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
ডেঙ্গু রোগীর রক্তের পরীক্ষা
রোগের লক্ষণ দেখে রোগ প্রকাশের পাঁচ দিন পর রক্তে অ্যান্টিবডি উপস্থিতি নির্ণয়ের মাধ্যমে ডেঙ্গু শনাক্ত করা হয়। রক্তের আইজিজি অ্যান্টিবডি শনাক্ত হলে বুঝে নিতে হবে যে এ রোগ আগেই দেখা দিয়েছিল, তবে এখন ভাইরাস নেই। আর আইজিএম শনাক্ত হলে ধরে নিতে হবে, ভাইরাস শরীরে বিচরণ করছে। প্লাটিলেট কাউন্ট চার বা পাঁচ দিন পর কমতে শুরু করে। তাই জ্বর শুরুর পাঁচ বা ছয় দিন পর রক্ত পরীক্ষা করা উচিত। অনেকেই দিনে দু-তিনবার প্লাটিলেট কাউন্ট করে থাকেন। প্লাটিলেট কাউন্ট ঘন ঘন করার প্রয়োজন নেই। রোগ শনাক্ত হলে রক্তের রুটিন টেস্টসহ প্লাটিলেট পরীক্ষা, রোগ ব্যবস্থাপনার জন্য হেমাটোক্রিট পরীক্ষা করে নেওয়াটা জরুরি। প্লাটিলেটের সংখ্যা ২০ হাজারের কম হলে শরীরে মারাত্মক রক্তক্ষরণ দেখা দেয়।
অন্যান্য পরীক্ষা
ষসব রোগীর ক্ষেত্রেই ব্লাড সুগার পরীক্ষা করা উচিত। ডেঙ্গুতে সাময়িকভাবে ব্লাড সুগার বেড়ে যেতে পারে। ষডেঙ্গুতে সাধারণত লিভারের প্রদাহ (হেপাটাইটিস) হয়ে থাকে, এ কারণে রক্তে লিভারের পরীক্ষাগুলো স্বাভাবিক নাও হতে পারে। যেমন_ এসজিপিটি, এসজিওটি, এলকালাইন ফসফাটেজ ইত্যাদি বাড়তে পারে।
ষবুকের এক্স-রে করলে বুকের ডান দিকে অনেক সময় পানি পাওয়া যেতে পারে।
ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা
অধিকাংশ ডেঙ্গুজ্বরই আতঙ্কিত হওয়ার মতো তেমন ভয়াবহ নয়। সাত দিনের মধ্যেই তা সেরে যায়। শুধু প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে পানি, তরল খাবার আর বিশ্রামের। সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য প্যারাসিটামল। তবে রোগীকে ব্যথানাশক হিসেবে এসপিরিন বা ক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ দেওয়া যাবে না। এতে রোগীর রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে।
হেমারেজিক বা রক্তক্ষয়ী ডেঙ্গুজ্বরে প্লাটিলেট আর ডেঙ্গু শক সিনড্রমে দরকার রক্তরস বা প্লাজমা। এক ব্যাগ অর্থাৎ ২০০ মিলিলিটার প্লাটিলেটের জন্য পুরো ৪ ব্যাগ রক্তের প্রয়োজন পড়ে। অবশ্য সেল সেপারেটর মেশিনের সাহায্যে একজন ডোনারের কাছ থেকেই সমপরিমাণ প্লাটিলেট সংগ্রহ করা সম্ভব। কিন্তু সেল সেপারেটর মেশিন বেশি না থাকায় রেফ্রিজারেটেড সেন্ট্রিফিউজ মেশিনে সাধারণত তিন ব্যাগ ব্যবহার হলে রক্তের তিন ধরনের কম্পোনেন্ট আলাদা করা হয়ে থাকে। ডেঙ্গু হয়ে গেলে অনেক রক্তের প্রয়োজন দেখা দেয়। এক ব্যাগ প্লাটিলেটের জন্য ৪ ব্যাগ রক্ত।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
ষনিজের ঘর, বাড়ির আশপাশ পরিষ্কার রাখা।
ষফুলের টব, পুরনো ক্যান, পাত্র, গামলা ইত্যাদিতে যাতে চার-পাঁচ দিন পানি জমতে না দেওয়া।
ষএডিস মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করা।
সঠিক চিকিৎসা পেলে ডেঙ্গুজ্বরে এখন রোগী মারা যায় না। তাই ডেঙ্গুজ্বর হলে আতঙ্কিত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চিকিৎসা নিন ও সুস্থ থাকুন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন
জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন