বেতন স্কেল নিয়ে চক্রান্ত : ফাইল ফেরত আনলেন অর্থমন্ত্রী
কে এম এ হাসনাত : বেতন আদেশের (পে-স্কেল) ফাইল ফেরত আনলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল অবদুল মুহিত। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, এর মাধ্যমে সরকারের সঙ্গে সরকারি চাকরিজীবীদের মুখোমুখি হওয়ার মতো একটি চক্রান্ত থেকে রক্ষা পাওয়া গেল।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পে-কমিশন সরকারের কাছে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড তুলে দেওয়ার সুপারিশ করে। সচিব কমিটিও তা বহাল রাখে। আর এ নিয়ে সরকারি চাকরিজীবীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। এ অবস্থায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করেন অর্থমন্ত্রী।
জনা গেছে, বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে নিজ নিজ স্কেলের সর্বোচ্চ ধাপে পৌঁছালে একজন চাকরিজীবী পরবর্তী উচ্চতর স্কেলে যাবেন। একজন চাকরিজীবী একই গ্রেডে ১০ বছর থাকার পর পরবর্তী উচ্চতর ধাপে যাবেন। কিন্তু বাস্তবায়ন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বিকল্প এ ব্যবস্থা বাদ দিয়ে নিজের মতো করে বেতন আদেশ ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
সূত্র জানায়, বেতন আদেশে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিকল্প ব্যবস্থা বাদ দেওয়া হচ্ছে- এ ধরনের কথা চাকরিজীবীদের মাঝে প্রচার হয়ে যায়। এতে দেশজুড়েই তাদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হতে থাকে এবং সরকার ও চাকরিজীবীদের মুখোমুখি হওয়ার মতো অবস্থার সৃষ্টি হয়।
সূত্র আরো জানায়, অর্থমন্ত্রী জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশন এবং বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফের বার্ষিক বৈঠকে যোগ দিতে বিদেশ যাওয়ার আগে বেতন আদেশ চূড়ান্ত করে ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন শাখাকে দায়িত্ব দেন। সেখানে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাড়াহুড়ো করে বেতন আদেশ ভেটিং সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেন এবং বিকল্প ব্যবস্থার অংশটুকু বাদ দিয়ে নিজের মতো করে বেতন আদেশ ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
চাকরিজীবীদের ক্ষোভের কথা জানতে পেরে অর্থমন্ত্রী বিষয়টি নিজের হাতে তুলে নেন। বর্তমানে বেতন আদেশটি অর্থমন্ত্রী নিজেই চূড়ান্ত করছেন বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাস্তবায়ন শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা একজন অতিরিক্ত সচিব। তিনি বেতন আদেশ থেকে পুরো একটি প্যারা বাদ দিয়ে দেন, যেখানে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেডের বিকল্প ব্যবস্থাটি নিশ্চিত করা হয়েছিল।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই কর্মকর্তা জানান, আদেশে বলা হয়েছিল, ‘টাইম স্কেল এবং সিলেকশন গ্রেড নিয়ে যে অসন্তোষ ইতিমধ্যে প্রকাশ করা হয়েছে, সেটা একান্তই ভুল বোঝাবুঝির কারণে এবং প্রকৃত প্রস্তাব সম্বন্ধে অবহিত নয় বলেই হয়েছে। এখন প্রতিটি স্কেলে বেতন বৃদ্ধির হার আগের তুলনায় বেশি এবং কেউ বেতন স্কেলের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে গেলে সে পরবর্তী স্কেলের সমমানে পৌঁছে গেছে বলে ধরা হবে। অর্থাৎ পদোন্নতি না হলেও প্রতিবছরই বেতনের ইনক্রিমেন্ট প্রাপ্তি চলতে থাকবে। সে দিক থেকে বিবেচনা করলে সিলেকশন গ্রেড এবং টাইম স্কেল উঠিয়ে দেওয়ায় সব কর্মচারীর সুবিধা বাড়বে এবং আগে সিলেকশন গ্রেড এবং টাইম স্কেল না পাওয়ার যে সম্ভাবনা ছিল, সেটা দূরীভূত হবে।’
অর্থমন্ত্রীর বিদেশে অবস্থানের সুযোগ নিয়ে ওই কর্মকর্তা বেতন আদেশের গুরুত্বপূর্ণ অংশটি বাদ দিয়ে এবং অর্থমন্ত্রীকে অবহিত না করেই বেতন আদেশের ফাইল চূড়ান্ত করতে আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিংয়ের জন্য পাঠান অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন বিভাগে। নিয়ম অনুযায়ী ভেটিংয়ের আগে অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করার বিধান রয়েছে। কিন্তু একগুঁয়েমি করে অর্থমন্ত্রীকে অবহিত না করেই ওই কর্মকর্তা ফাইলটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠান।
আইন মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বেতন আদেশ নিয়ে অর্থমন্ত্রীর নিজস্ব কিছু পর্যবেক্ষণ রয়েছে। ওই পর্যবেক্ষণগুলো বেতন আদেশে প্রতিফলিত হয়েছে কি না, সেটিই যাচাই করে দেখতে চাইছেন অর্থমন্ত্রী। এর আগে গত বৃহস্পতিবার বেতন আদেশের খসড়া ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠায় অর্থ বিভাগ।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, ভেটিং হয়ে গেলে নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই গেজেট জারি হওয়ার কথা। বেতন আদেশ নিয়ে কাজ করেছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের এমন এক অতিরিক্ত সচিবের একগুঁয়েমির কারণেই অর্থমন্ত্রীর অনেক সুপারিশ প্রতিফলিত হয়নি। এ ছাড়া যেসব প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, সেগুলো বেতন-ভাতা নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অসন্তোষ নতুন করে আরো বাড়িয়ে দিতে পারে। জানা গেছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি সত্ত্বেও টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় আসেনি বেতন আদেশে। উপরন্তু বেতন আদেশের গেজেট জারি হওয়ার পর গত জুলাই থেকে পরবর্তী যেসব মাসের বেতন-ভাতা তোলা হয়েছে বা হবে, সেখান থেকে প্রাপ্ত সুবিধা ফেরত দিতে হবে সরকারকে। এই প্রাপ্য সুবিধার মধ্যে টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেড এবং মহার্ঘ ভাতাসহ বিভিন্ন বিষয় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেন, ৭ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভা যে বেতনকাঠামো অনুমোদন করেছে, সে অনুযায়ী বেতন আদেশ চূড়ান্ত করেছে অর্থ বিভাগ। তবে সেখানে একটি ইস্যু সংযুক্ত করে বলা হয়েছে : সিলেকশন গ্রেড, টাইম স্কেল, বেতন-ভাতাদি ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা যেগুলো চলতি বছরের ১ জুলাই থেকে গেজেট (বেতন আদেশ) জারি পর্যন্ত প্রদান করা হয়েছে, সেগুলো রহিত করা হচ্ছে। এ ইস্যুটি নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আবারও অসন্তোষ দেখা দিতে পারে।
এ বিষয়ে জানতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন শাখায় অতিরিক্ত সচিব পদমর্যাদার ওই কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সেটা সম্ভব হয়নি। তার পিও রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘স্যার অফিসে নেই। তিনি দুদিনের ছুটিতে আছেন।’
জানা গেছে, অর্থমন্ত্রী ফাইল ফেরত আনার পরই তিনি ছুটি নিয়েছেন।
এদিকে বেতন স্কেলে সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল পুনর্বহাল এবং উপজেলা পরিষদকে কার্যকর করার নামে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে একক কর্তৃত্ব দেওয়ার সার্কুলার বাতিলের দাবিতে আন্দোলনে নামছে প্রকৃচি-বিসিএস সমন্বয় কমিটি। একই সঙ্গে মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব থেকে সচিব/সিনিয়র সচিব পর্যন্ত সব পর্যায়ে মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট ক্যাডার কর্মকর্তাদের পদায়নের মাধ্যমে কৃত্য পেশাভিত্তিক জনপ্রশাসন গড়ে তোলা, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য নিরসন, বঙ্গভবন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সকল ক্যাডারের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, সকল ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিসে পদোন্নতির সমান সুযোগ প্রদান, নিজস্ব ক্যাডার ও ফাংশনাল সার্ভিসবহির্ভূত সকল ধরনের প্রেষণ বাতিলের দাবি জানিয়েছে তারা। রাইজিংবিডি
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন