বৈশাখে স্বাস্থ্য সমস্যা : প্রতিরোধে করণীয়
বাঙালির দরজায় বৈশাখ কড়া নাড়ছে। বাতাসে নতুন বছরের আহ্বান। শহরে ডাকছে রমনার বটমূল, মঙ্গল শোভা যাত্রা, পান্তা ইলিশের উৎসব। গ্রামে হালখাতা, বৈশাখেী মেলা। দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো তো আছেই। আছে নানারকম অনুষ্ঠান আয়োজন। এই উৎসবের জমাট আনন্দে শরীরটা যেন ঠিক থাকে, অসুখ বাঁধিয়ে নিরানন্দের কারণ যেন না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
এই মৌসুমের একটি অন্যতম স্বাস্থ্যঝুঁকি হলো বাহিরের বিভিন্ন খাবার। সেখান থেকে হতে পারে ফুড পয়জনিং। পান্তা খেয়ে প্রতিবছরই অনেকেরই ফুড পয়জনিং হতে দেখা যায়। এতে পান্তা খাওয়ার সময় সাবধান। ঠিকমত স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বানানো হয়েছে কি না নিশ্চিত হওয়াটা জরুরি।
মনে রাখতে হবে সময়টা গরমের, বাইরে তীব্ররোদ, গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ। যখন ঘর থেকে বের হবেন, ঘুরবেন প্রচণ্ড ঘাম হবে শরীরে। শরীর থেকে লবণ পানি বেরিয়ে গিয়ে হবে পানি শূন্যতা।
পানি শূন্যতা হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, মাথা ঝিম ঝিম করে। রক্তচাপ কমে যায়। শিশু ও বৃদ্ধরা সহজেই ধরাশায়ী হয়ে যেতে পারে পানিশূন্যতায়। অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে, এমনকি ক্ষেত্র বিশেষে কিডনিও আক্রান্ত হতে পারে।
গরমে হিটস্ট্রোক একটি ভয়ংকর সমস্যা। হিটস্ট্রোক এর আগে প্রথমে হয় হিট ক্র্যম্প। শরীর ব্যথা করে, পিপাসা লাগে, শরীর দুর্বল অনুভূত হয়। এর পরই আসে হিট একজশন। এই অবস্থায় রোগীর শ্বাস কষ্ট হয়, মাথাব্যথা করে, রোগীর চেতনা লুপ্ত হয়, আবোল তাবোল কথা বলতে পারে। এ রকম অবস্থায় দ্রুত ব্যবস্থা না নিতে পারলে রোগীর শরীরে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের যে ব্যবস্থা তা ব্যাহত হয়। তখন রোগীর তাপমাত্রা বাড়তে থাকে। বাড়তে বাড়তে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইটও ছাড়িয়ে যায়। সেময় রোগীর আর ঘাম বের হয় না। ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়, লাল হয়ে যায়। রক্তচাপ কমে যায়, নাড়ির স্পন্দন ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে যায়। একপর্যায়ে রোগী অজ্ঞান হয়ে যায়, এমনকি শকেও চলে যায়। এই অবস্থায় রোগীকে দ্রুত আইসিইউতে নিতে না পারলে রোগী মারা যেতে পারে।
গরমে পিপাসা মেটাতে অনেকেই এই সময় বাইরের পানি পান করেন। বিক্রেতার কছে থেকে রং দেওয়া পানীয় পান করেন। রাস্তার পাশে বানানো আখের রস খায় অনেকেই। এগুলো পানিবাহিত রোগের অন্যতম উৎস। টাইফয়েড, আমাশয়, ডায়রিয়া, হেপাটাইটিসের মতো রোগ এই সময়টায় অনেক বেশি দেখা যায়।
অতিরিক্ত গরমে সূর্য অতি বেগুনি রশ্মির কারণে কারো কারো ত্বকে এলার্জি দেখা দিতে পারে। ত্বকে ফুসকুড়ি, লাল লাল র্যাশ, চুলকানি হতে পারে। ঘামাচি এই সময়ে ত্বকের একটি অতি সাধারণ সমস্যা। এ ছাড়া ঘাম শরীরে জমে ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে।
এসব সমস্যা থেকে দূরে থাকতে হলে কিছু প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
- বাইরে বের হওয়ার সময় ছাতা, ক্যাপ, রোদ চশমা, পানির বোতল সঙ্গে নেবেন।
- বাইরের খোলা পানি পান করবেন না। রাস্তার পাশে তৈরি করা আখের রস, কেটে রাখা তরমুজ খাবেন না। কিছুক্ষণ পর পর বিশ্রাম নেবেন। প্রচুর পানি ও ওরস্যালাইন পান করবেন।
- পরিষ্কার,পাতলা, ঢিলেঢালা, সুতি কাপড় ব্যবহার করবেন।
- শরীরের পাউডার লাগাবেন।
- চা কফি কম পান করবেন। কোল্ড ড্রিংক্স এড়িয়ে যাবেন। এগুলো পানিশূন্যতাকে আরো বাড়িয়ে দেয়।
- এ সময় প্রয়োজনে দুই তিনবারও গোসল করতে পারেন।
- টাটকা খাবার খাবেন। গুরুপাক খাবার এড়িয়ে চলবেন। অতিরিক্ত ঝাল দেওয়া ভর্তা বা শুঁটকি খাবেন না। এতে এসিডিটি বেড়ে যেতে পারে।
- গরমে কেউ যদি অসুস্থ বোধ করেন, দ্রুত ঠান্ডা জায়গায় নিয়ে যেতে হবে। কাপড় যথা সম্ভব খুলে দিয়ে বাতাস করতে হবে। ভেজা কাপড় দিয়ে গা মুছে দিতে হবে। প্রয়োজন গোসল করিয়ে দিতে হবে।
- কেউ যদি হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হয় বা অজ্ঞান হয়ে যায় তাহলে দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
- প্রবীণ ও শিশুদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
নতুন স্বপ্ন নিয়ে আসুক নতুন বছর। আনন্দময় হোক বর্ষবরণ। উৎসবের হাসিমুখ যেন অসুখের বিষাদে মলিন না হয়।
লেখক : আবাসিক চিকিৎসক, বিএসএমএমইউ।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন
জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন