বৌদিকে খুব ভাল লাগত, বলছেন ননদ
নামটাই আর শুনতে চান না ব্রততী ও প্রণয়জ্যোতি গুপ্ত। সেই কোন কালের, মাত্র ক’বছরের সম্পর্ক। তার ঠেলায় এখন লোকসমাজে মুখ দেখানোই দায় হয়েছে ব্রততী-প্রণয়জ্যোতির (নাম পরিবর্তিত)। সম্পর্কে যাঁরা ইন্দ্রাণী মুখোপাধ্যায়ের প্রাক্তন ননদ-ননদাই। যে কোনও টিভি চ্যানেল খুললে, খবরের কাগজের প্রথম পাতা খুললে এখন একটাই নাম— ইন্দ্রাণী। আর তাঁর কথা জিজ্ঞেস করতেই ব্রততীদেবী ও তাঁর স্বামী প্রণয়জ্যোতির মুখে শুধু একটাই কথা, ‘‘যা জানি, যেটুকু জানি, সব বলতে পারি, শুধু আমাদের নামটা উল্লেখ করবেন না, প্লিজ।’’
ব্রততী শিলচরে একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি করেন। স্বামী প্রণয়জ্যোতি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক। বাড়ি হাইলাকান্দিতে। ১৯৯৯ সালে বিয়ে হয়েছে তাঁদের। তার আগেই ব্রততীর বাবা মারা গিয়েছিলেন। তাই তাঁর বিয়েতে কনে সম্প্রদানের কাজটা তাঁর দাদা সিদ্ধার্থই করেন। সিদ্ধার্থ মানে ইন্দ্রাণীর প্রথম ‘স্বামী’।
ইন্দ্রাণীর সঙ্গে এর বহু আগেই অবশ্য ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল সিদ্ধার্থর। তাই ইন্দ্রাণীর সঙ্গে প্রণয়জ্যোতির আলাপই হয়নি। শুধু তা-ই নয়, বিয়ের পর বহু দিন প্রণয়জ্যোতি জানতেনই না যে সিদ্ধার্থ আগে কোনও মহিলার সঙ্গে লিভ ইন করতেন, তাঁদের দু’টি সন্তান রয়েছে। প্রণয়জ্যোতির কথায়, ‘‘যখন জানতে পারি, তখন আর সিদ্ধার্থদের সঙ্গে ইন্দ্রাণী বা তাঁর সন্তানদের কোনও যোগাযোগ নেই। এমনকী, সিদ্ধার্থও বাড়িঘরের সঙ্গে সম্পর্ক কাটছাঁট করে দিয়েছে।’’ শেষ কবে সিদ্ধার্থের সঙ্গে তাঁর দেখা হয়েছিল, মনেই করতে পারলেন না প্রণয়বাবু।
সে কথা মনে করতে পারছেন না ব্রততীও। ফোনেও দাদার সঙ্গে কথা বন্ধ অনেক দিন। দাদার সঙ্গেই যখন যোগাযোগ নেই, তখন ইন্দ্রাণীর খবর কে রাখে! ‘‘তাই টিভির পর্দায় যে দিন খবরটা শুনি, প্রথমে ধরতেই পারিনি,’’ বলছিলেন ব্রততী। ‘‘তার পর যখন বারবার নামগুলো কানে আসছিল, ইন্দ্রাণী…শিনা… তখন বুঝতে পারি, এরা তো আমাদেরই ঘরের মানুষ। যোগাযোগ না-থাকলেও, ও তো আমার নিজের ভাই-ঝি। এত খারাপ লেগেছে…’’ গলা বুজে আসে ব্রততীর।
শিনার প্রথম জন্মদিনটার কথা বারবার মনে পড়ে যাচ্ছিল তার পিসির। ব্রততীর কথায়, ‘‘তখন কলেজে পড়ি। শিনার মিষ্টি মুখখানা চোখে ভাসছে। আর তাকে দেখেছি বলে মনে পড়ে না। মিখাইলকে যখন শেষ দেখি, সে ৫-৬ মাসের শিশু। দাদা শিনা-মিখাইলকে নিয়ে ইন্দ্রাণীর বাবা-মার সঙ্গেই থাকতেন। হঠাৎ এক দিন শুনি, ছেলেমেয়েদের ফেলে বৌদি পালিয়েছে!’’ ব্রততী জানান যে, প্রথমে তাঁরা ইন্দ্রাণীর পালানোর কথা বিশ্বাসই করেননি। ‘‘কারণ বউদির সঙ্গে দাদার সম্পর্ক ভাল ছিল। আমাদের সঙ্গেও ভাল সম্পর্ক ছিল। আমাদের সকলের ভাল লাগত ওকে। এমনকী, মা-ও বৌমার প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলেন। সবার মন জয় করে নিয়েছিল ও,’’ বললেন ব্রততী।
এই সেই ইন্দ্রাণী, মানতে কষ্ট হচ্ছে ব্রততীদেবীর। আরও খারাপ লাগছে ইন্দ্রাণী তাঁর নিজের বাবা-মা সম্পর্কে যা বলছেন, সেই সব শুনে। ব্রততীদেবীর দাবি, উপেন্দ্র আদপেই ইন্দ্রাণীর সৎ বাবা নন, নিজের বাবা। ব্রততীর কথায়, ‘‘ইন্দ্রাণীর বাবা-মা, উপেন্দ্র ও দুর্গারানি বরা খুব ভাল মানুষ। স্বামী-সন্তান ছেড়ে মেয়ে চলে যাওয়ার পরে দু’টি ছেলেমেয়েকে নিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিলেন দাদা। তখন দাদাকে মনোবল জুগিয়ে গিয়েছিলেন ইন্দ্রাণীর বাবা-মা।’’ সিদ্ধার্থ অবশ্য ইন্দ্রাণীর সঙ্গে বিচ্ছেদের পর বেশি দিন আর সেই বাড়িতে থাকতে চাননি। তার পর সিদ্ধার্থ ফের বিয়ে করেন। তখনই কথা ওঠে, শিনা-মিখাইলের কী হবে? উপেন্দ্রবাবুরা তখন তাঁদের আইনি প্রক্রিয়া মেনে দত্তক নেন। তাই স্কুলের শংসাপত্রে মা-বাবার জায়গায় দাদু-দিদার নাম রয়েছে, জানান ব্রততীদেবী। তাঁর স্বগতোক্তি, ‘‘সেই মা-বাবাকে পুঁজি করে যে কেউ এমন গল্প ফাঁদতে পারে, ধারণা ছিল না!’’ ব্রততীর দাবি, আগাগোড়া উল্টোপাল্টা বলে চলেছেন ইন্দ্রাণী। মামলার মোড় ঘোরাতে বা তদন্তকারীদের বিভ্রান্ত করতে অপরাধী নানা কথা বলতে পারে। কিন্তু নিজের বৃদ্ধ বাবাকে যে কেউ যৌনলিপ্সু সৎ পিতা বলতে পারে, দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেন না ইন্দ্রাণীর প্রাক্তন ননদ!
কিন্তু সিদ্ধার্থবাবু কেন বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না? ‘‘আমাদেরও মনে একই প্রশ্ন ঘুরপাক খায়,’’ জানালেন প্রণয়বাবু। ব্রততীদেবী বলেন, ‘‘ইন্দ্রাণীর পালিয়ে যাওয়ার ঘটনায় দাদার মনটা একদম ভেঙে গিয়েছিল। ও প্রথমে অরুণাচলপ্রদেশে চলে যায়। তার পরে কলকাতা। সব ভুলে থাকতে গিয়ে আমাদের সঙ্গেও যোগাযোগ কমিয়ে দেয়।’’ সিদ্ধার্থবাবু আগে তাঁর মা মায়ারানি দাসের খোঁজখবর রাখতেন। বাড়িতে ভাই শান্তনুর সঙ্গেও তাঁর কথা হতো বলে জানিয়েছেন ব্রততী। তবে বললেন, ‘‘আমায় তেমন ফোনটোন করত না। আস্তে আস্তে মা-ভাইয়ের সঙ্গেও ফোনে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।’’
দু-দিন আগে তাঁর মা বলছিলেন, কালীঘাটে রয়েছেন সিদ্ধার্থ। ব্রততীদেবী বলেন, ‘যে-টুকু জানি, দাদা দমদমে থাকেন।’’ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা ও গবেষণার কাজে ব্যস্ত প্রণয়জ্যোতিবাবুকে সিদ্ধার্থের হালহকিকতের কথা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘‘ওর ঠিকানা? লোকটার চেহারাই মনে করতে পারছি না। বিয়ের দিন দেখেছিলাম। তার পর হয় তো দু’এক বার। শাশুড়িকে দেখতে বছরে দু’বার করিমগঞ্জে যাই বটে, কিন্তু তখনও সিদ্ধার্থকে নিয়ে আমাদের কোনও কথা হয় না।’’
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন