ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে, আড়ালে মাদকের আস্তানা
অনিয়মের বেড়াজাল থেকে যেন কোনোক্রমেই বের হতে পারছেননা ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। ডিউটি ডাক্তার বসে থেকে ঝাড়ুদারকে দিয়ে করান সেলাই, ব্যান্ডেজের কাজ। হাসপাতালের সীমানা প্রাচীরের মধ্যেই বসছে মাদকের আড্ডা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় চলে এসব অপকর্ম।
এ বিষয়ে চলতি বছরের ২৮ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে সেবার নামে যা হচ্ছে শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার পর লোক দেখানো একটি অনিয়ম দূর করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের সাধারণ গেইটে মাদকাসক্ত রক্তদাতারা বসে থাকতো, কিন্তু সংবাদ প্রকাশের পর এখন সেই গেইটে তাদেরকে বসতে দেখা যায়নি। এছাড়া হাসপাতলের কোনো অনিয়ম ও দুর্নীতি কমেনি বরং বেড়েছে।
অনুসন্ধানে জানা যায় আরো ভয়ঙ্কর কিছু তথ্য। তা হলো এই হাসপাতালের ডিউটি ডাক্তার বসে থেকে ঝাড়ুদারকে দিয়ে কাজ করান।
সর্বশেষ মঙ্গলবার দুপুর ১২ টায় সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, দিপু নামে সদর হাসাপাতালের এক ঝাড়ুদার একে রোগীর চোখের ঠিক উপরে সেলাই করছেন ও মাথায় ব্যান্ডেজ বেধে দিচ্ছেন। ওই সময়ই হাসপাতালের কর্তব্যরত ডাক্তার তৌহিদ ঔষুধ কোম্পানির তিনজন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলছেন। এর আগে গত শনিবার আরেক রোগীর শরীরে একই ঝাড়ুদার ইনজেকশন পুশ করেছিলেন। তখনো দায়িত্বরত ডাক্তার হাবিবুর রহমানকে আড্ডারত অবস্থায় দেখা যায়।
এ বিষয়ে ডাক্তার তৌহিদকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এসব ছোটখাটো কাজ (ইনজেকশন ও সেলাই) যে কাউকে দিয়েই করানো যায়। ‘তাই বলে একজন ঝাড়ুদারকে দিয়ে?’ এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি কোনো উত্তর দিতে পারেননি।
এদিকে সদর হাসপাতালে দিনে-দুপুরে চলে মাদক কেনা-বেচা। সন্ধ্যার পরে মাদকসেবীদের আনাগোনা ব্যাপক বেড়ে যায়। এতে বিভিন্ন হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে হাসপাতালে সেবা নিতে আসা রোগীদের।
স্থানীয়দের অভিযোগ, একটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় এ মাদক আস্তানা চলছে। এর আগেও এ রকম একটি মাদক আস্তানা ছিল বলে জানান হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে বর্তমানে এ আস্তানায় গাঁজা, মদ, ফেনসিডিল ও ইয়াবা সহজেই পাওয়া যায়।
সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যায়, হাসপাতাল চত্বরের মূল ভবনের পিছনে (পূর্ব দিকে) এ আস্তানাটি অবস্থিত। এখানে সারাদিন মাদক কেনাবেচা হলেও সন্ধ্যার পর এর পরিমাণ বহুগুণে বেড়ে যায়। শহরের বিভিন্ন এলাকার মাদকসেবী এখানে এসে মাদক নেয়। আবার অনেকেই এখান থেকে মাদক কিনে নিয়ে যায়। এ সব নেশাগ্রস্তের মধ্যে সদর হাসপাতালে রক্তদাতাদের উপস্থিতিও চোখে পড়ার মতো। যে সব লোক সদর হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকে রক্ত বিক্রি করে থাকে, তাদের রাত-দিন এই আস্তানায় নেশা করতে দেখা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতাল এলাকার কয়েকজন ওষুধ ব্যবসায়ী জানান, ‘একটি রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা এখানে মাদক ব্যবসা বসিয়েছেন। তাদের মদদেই এক শ্রেণীর লোক এখানে মাদক ব্যবসা করছে।’
এ বিষয়ে মঙ্গলবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালের পরিচালক ডা. শওকত আলি বলেন, ‘এর আগেও এখানে একটি মাদক আস্তানা থাকার কথা শুনেছি। আগে যিনি এই হাসপাতলের পরিচালকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি তা উচ্ছেদ করেছিলেন। কিন্তু আবার মাদক ব্যবসায়ীরা আস্তানা গড়ে তুলেছে বলে জানা নেই। দ্রুত এ আস্তানা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি ঝাড়ুদারকে দিয়ে চিকিৎসা করানোর বিষয়ে অচিরেই ব্যাবস্থা নেবেন বলে জানান। তবে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা আপনি আগেও এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, তাই এখন পর্যন্ত কি ব্যবস্থা নিয়েছেন এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি হাসপাতালের গেইটে আর মাদকসেবী রক্তদাতাদের বসতে দেইনা।’ কিন্তু এছাড়াও হাসপাতালে অনেক অনিয়ম হচ্ছে সেগুলোর কি করলেন জানতে চাইলে তিনি অচিরেই এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।
রোগীদের ঠিক মতো চিকিৎসা না দেওয়া, নেশাগ্রস্তদের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করা, রাত ১২ টার পর কোনো ডাক্তারকে খুঁজে না পাওয়া, হাসপাতালের বরাদ্ধকৃত ঔষধ উধাও হয়ে যাওয়া, মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ কতৃক রোগী ও সাংবাদিক হয়রানী, দালাল কর্তৃক রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার মতো অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ সব সময় থাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
কোকেনের সবচেয়ে বড় চালানে জড়িতদের নাম পেয়েছে ডিএনসি
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর দেশে কোকেনের সবচেয়ে বড় চালান জব্দের ঘটনায়বিস্তারিত পড়ুন
শপথ করছি, মাদক ছোঁব না
মাইকে ঘোষণা হলো ‘এখন মাদকের বিরুদ্ধে আমরা শপথ নেবো’। শপথবিস্তারিত পড়ুন
ক্ষতি বছরে ১ লাখ কোটি ডলারঃ ধুমপানের পিছনে
ধুমপানে প্রতি বছর বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষতি হয় এক ট্রিলিয়ন বাবিস্তারিত পড়ুন