ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসা কী ভাবে করবো?
রক্তের রোগ বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে। এ বিষয়ে কথা বলেছেন ডা. তাশমিম ফারহানা দীপ্তা। বর্তমানে তিনি বারডেম জেনারেল হাসপাতাল এবং ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজের হেমাটোলজি এবং ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।
প্রশ্ন : রক্তরোগ বলতে আমরা কী বুঝি?
উত্তর : জন্মগত অথবা কোনো ক্লোনাল কারণে, ক্রমাগত আমাদের রাসায়নিক বা পরিবেশগত বিষয়ের জন্য ক্রোমোজোমাল মেকআপ অথবা জেনিটিক্যাল বিষয়ে যদি কোনো পরিবর্তন হয়ে রক্তের কোষের কোনো রোগ হয়, মানে রক্তের উপাদানগুলোর কোনো রোগ হয়, তখনই আমরা তাকে রক্তের রোগ বলি।
প্রশ্ন : সাধারণত কী কী ধরনের রক্তরোগ আপনারা রোগীদের মধ্যে পেয়ে থাকেন?
উত্তর : সাধারণত আমরা দুই ধরনের রক্তরোগ পেয়ে থাকি। একদলকে বলা হয় ক্যানসার। শিশুদের এবং বয়স্ক মানুষের ক্যানসার হয়। আরেকটি দল রয়েছে যেটি সাধারণত ক্যানসারে পরিণত হয় না। একে সাধারণত বিনাইন দল বলে থাকি। এখানে জন্মগত রোগ, থেলাসেমিয়া এগুলো থাকে। এটা যে সবসময় কম ক্ষতিকর সেটি নয়। এখন তো ক্যানসারের অনেক সঠিক চিকিৎসাও এসেছে। রোগী ভালোও হয়ে যায়। তবে কিছু বিনাইন রোগ রয়েছে, যেগুলো সবসময় বহন করতে হয়। জন্মগত অসুখ যেমন থেলাসেমিয়া বা হিমোফিলিয়া- এসব অসুখ এর উদাহরণ।
প্রশ্ন : আর কী কী রোগ রয়েছে যেগুলো বিনাইনের আওতাধীন? আর কী কী রোগ রয়েছে যেগুলো রক্তের ক্যানসারের মধ্যে রয়েছে?
উত্তর : কোনো কারণে রক্ত যদি নিজেই ভেঙে যায় তখন অটোইমিউন, হেমোলাইটিক এনিমিয়া হতে পারে। যেখানে গুরুতর রোগীদের বাঁচানো খুবই কঠিন এবং সাধারণত অস্থি মজ্জা প্রতিস্থাপন বা স্টেম সেল ট্রান্সপ্লানটেশন না করলে বেশির ভাগ রক্তরোগের রোগীকে বাঁচানো সত্যিই কঠিন হয়ে পড়ে। আর রক্তের ক্যানসারেরও এ রকম আছে কিছু রোগী, ওষুধে বা চিকিৎসায় ভালো হয়; ক্যামোথেরাপিতে। আর কিছু বিষয়ের জন্য বোনমেরুট্রান্সপ্লান্ট অপরিহার্য।
প্রশ্ন : থেলাসেমিয়ার প্রাথমিক পর্যায়ে কী কী ধরনের লক্ষণ প্রকাশ পাবে?
উত্তর : থেলাসেমিয়ায় বাবা ও মা- দুজনই বাহক হয়ে থাকেন তাহলে বাচ্চা জন্মের পর থেকে এনিমিয়াতে ভোগে। পরবর্তীকালে দুই বছর পর সাধারণত তার যে বাচ্চাদের হিমোগ্লোবিন যাকে আমরা ফিটাল হিমোগ্লোবিন বলি, তার মাত্রার এখানে একটি পরিবর্তন থাকে। সাধারণত আলফা থেলাসেমিয়া এবং বিটা থেলাসেমিয়া- এ দুটো ভাগে ভাগ করা যায়। বিটা থেলাসেমিয়া আমাদের দেশে অনেক বেশি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত অনুসারে, প্রায় চার ভাগ। আরেকটি রোগ রয়েছে হিমোগ্লোবিন ডিজঅর্ডার। আমাদের এখানে এটি প্রায় ছয় ভাগ। বাবা অথবা মা একজন বিটা থেলাসেমিয়ায় আক্রান্ত থাকেন, আর আরেকজন যদি এই রোগ বহন করেন, সেক্ষেত্রে যখন সন্তান জন্ম দেন তখন তাদের সন্তানরা খুবই জটিল একটি প্রক্রিয়ায় চলে যায়।একে বলা হয় ই-বিটা থেলাসেমিয়া। এই অসুখে বাচ্চাকে সারাজীবন রক্ত পরিসঞ্চালনের ওপর নির্ভর করতে হয়।
প্রশ্ন : আপনি যেটি বলছিলেন থেলাসেমিয়া দিন দিন বেড়েই যাচ্ছে, তার পেছনে আসলে কী কারণ মনে করেন?
উত্তর : যদি এই বিষয়ে জাতীয় পদ্ধতি নিতে পারি ভালো হয়। যেমন ছোট বাচ্চাদের ইপিআই অনুষ্ঠান। যখন আমরা ভ্যাকসিন দেই, সেই সময়ে বাচ্চাদের যদি আমরা হিমোগ্লোবিনের বিষয়টি দেখে নিতে পারি ভালো হয়। আরেকটি আছে জাতীয় পরিচয়পত্র, আমরা যে ন্যাশনাল আইডি কার্ড তৈরি করি, এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এখানে রক্তের গ্রুপটা রয়েছে। তবে আমরা জানি না নাগরিকদের হিমোগ্লোবিনের ধরনটা কী। আমরা যদি হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফ্লোরের করে রাখি, তখন বিয়ে হওয়ার আগে, আমরা স্ক্রিন আউট করতে পারি। তখন বিয়ের আগে আর হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফ্লোরের প্রয়োজন পড়ে না।
প্রশ্ন : আর যদি কেউ ব্যক্তিগত পর্যায়ে প্রতিরোধ আগে থেকেই চায়, তাদের জন্য পরামর্শ কী?
উত্তর : তাদের প্রতি উপদেশ থাকবে তারা যদি হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফ্লোরোসিসটা দেখে নেন ভালো হয় এবং কারো পরিবারে যদি একটি বাচ্চা থেলাসেমিয়া বা হিমোগ্লোপ্যাথির থাকে, সে ক্ষেত্রে পরবর্তী বাচ্চা নেওয়ার সময় অবশ্যই তাদের চিন্তা করতে হবে। যদি নিজে হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফ্লোরোসিস করে জেনে নেন তাঁরা উপকৃত হবেন।
প্রশ্ন : ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত রোগীরা কী কী ধরনের চিকিৎসা খুব সহজে পেতে পারেন?
উত্তর : আমাদের দেশে আসলে ক্যানসারের রোগীদের অর্থনৈতিক সাহায্য করার জন্য কোনো চিকিৎসা নেই। এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি পর্যায়ে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করতে হয়। যখন ক্যানসার হয় একজন মানুষের, তখন পুরো বিষয়কে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। প্রথমত হলো, অনেক নতুন নতুন চিকিৎসা আমাদের দেশে চলে এসছে। যাকে আমরা টারগেটেট থেরাপি বলি। তবে দুঃখজনক হলেও আমাদের দেশে কিছু উন্নত বিষয় অপ্রতুল। সেক্ষেত্রে কিছু চিকিৎসা দিয়ে থাকতে পারি। স্টমসেল ট্রান্সপ্লানটেশন যেখানে দরকার, সেখানে তো করতেই হবে। তা ছাড়া সাধারণ ওষুধ নির্ভরশীল ক্যামোথেরাপি দেওয়া যেতে পারে এবং যাঁরা একদম শেষ পর্যায়ে তাঁরা প্যালিয়েটিভ থেরাপিটা গ্রহণ করতে পারেন। এই পদ্ধতিগুলো আমাদের দেশে সহজলভ্য।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
মানবদেহে আদার অনেক উপকার
আমাদের দিনে কয়েকবার রঙিন খাবার খাওয়া উচিত, কিন্তু আপনি কিবিস্তারিত পড়ুন
রেড মিট খাওয়ার আগে কিছু পরামর্শ জেনে নিন
কোরবানি ঈদে বেশ কয়েকদিন টানা খাওয়া হয় গরু বা খাসিরবিস্তারিত পড়ুন
জাপান ও ইউরোপে বিরল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ
জাপানে, একটি বিরল “মাংস খাওয়া ব্যাকটেরিয়া” এর কারণে এক রোগবিস্তারিত পড়ুন