বড়ই গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে ৪ শিশু হত্যা
মাসখানেক আগে বড়ই গাছ কাটাকে কেন্দ্র করে প্রতিবেশী আব্দুল হাই বাঘালের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এরই জের ধরে শুক্রবার তার ছেলেসহ ওই চার শিশুকে বাচ্চু মিয়া নামে স্থানীয় এক ব্যক্তির সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে তুলে নিয়ে যান আব্দুল আলী বাঘাল। টের পেয়ে তিনি ওই দিনই বিষয়টি পুলিশকে জানান। কিন্তু পুলিশ তাদের উদ্ধারে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। অবশেষে বাড়ির প্রায় এক কিলোমিটার দূরে বালুগর্তে চার শিশুর মৃতদেহ পাওয়া গেল। নিহতদের শরীরের বিভিন্ন অংশে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এমনটাই জানালেন, নিহত মনিরের বাবা আবদাল মিয়া।
ঘটনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার সুন্দ্রাদিঘী গ্রামে আটটি পঞ্চায়েত রয়েছে। মাসখানেক আগে একটি বড়ই গাছ কাটা নিয়ে বাঘাল পঞ্চায়েত ও তালুকদার পঞ্চায়েতের মধ্যে বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে দুই পঞ্চায়েতের মধ্যে কয়েকবার ঝগড়াও হয়।
এসব ঘটনা ও ঝগড়ার মধ্যেই গত শুক্রবার বাড়ির পাশের খেলার মাঠ থেকে নিখোঁজ হয় সুন্দ্রাদীঘি গ্রামের পাঁচ শিশু। এরা হলো- ওয়াহিদ মিয়ার ছেলে সুন্দ্রাদিঘী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জাকারিয়া আহমেদ শুভ (৮), ওয়াহিদের চাচাত ভাই আব্দুল আজিজের ছেলে চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র তাজেল মিয়া (১০), আবদাল মিয়ার ছেলে প্রথম শ্রেণির ছাত্র মনির মিয়া (৭) এবং প্রতিবেশী আব্দুল কাদিরের ছেলে সুন্দ্রাদিঘী মাদ্রাসার ছাত্র ইসমাইল হোসেন (১০)।
বুধবার সকালে বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে কামাইছড়া নদীর ইছাবিলে বালুর নিচ থেকে এ চার শিশুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। গ্রামবাসী জানায়, ইছাবিলে বুধবার সকালে এক শ্রমিক বালুর গর্তের মধ্যে পড়ে থাকা অবস্থায় লাশগুলো প্রথমে দেখতে পান। এ খবরে মুহূর্তের মধ্যে শত শত গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে বাহুবল থানা পুলিশ খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করতে ঘটনাস্থলে এসে গর্ত থেকে লাশগুলো উত্তোলন করে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন সিলেটের ডিআইজি মিজানুর রহমান, হবিগঞ্জের পুলিশ সুপার জয়দেব কুমার ভদ্র, সিআইডি, ডিবি ও র্যাব সদস্যরা।
এদিকে চার শিশু খুন হওয়ার পেছনে পঞ্চায়েতের মধ্যকার দ্বন্দ্বকে দায়ী করছেন গ্রামবাসী। অনেকে জানান, গ্রামের আট পঞ্চায়েতের মধ্যে তালুকদার পঞ্চায়েতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন হাজি মাস্টার আব্দুল খালেক। অপরদিকে বাঘাল পঞ্চায়েতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন আব্দুল আলী বাঘাল চৌকিদার। এ ঘটনার পর থেকে বাঘাল পঞ্চায়েতের নেতৃত্বদানকারী আব্দুল আলী বাঘাল চৌকিদারসহ তার লোকেরা গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে।
নিহতের চাচাতো বোন আসফিয়া আক্তার বিলাপ করে বলেন, ‘ওরা আমার ভাইদের মেরে পালিয়ে গেছে। তাদের ধরে নিয়ে আসুন। বিচার করুন। আমরা র্যাবের কাছে তাদের ব্যাপারে বলেছি।’ এ সময় নিহতদের বাড়ির আশপাশে সিআইডি, ডিবি, র্যাব সদস্যরা অবস্থান করছিল।
হত্যাকারীদের ধরিয়ে দিলে লাখ টাকা পুরস্কার দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে পুলিশের সিলেট বিভাগের ডিআইজি মিজানুর রহমান বলেন, প্রকৃত ঘটনা বের করতে পুলিশের একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। অবশ্যই হত্যাকারীদের বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।
বাহুবল মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোশারফ হোসেন জানান, মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ভাদেশ্বর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মদ্দছির মিয়া যারাই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তাদের গ্রেফতার করতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে জোর দাবি জানান। উল্লেখ্য, ঘটনার পরদিন শনিবার নিহত জাকারিয়া আহমেদ শুভর বাবা ওয়াহিদ মিয়া বাহুবল মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বানিয়াচং উপজেলায় দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রে, ৩ জনে মৃত্যু
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষের সংঘর্ষে রণক্ষেত্রেবিস্তারিত পড়ুন
হবিগঞ্জে ট্রাক-প্রাইভেটকার সংঘর্ষে ৫ জন নিহত
হবিগঞ্জের মাধবপুরের হরিতলা বাদশা গেইট এলাকায় ট্রাক ও প্রাইভেটকার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন
‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা
হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জে ‘ধর্ষণে ব্যর্থ হয়ে’ এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করাবিস্তারিত পড়ুন