বয়স ১১, তবুও রোজ তার ১৫০ টাকার যুদ্ধ!
তামজিদ আহমেদ। বয়স সাকুল্যে ১১ বছর। পড়ে বনশ্রীর রিবাক ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে। অন্য শিশুদের মতো রোজ স্কুল থেকে ফিরে হাতমুখ ধুয়ে খেয়েদেয়ে বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে যাওয়া হয় না তামজিদের। তার বদলে এক হাতে চা ভর্তি ফ্লাস্ক আর অন্য হাতে বালতি নিয়ে তাকে ছুটতে হয় হাতিরঝিল এলাকায়।
কারণ এই ফ্লাস্কভর্তি চা বিক্রির টাকায় চলে তামজিদের লেখাপড়া আর সংসারের আংশিক খরচ।
অভাবের সংসারে জন্ম নেওয়ায় মাত্র ১১ বছরেই তামজিদকে নামতে হয়েছে জীবনযুদ্ধে! প্রতিদিন অন্তত ১৫০ টাকা আয় করতে না পারলে টান পড়ে সংসারের খরচে।
যানজট আর ব্যস্ত রাজধানীর বাসিন্দাদের কাছে যেন খোলা পৃথিবী ‘হাতিরঝিল’। ছুটির দিন কিংবা অবসরে অনেকেই প্রাণ ভরে নিশ্বাস নিতে চলে আসে সেখানে। সেই ফাঁকে ওই ঘুরতে যাওয়া মানুষদের ঘিরে অনেকেই ভাসমান দোকান দিয়েছে। কেউ আবার হাতের চায়ের ফ্লাক্স নিয়ে ফেরি করে বিক্রি করে চা।
এই চা বিক্রেতাদেরই একজন তামজিদ। অবশ্য শুধু একজন তামজিদ নয়, হাতিরঝিল এলাকায় গেলে দেখা পাওয়া যাবে তার মতো আরো অনেক শিশুর।
গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে হাতিরঝিলে দেখা হয় তামজিদের সঙ্গে। পরনে ফুলপ্যান্ট ও সোয়েটার। চা পানের ফাঁকে কথা হয় তার সঙ্গে। নিষ্পাপ দৃষ্টি আর হাস্যোজ্জল মুখের তামজিদকে তাঁর সম্পর্কে জানতে চাইলে জানায়, তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে সেই সবার ছোট। বড় দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। আরেক বোনেরও বিয়ের কথা চলছে। বড় ভাই কাজ করেন একটি টেইলার্সে। একটি দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর থেকে বাবা বাড়িতেই থাকেন, কোনো কাজ করতে পারেন না। আর মা একজন গৃহিণী।
বনশ্রীর রিকাব ইন্টারন্যাশনাল স্কুলে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ক্লাস করে তামজিদ। এরপর বাড়ি গিয়ে ফ্লাস্ক ভর্তি করে চা নিয়ে সে নেমে পড়ে কর্মক্ষেত্রে। রাত ৮টা পর্যন্ত চলে চা বিক্রি।
পরিবারে স্বচ্ছলতা না থাকায় পড়াশোনার পাশাপাশি প্রতিদিনই চা বিক্রি করতে হয় বলে জানায় তামজিদ। হাতিরঝিল ঘুরে ঘুরে চা ফেরি করে সে। এককাপ চায়ের দাম ৫ টাকা। এক হাতে বড় ফ্লাক্স ভর্তি চা ও অন্য হাতে পানিভর্তি বালতিতে রাখতে হয় চায়ের কাপ। ছোট দুই হাতে ভারি ফ্লাস্ক আর বালতি বয়ে নিতে হয় শিশুটিকে।
তামজিদ জানায়, হাতিরঝিলে বিড়ি-সিগারেট বিক্রি করতে দেয় না নিরাপত্তা কর্মীরা। তাই সে সিগারেট সঙ্গে রাখে না। শুধু চা বিক্রি করে। ভালো বিক্রি হলে ফ্লাস্কের ৫০ কাপ চা-ই শেষ হয়ে যায়। এতে তার লাভ থাকে প্রায় ১৫০ টাকা। প্রতিদিনের সেই টাকা নিয়ে দেয় মায়ের হাতে। এরপর খেয়ে কিছুক্ষণ পড়াশোনা করে রাতে ঘুমিয়ে পড়ে সে।
এভাবেই চলছে মাত্র ১১ বছরের শিশু তামজিদের জীবন। তবু তো তামজিদ লেখাপড়া করার সুযোগ পাচ্ছে। হাতিরঝিলে এমন অনেক শিশুর দেখা মিলবে যারা কখনোই সেই সুযোগটুকুও পায়নি। বরং জীবনযুদ্ধে নেমে নরম হাতে ফ্লাক্স বহন করতে গিয়ে হাতে পড়েছে ফোসকা। অবশ্য সেসব শিশুর খবর আর কে-ই বা রেখেছে।
ব্যবসা কেমন চলছে জানতে চাইলে তামজিদ বলে, বেশি মানুষ থাকলে রাতের আগেই সব চা বিক্রি হয়ে যায়। অবশ্য কোনো কোনো দিন দু-চার কাপ চা অবিক্রিতও থেকে যায়। সেদিন লাভ একটু কম হয় তার।
এত ছোট বয়সে কাজ করার বিষয়ে তামজিদ জানায়, যেহেতু তার বাবা কাজ করতে পারেন না সেহেতু তাদের দুই ভাইকেই উপার্জন করতে হচ্ছে। বড় ভাইও উপার্জনের টাকা এনে মায়ের হাতে দেয়। এরপর সেখান থেকেই সংসার ও তামজিদের পড়াশোনার খরচ চলে। একদিন চা বিক্রি না করলেই সংসারে শুরু হয় খাবার সংকট। তাই বাধ্য হয়েই পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসা করতে হয়।
জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়ে একদিন নিজের সব সংকট কাটিয়ে উঠবে তামজিদ, তার জন্য এমন শুভকামনা রেখে চলে আসি হাতিরঝিল থেকে। পেছনে পড়ে থাকে তামজিদসহ আরো অনেক শিশু। পরের দিন সকাল থেকে যাদের আরেকটি নতুন যুদ্ধের দিন শুরু হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন