বৃহস্পতিবার, জুলাই ৩, ২০২৫

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

ন্যাশনাল ক্রাইম নিউজ পোর্টাল

চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিনের বর্ণনায় প্যারিস হামলা

ভয়ঙ্কর রাত কাটালাম, ভয়ঙ্কর! রীতিমতো যুদ্ধ চলছে…..

বাংলাদেশের চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন দীর্ঘদিন ধরে প্যারিসে বসবাস করছেন সপরিবারে। প্যারিসে যেখানে হামলা হয়েছে, সেখান থেকে কিছুক্ষণ বাসায় ফেরেন তিনি। কিন্তু তার মেয়ে চিত্র তখনো ওই এলাকার একটি ক্যাফেতে। ওই ক্যাফের সড়কেই বাতাক্লাঁ কনসার্ট হল, যেখানে শতাধিক মানুষ নিহত হয়েছে।

ঘটনার সময় শিল্পীর মেয়ে লুকিয়ে ছিলেন ক্যাফের বেসমেন্টে। সেখানে বসে আতঙ্কিত চিত্র কাছেই শুনেছেন গোলাগুলি, বোমার শব্দ। পুলিশ, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের ছোটাছুটি। ওই ক্যাফেতেও হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় অন্যান্যের সঙ্গে বেরিয়ে ছোটেন নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে। কিন্তু রাস্তায় আলো থাকলেও বাড়িঘর সব অন্ধকার। দরজা-জানালা-ফটক সব বন্ধ। কোথায় আশ্রয় নেবে মেয়ে! বাইরে চিত্র ছুটছে, আর বাসায় ভয়ংকর দুশ্চিন্তায় কাঁপছে শিল্পী শাহাবুদ্দিনের অন্তর।

প্যারিস হামলার সময় নিজের সেই ভয়ংকর পরিস্থিতির কথা শিল্পী বলেছেন কলকাতার আনন্দবাজার পত্রিকাকে। সেটি হুবহু নিচে তুলে দেয়া হলো।

“ভয়ঙ্কর রাত কাটালাম। ভয়ঙ্কর!

এখনও থেকে থেকে শিউরে উঠছি। আতঙ্ক কেমন একটা ঘোর লাগিয়ে দিয়েছে।

রাত তখন সাড়ে ৮টা। ডিনারের জন্য আমরা প্রস্তুত হচ্ছি। আমার মেয়ে চিত্র তখনও ফেরেনি। বাস্তিলের দিকে গিয়েছে। প্রত্যেক উইকএন্ডে-ই সে বন্ধুদের সঙ্গে বাস্তিলের দিকে যায়। তরুণ প্রজন্মের ভিড়ভাট্টা ওদিকেই বেশি। উইকএন্ডে ভিড় আরও বেশি থাকে। আমিও সন্ধেবেলা বাস্তিলের দিকেই গিয়েছিলাম। তরুণ চিত্রীদের একটা প্রদর্শনী চলছে। সেটা দেখে তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরেছি। জানি চিত্রর ফিরতে রাত হবে। সে ডিনার করেই ফিরবে। তাই আমি আর আমার স্ত্রী ডিনারের জন্য তৈরি হচ্ছি।

চিত্র ফোন করল। ত্রস্ত কণ্ঠস্বর। সে জানাল, খুব বিপদ। বাস্তিল এলাকার একটি ক্যাফের বেসমেন্টে সে লুকিয়ে রয়েছে আরও অনেকের সঙ্গে। সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। চিত্র বলছিল, ‘‘খুব গোলাগুলি চলছে। মনে হচ্ছে যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছে।’’

আমার তো বিশ্বাস হচ্ছিল না। স্ত্রীকে বললাম টিভি চালাতে। নিউজ চ্যানেল দেখে আমরা হতবাক। একটু আগেই যেখান থেকে ঘুরে এলাম, সেখানে এ কী অবস্থা! রীতিমতো যুদ্ধ চলছে। সেনাবাহিনী ছোটাছুটি করছে। গোলাগুলি চলছে। জানতে পারলাম ভয়ঙ্কর জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছে প্যারিস।

খুব টেনশন শুরু হয়ে গেল। শুধু ভাবছি মেয়েটাকে কখন দেখতে পাব। আদৌ দেখতে পাব তো? খুব অসহায় লাগছিল আমাদের। তবে চিত্র মাঝেমধ্যে সুযোগমতো ফোন করে নিজের খবর দিচ্ছিল। ওরা ক্যাফেতে বেশিক্ষণ লুকিয়ে থাকতে পারেনি। আলো নিভিয়ে সবাই বেসমেন্টে চলে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু যুদ্ধ এমন ভয়ঙ্কর আকার নিচ্ছিল যে ওরা ভয় পেয়ে যায়। যে রাস্তায় ওই ক্যাফেটা, সেই রাস্তাতেই বাতাক্লাঁ কনসার্ট হল। ফলে, বিস্ফোরণ, গোলাগুলি, আর্তনাদ, মৃত্যু— সব চলছিল চিত্রদের ঘিরেই। ওদের মনে হচ্ছিল ক্যাফেটাতেও বোমা হামলা হতে পারে। তাই পিছনের দরজা দিয়ে লুকিয়ে বেরিয়ে, হামাগুড়ি দিয়ে কোনোক্রমে পিছন দিকের একটা গার্ডেনে পৌঁছায় চিত্ররা। তার পাশে সার সার বাড়ি। কিন্তু সব অন্ধকার। শুধু স্ট্রিট লাইটগুলো জ্বলছে। জঙ্গি হামলার ভয়ে বাড়ি-ঘর, দোকানপাট, ক্যাফে-রেস্তঁরায় সব আলো নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে। দরজা-জানালা সব বন্ধ। কারও বাড়ির ভিতরে লুকিয়ে যে প্রাণ বাঁচাবে, তারও উপায় নেই।

কিছুক্ষণ পর চিত্রর ফোন পেলাম। শশব্যস্তে ফোন ধরেছি। দম বন্ধ হয়ে আসার জোগাড়। চিত্র জানাল, এক মহিলা নিজের বাড়িতে তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। সেখানেই তাদের লুকিয়ে থাকতে হবে আরও কিছুক্ষণ। হতে পারে অনেক ক্ষণ। পুলিশ কাউকে বাইরে বেরোতে নিষেধ করেছে। আমি বললাম, ‘‘যেখানে আছো, সেখানেই চুপ করে বসে থাকো। একদমই বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করবে না।’’

চিত্র বন্ধুদের থেকেও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। প্রবল আতঙ্কে পালানোর সময় কে কোথায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে গিয়েছে, কেউ জানত না। একে একে আশ্রয় খুঁজে নেওয়ার পর তারা পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করা শুরু করে। মোবাইলে। কারও পক্ষেই একা বাড়ি ফেরা সম্ভব ছিল না। একা কাউকে রাস্তায় দেখলে সেনা তাকেও জঙ্গি বলে ভাবতে পারে। তাই সবাই এক জায়গায় জড়ো হতে চাইছিল।

রাত ১২টা নাগাদ পুলিশ জানাল, জঙ্গিরা শেষ। চিত্ররাও ততক্ষণে একত্র হতে পেরেছে। তবে প্যারিস পুরোপুরি জঙ্গিমুক্ত কি না, তা তখনো নিশ্চিত নয়। আতঙ্ক গিলে ফেলেছে গোটা শহরটাকে।

মেয়ে সুস্থ রয়েছে জানতে পেরেই আমার অন্য বন্ধু আর পরিচিতদের খোঁজ নিতে শুরু করি। বাস্তিল চত্বরে বিভিন্ন ক্যাফে, রেস্তঁরাতে অনেক বাঙালি কাজ করেন। বেশির ভাগই বাংলাদেশের। ফোন করে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করি। জানতে পারি তারাও অক্ষতই রয়েছেন। বন্ধু-বান্ধবরা আমাদেরও বারবার ফোন করছিলেন। খোঁজখবর নিচ্ছিলেন। প্রশাসন এবং রেডক্রস-সহ নানা সংগঠন ততক্ষণে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছে। জখমদের উদ্ধারের সঙ্গে আটকে পড়া মানুষদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থাও করছিল তারা। চিত্রকে অবশ্য আমার এক বন্ধু নিজের গাড়িতে করে বাড়ি পৌঁছে দিল। তখন ভোর চারটে। মেয়েকে গাড়ি থেকে অক্ষত নামতে দেখে বুক থেকে যেন পাথর নামল।

এত ভয় আগে কখনো পাইনি। এত অসহায় আগে কখনো মনে হয়নি নিজেকে। মুম্বাইতে যে রকম হামলা হয়েছিল, প্যারিসে হুবহু সে রকমই দেখলাম। মুম্বাইয়ের ঘটনা টিভিতে দেখেছিলাম। ভয়ঙ্কর! এবার প্যারিসে নিজেই সেই পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেলাম। এমন জঘন্য কাজ কারা ঘটাতে পারে! কোন ধরনের মানুষ তারা? অথবা আদৌ মানুষ কি? আমার সত্যিই আতঙ্কের ঘোর কাটছে না। গোটা রাত ঘুমতে পারিনি। এখন কথা বলতেও কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ঘুমিয়ে পড়ব, তেমন মানসিক স্থিতিতে পৌঁছতে পারছি না।”

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

যুদ্ধবিরতির ‘খুব কাছাকাছি’ হামাস-ইসরায়েল

ইরান-ইসরায়েলের “১২ দিনের যুদ্ধ” থেমেছে, কিন্তু ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার মানুষেরবিস্তারিত পড়ুন

টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘুরতে গিয়ে গাঁজা সেবন, ৫ পর্যটকের কারাদণ্ড-অর্থদণ্ড

সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওড়ে ঘুরতে গিয়ে গাঁজা সেবন করে উচ্ছৃঙ্খল আচরণবিস্তারিত পড়ুন

ঝিনাইদহে আদালত চত্বরে মামলার স্বাক্ষীকে মারধর

ঝিনাইদহে আদালত চত্বরে চাঁদাবাজির মামলার স্বাক্ষীকে হত্যার হুমকি ও মারধরেরবিস্তারিত পড়ুন

  • ২০২৪ সালে ‘ডামি নির্বাচন’ হয়েছে, আদালতে স্বীকার করলেন হাবিবুল আউয়াল
  • দেড় কোটি বাংলাদেশি প্রবাসীকে ভোটার করতে আইনি নোটিশ
  • দশম, একাদশ ও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের অনিয়ম তদন্তে কমিটি
  • খামেনি: ইরান আমেরিকার মুখে এক কঠিন থাপ্পড় দিয়েছে
  • জুলাই স্মৃতি উদ্‌যাপনে কর্মসূচি ঘোষণা
  • দাঁড়িপাল্লা প্রতীক ও নিবন্ধন ফিরে পেল জামায়াত
  • উপদেষ্টা: গণ-অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবারের সক্ষম সদস্যরা অগ্রাধিকার পাবেন চাকরিতে 
  • ইরানে সরকার পরিবর্তন চান না ট্রাম্প
  • কমলো স্বর্ণের দাম, ভরি পৌনে দুই লাখের কাছাকাছি
  • ত্রাণ নিতে যাওয়া মানুষের ওপর গুলি, ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ৭১
  • গোলাম পরওয়ার: নির্বাচন সুষ্ঠু না হলে মহাদুর্যোগ নেমে আসবে
  • আঞ্চলিক শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ করবে যুক্তরাষ্ট্র