ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
ভাত খুঁজতে গিয়ে মেয়ে নিখোঁজ, ১৪ দিন কাঁদছেন মা
সেদিন সব রোগীকে দুপুরের খাবার দিল, কিন্তু আমার মেয়ের জন্য খাবার দিল না। হাসপাতালের একজনকে বললে তিনি বলেন, নিজে গিয়ে কিচেন থেকে ভাত আনেন। মেয়েকে একা রাইখা ভাত আনতে গেলাম, আইসা দেখি মেয়ে নাই। হাসপাতালের ভাত আনতে গিয়ে মেয়েকে হারাইয়া ফেললাম। হাসপাতালের ভাত আমি আর কোনো দিন খামু না।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে এসে কিশোরী মেয়েকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে যাওয়া এক মা কাঁদতে কাঁদতে এভাবেই বলছিলেন কথাগুলো।
রত্না বেগম নামের ওই নারীর সঙ্গে কথা হয় । তিনি বলেন, ‘আমার মেয়ে আইজ কই আছে, ক্যামনে আছে জানি না, আপনারা আমার মেয়েকে খুঁজে দেন।’
ওই নারী জানান, গত ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে তাঁর বড় মেয়ে লিপি আক্তার (১৫) অসুস্থ হয়ে পড়লে দ্রুত তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তিনি। কিন্তু হাসপাতালের বেড খালি না থাকায় মেয়েকে নতুন ভবনের অষ্টম তলার ৮০২ নম্বর কেবিনের বাইরে সিঁড়ির পাশে খোলা জায়গায় ভর্তি করে রাখা হয়। রাত থেকেই তার চিকিৎসা চলছিল। পরের দিন ২০ ফেব্রুয়ারি সকালে তারা নাস্তাও পেয়েছিল, কিন্তু দুপুরে হাসপাতাল থেকে রোগীদের জন্য বরাদ্দ করা খাবার সবাইকে দেওয়া হলেও লিপি আক্তারকে দেওয়া হয়নি। তখন তিনি হাসপাতালের একজন কর্মীকে বিষয়টি জানালে তিনি কিচেনে গিয়ে ভাত আনতে বলেন। এরপর অসুস্থ মেয়েকে রেখেই রান্নাঘর থেকে ভাত আনতে যান রত্না বেগম। ফিরে এসে দেখেন মেয়ে নেই। তখন আশপাশের মানুষজনকে জিজ্ঞাসা করলে তারা কেউ কিছুই জানেন না বলে জানান।
এরপর রত্না বেগম চিকিৎসক, সেবিকা, হাসপাতালের কর্মীদের জিজ্ঞাসা করেও মেয়ের কোনো হদিস পাননি। তখন হাসপাতালের পুলিশের কাছে সাহায্য চাইলে তারা শাহবাগ থানায় গিয়ে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার পরামর্শ দেন।
এরপর রত্না বেগম ২০ ফেব্রুয়ারি রাতে শাহবাগ থানায় গিয়ে জিডি করেন। কিন্তু জিডি করার খবর জানতে পেরে হাসপাতালের কর্মীরা তাঁর কাছে থেকে মেয়ের ভর্তির সব কাগজপত্র কেড়ে নেন। সেখানে লিখে দেন, মেয়ে সুস্থ হয়েছে, তাই তাকে ছুটি দেওয়া হলো। জিডি করার একদিন পর শাহবাগ থানা পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে এ বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়। সেই দিনের হাসপাতালের সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ দেখতে চায়। কিন্তু কর্তৃপক্ষ ফুটেজ দেখাতে চেয়েও সময় ক্ষেপণ করে। ওই কিশোরীর মা বা পুলিশকে তারা ফুটেজ দেখায়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এদিকে, মেয়ের হদিস না পেয়ে ১৪ দিন ধরে রত্না বেগম তাঁর স্বজনদের নিয়ে হাসপাতালের ওই স্থানে অবস্থান করছেন। মেয়ের জন্য দিনরাত কান্নাকাটি করে চলেছেন তিনি। হাসপাতালে তাঁর সঙ্গে রয়েছেন খালা মেনু বেগম, ছোট ছেলে মুক্তার, ছোট ভাই আহম্মদসহ অন্য স্বজনরা। চাতক পাখির মতো চারজন মানুষ সব সময় সেখানে অপেক্ষা করছে, যদি মেয়ে আবার ফিরে আসে!
রত্না বেগম আরো জানান, তাঁর গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলায়। চাচাত ভাই মো. লিটন আলীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল তাঁর। কিন্তু স্বামী নেশাগ্রস্ত হওয়ায় সংসার বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। মেয়ে লিপি ও ছোট ছেলে মুক্তারকে নিয়ে সাভারের একটি গুদামে ঝুট বাছাইয়ের কাজ করেন তিনি। মেয়েকে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি করিয়েছিলেন। আর ছেলে মুক্তার সেই বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে।
রত্না বেগম বলেন, ‘হাসপাতালের কেউ বা কোনো চক্র আমার মেয়েকে নিয়ে গেছে। আমার দাবি, ওই দিনের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ দেখানো হোক। তাহলেই বোঝা যাবে আমার মেয়েকে কে বা কারা নিয়ে গেছে।’ জানতে চাইলে মেয়ের কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না বলে জানান তিনি। তবে তিনি যে বাড়িতে ভাড়া থাকেন সেই বাড়ির মালিকের ছেলে সোহাগ ও তাঁর স্বামী মেয়েকে দেখতে হাসপাতালে এসেছিলেন। তাদের সন্দেহ করছেন রত্না বেগম।
এ বিষয়ে শাহবাগ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মশিউর রহমান জানান, লিপি আক্তার নামের ওই মেয়ে ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ১৯ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। মেয়েকে রেখে ২০ তারিখে দুপুরে তার মা খাবার আনতে গিয়েছিল। ফিরে এসে দেখেন মেয়ে নেই। এ বিষয়ে অভিযোগ পাওয়ার পর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসক, নার্সদের সঙ্গে কথা বলেছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, হাসপাতালে শত শত রোগী। তারা তাই বেড পায়নি, মেঝেতে ছিল। নিয়ম অনুযায়ী যার রোগী তিনি নিজে খেয়াল রাখবেন। ওই মেয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে গিয়েছিল। দুপুরে খাবার আনতে গিয়ে তার মা প্রায় দেড় ঘণ্টা ছিলেন না, সে মেয়েটি কোথায় চলে গেছে, তারা কেউ জানেন না।
এসআই মশিউর আরো জানান, হাসপাতালের অষ্টম তলার ওই ফ্লোরে কোনো সিসিটিভি ক্যামেরা নেই। বিষয়টি নিয়ে দেশের সব থানায় ওয়ারলেস ম্যাসেজ দেওয়া হয়েছে। খোঁজ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট থানাকে জানাতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া ওই নারীর দাবি, স্বামীর সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ভালো নয়। সে কারণে তিনিও এই কাজ করতে পারেন। সন্দেহের পর তাঁর স্বামীর সঙ্গেও কথা বলা হয়েছে। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
মশিউর রহমান বলেন, হাসপাতালের মেইন গেটে যে সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে তা নষ্ট। ঠিক মতো কাজ করে না বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আর ক্যামেরায় ধারণ করা ফুটেজ তিন থেকে চার দিনের বেশি সংরক্ষিত থাকে না বলেও তারা জানিয়েছে।
জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক খাজা আবদুল গফুর বলেন, ‘মেয়েটি নিখোঁজের বিষয়টি জানি। মা সঙ্গে থাকা অবস্থায় মেয়েটি কীভাবে হারিয়ে গেল সেটা গার্ডিয়ানই (অভিভাবক) বলতে পারবেন। যদি ছোট বাচ্চা হতো, সে ক্ষেত্রে আলাদা কথা ছিল।’
সিসিটিভি ক্যামেরা সম্পর্কে উপপরিচালক বলেন, ‘যন্ত্রচালিত জিনিস তো প্রায়ই নষ্ট হয়। আমাদের হাসপাতালে এমন কেউ নেই যে তারা এই ক্যামেরাগুলোর ফুটেজ সব সময় দেখবে। মানে তেমন কোনো জনবল এই কাজের জন্য নেই। যদি কারো কোনো ফুটেজ প্রয়োজন হয়, তখন যারা ক্যামেরা মেরামত করে তাদের দিয়ে ফুটেজ দেখার ব্যবস্থা করতে হয়।’ নিখোঁজ মেয়েটির সন্ধানে পরিবার ও পুলিশকে হাসপাতাল থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান খাজা আবদুল গফুর।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন