‘ভারতকে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না বিএনপি’
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় যে ট্রাপডোর খুলেছে, তাতে ফাঁসির মাধ্যমে কেবল বাংলাদেশের বিশিষ্ট দুই বিরোধী ব্যক্তির জীবনের সমাপ্তিই ঘটেনি। এর ফলে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইম ট্রাইব্যুনালের কাজেরও সমাপ্তি ঘনিয়ে এসেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের কাছ থেকে বাংলাদেশের পৃথক হওয়ার যুদ্ধে সংঘটিত ঘৃণ্য অপরাধের বিচার করার জন্য ৫ বছর আগে দেশীয় এ আদালতটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ওই যুদ্ধের নৃশংসতার সঠিক বর্ণনা প্রয়োজনীয় ছিল। কিন্তু ট্রাইব্যুনালটি ছিল ত্রুটিপূর্ণ। এ ট্রাইব্যুনাল বিবাদীর অধিকার নিদারুণভাবে ক্ষুণ্ন করেছে। এমনকি এটিতে রাজনৈতিক অনধিকার চর্চার প্রভাবও থাকতে পারে। কিন্তু শেখ হাসিনার জন্য এ সবকিছুই লাভজনক। তিনি স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামের সময়কার ঘটনার প্রতিশোধ নিলেন। এবং তিনি তার চিরশত্রু খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) মারাত্মক ক্ষতি করেছেন। লন্ডনের প্রভাবশালী ম্যাগাজিন দ্য ইকোনমিস্টের একটি নিবন্ধে এসব বলা হয়েছে। ওই নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, মৃত দুই ব্যক্তির প্রথমজন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবার বেশ সুসমপর্কযুক্ত। তার রাজনীতিক পিতা বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে মাঝে মাঝে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব পালন করেছিলেন, যখন আইয়ুব খান অনুপস্থিত থাকতেন। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী নিজেও দু’বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম জিয়ার ঘনিষ্ঠ ছিলেন। তাকে প্রায়ই পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের দূত হিসেবে বিবেচনা করা হতো। ট্রাইব্যুনাল তাকে বিভিন্ন অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করেছে। এর মধ্যে ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সঙ্গে চক্রান্ত করে হিন্দুদের হত্যার অভিযোগও অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এরপরও ট্রাইব্যুনাল নিরপেক্ষ ছিল না। বাদী পক্ষ ৪১ জন সাক্ষীকে হাজির করার অনুমতি পেয়েছে, অথচ বিবাদী পক্ষ পেরেছে মাত্র ৪ জন। সাবেক একজন মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ আরও অনেক প্রখ্যাত ব্যক্তিকে সাক্ষ্য দিতে দেয়নি আদালত। তাদের হলফনামায় দাবি করা হয়েছে, কথিত অপরাধসমূহ সংঘটনের সময় সালাউদ্দিন চৌধুরী পাকিস্তানে ছিলেন। দ্বিতীয় ব্যক্তি আলি আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ছিলেন ইসলামপন্থি দল জামায়াতে ইসলামির সাধারণ সমপাদক। বিএনপি সর্বশেষ যখন ক্ষমতায় ছিল তখন তার দল ছিল জোটসঙ্গী। তিনি ছিলেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রী। মুজাহিদ ১৯৭১ সালে আল বদরের জ্যেষ্ঠ কমান্ডার হিসেবে বুদ্ধিজীবী ও হিন্দুদের হত্যাকা- সংঘটনের দায়ে অভিযুক্ত। কুখ্যাত আধা-সামরিক বাহিনী আল বদর জামায়াতের ছাত্র সংগঠনের সদস্যদের নিয়োগ দেয় ও বাঙালি জাতীয়তাবাদীদের ওপর চড়াও হয়। ফাঁসির বিষয়টি অনেক বাংলাদেশীই স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাকালীন জনক শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ হাসিনা এখন বলতে পারবেন যে, ২০০৯ সালের নির্বাচনের পূর্বে স্বাধীনতা যুদ্ধে নৃশংসতায় দায়ীদের শাস্তি দেয়ার যে কথা তিনি দিয়েছিলেন, তিনি তা রাখতে পেরেছেন। এদিকে বেগম জিয়া (জিয়াউর রহমানের বিধবা স্ত্রী। জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যাকা-ের পরে ক্ষমতারোহণ করেন এবং ১৯৮১ সালে নিজেও হত্যাকা-ের শিকার হন) লন্ডনে কিছুকাল কাটিয়ে এ সপ্তাহে দেশে ফিরেছেন। কর্তৃপক্ষ তার বিমানকে ঢাকায় অবতরণ করতে দিয়েছে। এদিকে, তার সমর্থকদের মাঠ থেকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তার পরিবারকে ক্রমেই উদ্দেশ্যহীন দেখাচ্ছে। মাত্র সত্তর বছর বয়সী হলেও, এ নারীর মধ্যে ইতিমধ্যে ভঙ্গুরতার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। তার ছেলে ও রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী তারেক রহমানের বিরুদ্ধে তার মায়ের ‘ক্লেপটোক্রেটিক’ প্রশাসনের সময় দুর্নীতি করার অভিযোগে মামলা থাকায় তিনিও লন্ডন থেকে ফিরতে পারছেন না। দলের ভেতরের অনেকেই বর্ণনা করেছেন অগোছালো উত্তরাধিকারের কথা। সাবেক এক নেতা তারেক রহমানের ‘লম্বা ও বিপজ্জনক হাত’ ও পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখাতে দলের অক্ষমতা নিয়ে আক্ষেপ করেছেন। খুব সহজেই দলটি রাস্তায় সহিংসতা উসকে দিতে বলছে ক্যাডারদের। তৃণমূলে শক্তিশালী সমর্থন থাকলেও, ব্যবসায়িক পৃষ্ঠপোষকদের ক্ষমতা হারাচ্ছে বিএনপি। সর্বশেষ নির্বাচন বর্জন করায় দলের কোন এমপিও নেই। পরবর্তী নির্বাচন ২০১৯ সালের আগে হবে না। এবং যদি শেখ হাসিনা বর্তমান অবস্থানই ধরে রাখেন, তবে সর্বশেষ নির্বাচনের মতো আগামী নির্বাচনের নিরপেক্ষতা নিশ্চিতের দায়িত্বে তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকবে না। ওদিকে শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ বিরোধী রাজনীতিকদের হয়রানি করা অব্যাহত রেখেছে, ঠিক যেমনটি বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন করেছিল। অনেকেই এখন কারাগারে, বাকিরা পালিয়েছেন অথবা আত্মগোপনে আছেন। বেগম জিয়ার বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অনেক মামলা। বাকি যারা আছেন, তাদের অনেকে তারেক রহমান-বিহীন ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেন। ২০শে নভেম্বর নাজমুল হুদা, বিএনপির সাবেক বড় নেতা, নতুন দল ‘তৃণমূল বিএনপি’র ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু বিএনপির সমস্যা কলঙ্কিত আপাত-উত্তরাধিকারের চেয়েও বেশি কিছু। দলটি পাশের বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতকে নিশ্চয়তা দিতে পারছে না যে, ভবিষ্যতের বিএনপি সরকারের সময়ে বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ ঐতিহ্য নিরাপদ থাকবে। জামায়াতের সঙ্গে সমপর্ক ক্ষুণ্ন করতে বিএনপির অনিচ্ছায় এতে উপকার হচ্ছে না। জামায়াত সৌদি-প্রভাবিত ইসলামের প্রচার চালায়, খুব শিগগিরই এটি বে আইনি ঘোষিত হতে পারে। অপরদিকে আওয়ামী লীগ ও ভারতের সমপর্ক ধীরে ধীরে ঘনিষ্ঠ থেকে ঘনিষ্ঠতর হচ্ছে। এ মাসে অনুপ চেটিয়াকে হস্তান্তরের মাধ্যমে ভারতের চাহিদার বিশাল তালিকার সর্বশেষটি পূরণ করেছে বাংলাদেশ। অনুপ চেটিয়া আসামের একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা, যাকে বাংলাদেশ ১৮ বছর ধরে কারাগারে পুরে রেখেছে দর কষাকষির ভালো অবলম্বন হিসেবে। ডিসেম্বরে অনুষ্ঠেয় পৌরসভা নির্বাচনে উদ্যম ফিরে পেতে পারে বিএনপি। কিন্তু প্রায় সর্বত্রই আওয়ামী লীগের আধিপত্য বৃদ্ধি পাচ্ছে। বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ও আইনি প্রতিষ্ঠানসমূহ, যেগুলোকে সুরক্ষিত করার কথা ছিল দেশের ভিত্তিমূলের, সেগুলোর মূল্য অবশ্য ভিন্ন বিষয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ফের ২ দিন রিমান্ডে আনিসুল হক
রাজধানীর বাড্ডা থানার স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা আল-আমিন হত্যা মামলায় সাবেক আইনমন্ত্রীবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
জামিন পেলেন সাবেক বিচারপতি মানিক
অবৈধভাবে ভারতে অনুপ্রবেশের সময় সিলেটের কানাইঘাটের ডোনা সীমান্ত এলাকা থেকেবিস্তারিত পড়ুন