ভারতের বন্যার পানি ঢুকছে বাংলাদেশে
ভারতের ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ায় বাংলাদেশে পদ্মায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর দাবির প্রেক্ষাপটে ফারাক্কা বাঁধ খুলে দেওয়ার ফলে ভারতের বন্যার পানি গঙ্গা ও পদ্মা হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এতে বাংলাদেশের বিস্তৃর্ণ এলাকা ভাঙন ও প্লাবিত হওয়ার শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ভারতের বিহার রাজ্যের বন্যার পানি নেমে যাওয়ার জন্য এর আগে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ফারাক্কা বাঁধ তুলে দেওয়ার প্রস্তাব দেন। নীতিশ কুমার গণমাধ্যমকে বলেন, ফারাক্কা বাঁধের কারণে গঙ্গায় বিপুল পরিমাণ পলি জমছে। আর এ কারণে প্রতিবছর বিহারে বন্যা হচ্ছে। এর একটা স্থায়ী সমাধান হলো ফারাক্কা বাঁধটাই তুলে দেওয়া। এই প্রেক্ষাপটেই খুলে দেওয়া হয়েছে ফারাক্কা বাঁধের সবগুলো ফটক।
এর পর থেকেই বিহারের বন্যার পানি ঢুকছে বাংলাদেশে। আর ফারাক্কার পানি প্রবাহের গতি একই থাকলে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বাংলাদেশে বিপদসীমা অতিক্রম করবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেছেন। নতুন করে পদ্মায় ভাঙন আর প্লাবনের শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে জনমনে।
শুক্রবার নগরীর কুমারপাড়া, বড়কুঠি, পুলিশ লাইন্স ও জিয়ানগর এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পদ্মার পানি প্রবল বেগে প্রবাহিত হচ্ছে। মধ্যচরের অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। সামান্য কিছু কাঁশবন মাথা উচু করে জানান দিচ্ছে এখানে এক সপ্তাহ আগেও মধ্যচর বলে কিছু ছিল। গত শুষ্ক মৌসুমে মধ্যচরে যেসব বাড়ি করে দেয়া হয়েছিল সেগুলোর চালা ছাড়া সবই ডুবে গেছে পানিতে। শহররক্ষা বাঁধের প্রায় সমান উচ্চতা নিয়েই পানি বয়ে যাচ্ছে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে শহরের বুলনপুর পুলিশ লাইন্স, সোনাইকান্দি, বেড়পাড়া এবং নবগঙ্গা এলাকা।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, প্রতিদিন ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার করে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় ৯০ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিপদসীমার ২১ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে পদ্মার পানি প্রবাহিত হয়।
এই গতিতে পানির উচ্চতা বাড়তে থাকলে পদ্মার বিভিন্ন পয়েন্টে ২৪ থেকে ২৮ ঘণ্টার মধ্যে তা বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। ভারতের গঙ্গার পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে ভারত ফারাক্কা বাঁধের ১০৬টি গেইটের সবগুলোই খুলে দেওয়ার পরিস্থিতি এমন হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মীর মোশাররফ হোসেন।
মোশাররফ হোসেন জানান, ভারতের বন্যার প্রভাব ও ফারাক্কার ফটকগুলো খুলে দেওয়ার কারণে পদ্মায় হঠাৎ করে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ ধরে প্রতিদিন প্রায় ১২ থেকে ১৩ সেন্টিমিটার পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানান তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।
তিনি আরও বলেন, চলতি বর্ষা মৌসুমে পদ্মায় সর্বোচ্চ পানি বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে গত ৪ আগস্ট ১৭ দশমিক ২৫ মিটার। এর পর থেকে পানি কমতে শুরু করে এবং গত ১২ আগস্ট ১৬ দশমিক ৭০ মিটারে নেমে যায়।
তবে ১৭ আগস্ট থেকে পানি বৃদ্ধি শুরু হয়। বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত পদ্মায় পানি বেড়ে দাঁড়ায় ১৮ দশমিক ২৯ মিটারে। এভাবে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে শনিবারের মধ্যে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে বলে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী।
অপরদিকে পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে তলিয়ে যাচ্ছে পদ্মার উভয় তীরের নিম্নাঞ্চল। তলিয়ে যাচ্ছে স্থাপনা, বাড়িঘর ক্ষেত খামার। সর্বস্ব হারাচ্ছে জনগণ। রাজশাহীতে ভাঙনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পবা উপজেলার হরিপুর ও হরিয়ান ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম।
হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মফিদুল ইসলাম বাচ্চু ও হরিপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বজলে রেজবি আল হাসান মুঞ্জিল সংবাদমাধ্যকে জানান, বিগত কয়েক বছর ধরেই হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের প্রায় সম্পূর্ণ অংশই নদী গর্ভে বিলিন হয়েছে। এছাড়াও হরিপুর ইউনিয়নের চরমাঝারদিয়াড়ের অবস্থাও ভাল নয়। প্রতিদিন পাড় ভাঙছে।
কয়েক বছরের মধ্যে এবারই বেশি পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরমধ্যে ভাঙ্গনে পবা উপজেলার হরিয়ানে দু’টি গ্রাম চর খানপুর ও চর খিদিরপুরের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। মধ্যচরেও পানি ওঠায় সেখানকার জনগণ মহা বিপদে পড়েছে। গৃহপালিত পশু নিয়েও পড়েছে বিপাকে। পদ্মার ভাঙনে পবা উপজেলার হরিয়ান ইউনিয়নের ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের শত শত হেক্টর জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।
বিলীন হয়েছে বাংলাদেশ-ভারতের সীমানা পিলারসহ বিভিন্ন স্থাপনা। ফলে প্রতিবছরই সীমান্ত নদীগুলোর ভাঙ্গনে মূল্যবান জমি হারাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশের অন্য অঞ্চলে নদীর এক তীর ভেঙ্গে অন্য তীরে চর জাগে, দেশের জমি দেশেই থেকে যায়। কিন্তু সীমান্ত নদীর ভাঙ্গনে জমি চলে গেলে সেটা আর ফিরে পাওয়া যায় না। ক্রমাগত ভাঙ্গনে উপজেলার বেশকয়েকটি মৌজার জমি পদ্মা নদীতে তলিয়ে গেছে। আর একটু ভাঙলেই দেশের ভূ-খণ্ড হারাবে।
হরিয়ান ইউনিয়নের চর তারানগর, চরখিদিরপুর, দিয়াড়খিদিরপুর, চর তিতামারি, দিয়াড় শিবনগর, চরবৃন্দাবন, কেশবপুর, চর শ্রীরামপুর ও চর রামপুরের সিংহভাগ জমিই পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়েছে। যেটুকু অবশিষ্ট আছে তাও বিলীন হতে বসেছে।
পদ্মার ভাঙ্গনে এরই মধ্যে ৯ নম্বর ওয়ার্ডে চর তারানগরে ২শ’ ঘরবাড়ি, চারটি মসজিদ, একটি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, দ্বিতল আশ্রয় কেন্দ্র, খানপুর বিজিবি ক্যাম্প এবং আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১৬৪ ও ১৬৫ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
এদিকে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চরখিদিরপুরে প্রায় ৪শ’ বাড়ি, একটি বিজিবি ক্যাম্প, একটি পাকা দ্বিতল প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাঁচটি মসজিদ, দু’টি মাদ্রাসা, একটি কমিউনিটি ক্লিনিক ও আন্তর্জাতিক সীমানা পিলার ১৫৯-এর এস-৩, ৪, ৫ নদীগর্ভে তলিয়ে গেছে। এই দুই ওয়ার্ডে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। ভোটার ছিল প্রায় ৩৩শ’। বাড়িঘর জমি জমা পদ্মার গভে বিলিন হওয়ায় সবমিলিয়ে এখন দুই হাজার লোক বসবাস করছে সেখানে।
রাজশাহী পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানিয়েছে, ভাঙ্গনের বিষয়টি নিয়মিত মনিটরিং করা হচ্ছে। যেখানে ভাঙনের আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে সেখানেই মেরামত করা হচ্ছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বন্য পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া আছে। নদীর পাড় রক্ষায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
গঙ্গা নদীটির প্রধান শাখা চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে, সেখান থেকে নদীটির নাম হয়েছে পদ্মা। গঙ্গা নদী বাংলাদেশে প্রবেশের আগে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের মালদহ ও মুর্শিদাবাদ জেলায় ভারত নির্মাণ করে ফারাক্কা বাঁধ, যা বিভিন্ন সময় বাংলাদেশের পরিবেশ বিপর্যয় ডেকে এনেছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ডিএমপি: ৫ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে
ঢাকা মহানগর পুলিশের রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মো. সারোয়ার জাহানবিস্তারিত পড়ুন
আমির খসরু: নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণকে দেশের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে হবে
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, “গণতন্ত্রেরবিস্তারিত পড়ুন
নারায়নগঞ্জে কোটা আন্দোলনকারীর উপর আক্রমন
নিজস্ব প্রতিবেদক : নারায়নগঞ্জ জেলার সোনারগাঁ এলাকায় কোটা আন্দোলনকারী সংগঠকবিস্তারিত পড়ুন