ভারত-পাকিস্তান কি যুদ্ধে নামতে পারবে?
ভারত-পাকিস্তান কি সত্যিই যুদ্ধে নামছে? এই মুহূর্তে এই প্রশ্নটি নিয়ে আলোচনায় মুখর বিশ্বের সবকটি গণমাধ্যম। আলোচনা-সমালোচনায় পিছিয়ে নেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীরাও।
বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত মন্তব্য ও তথ্যের আলোকে বেশ কিছু বিশ্লেষণ করেছেন সিএনএনের ভারতীয় ব্যুরো প্রধান রবি আগারওয়াল।
নিজের প্রতিবেদনে রবি আগারওয়ার বলেছেন, ভারত ও পাকিস্তানের দুটি দেশেরই পারমাণবিক শক্তির দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। এর ওপর নির্ভর করছে দুই দেশের ১৪০ কোটি মানুষের জীবন। গত কিছুদিন দেশ দুটি তাদের সীমান্ত নিয়ে আপেক্ষিকভাবে শান্ত সময় কাটিয়েছে।
ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের একটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালিয়ে ১৮ জনকে হত্যার পর ভারতীয় সেনাবাহিনীর মহাপরিচালক ঘোষণা করলেন, হামলাকারী সন্ত্রাসীরা যে অস্ত্র বহন করছিল তাতে পাকিস্তানি চিহ্ন ছিল। এই ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।
ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং এক টুইটার বার্তায় বলেন, ‘পাকিস্তান একটি সন্ত্রাসী রাষ্ট্র এবং এটিকে সেভাবেই চিহ্ণিত ও বিচ্ছিন্ন করা উচিত।’
এমনকি এ বিষয়ে আলোচনা করার জন্য ফেসবুককে বেছে নেন ক্ষমতাসীন বিজেপির মহাসচিব রাম মাধব। দুই দেশের অসামঞ্জস্য সম্পর্ককে বোঝাতে তিনি লেখেন, ‘চোয়াল সম্পূর্ণ হওয়ার জন্য একটি দাঁতই যথেষ্ট।’
রবি আগারওয়াল বলছেন, ভারতের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ নিয়ে এরইমধ্যে দামামা শুরু হয়ে গেছে।
দেশটির সবচেয়ে বেশি দেখা ইংরেজি খবরের অনুষ্ঠানের সঞ্চালক অর্নব গোস্বামী পাকিস্তান সম্পর্কে মন্তব্য করতে ছাড়েননি। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের উচিত তাদের পঙ্গু করে দেওয়া। আমাদের উচিত তাদের (পাকিস্তান) আমাদের সামনে হাঁটু গেঁড়ে বসতে বাধ্য করা।’
ওই অনুষ্ঠানের এক অতিথি আরো একধাপ এগিয়ে মন্তব্য করেন, ‘পাকিস্তানের বিশোধন প্রয়োজন।’
তবে দুই দেশের যে পারমাণবিক অস্ত্র আছে, সেগুলো এই যুদ্ধ শুরু চিন্তার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করবে কি না সে প্রশ্নও তোলেন রবি।
ভারতের অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল জি ডি বকশী এ সম্পর্কে পরিষ্কার উত্তর দিয়েছেন বলে জানান রবি আগারওয়াল। সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ভারতের আয়তনের তুলনায় পাকিস্তানের আয়তন পাঁচ ভাগের এক ভাগ। আমরা যদি আমাদের কোনো এক অংশের অস্ত্রাগার থেকেও গুলি চালাই তাহলে এর বেশির ভাগ গিয়ে পড়বে পাকিস্তানের পাঞ্জাবে। সেখান থেকে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এসেছে। তাহলে সেখানে আগামী ৮০০ বছরেও কোনো ফসল জন্মাবে না।’
এসবের বিষয়ে পাকিস্তান বেশ চাঁচাছোলা জবাব দিয়েছে বলে সিএনএনের ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা সারতাজ আজিজ এক বিবৃতিতে বলেছেন, ‘মোদি সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা ভিত্তিহীন ও দায়িত্বহীন অভিযোগ করে যাচ্ছেন।’
দেশটির পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র সিএনএনকে জানিয়েছেন, ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের বর্তমান অশান্ত পরিস্থিতির ওপর থেকে গোটা বিশ্বের নজর সরাতেই মরিয়াভাবে ভারত এসব অভিযোগ আনছে।
বিষয়টি নিয়ে পাকিস্তানেও বেশ আবেগের উদগীরণ ঘটছে।
গত সোমবার নিউইয়র্কে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিবের এক সংবাদ সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বলা হয় ভারতীয় একজন সাংবাদিককে। ভারতের সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ভারতীয় সাংবাদিককে সংবাদ সম্মেলন ছেড়ে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করা হয়।
প্রতিবেদনে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড পত্রিকার স্ট্র্যাটেজিক অ্যাফেয়ারর্স এডিটর অজয় শুক্লার বরাত টেনেছেন রবি। অজয় বলেন, ‘আমরা যেসব বাগড়ম্বরপূর্ণ বক্তব্য শুনছি তা থেকে বের হয়ে আসা সহজ।’
উরি আক্রমণ ভারতের মাটিতে হওয়া প্রথম ভয়াবহ হামলা নয়, যেটিতে পাকিস্তানের হাত রয়েছে।
গত জানুয়ারি মাসেও পাকিস্তান সীমান্তবর্তী উত্তর-পশ্চিম পাঞ্জাবের আরেকটি সামরিক ঘাঁটিতে হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এর আগে ২০০৮ সালে মুম্বাইয়ে আক্রমণ হয়, যেখানে ১৬৪ জন মানুষ নিহত হয়।
সবসময় এসব হামলার সঙ্গে পাকিস্তানের যোগসূত্রের কথা বলেছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। তবে বরাবরই এসব অভিযোগ অস্বীকার করে এসেছে পাকিস্তান।
প্রতিটি সন্ত্রাসী হামলার পর পরই ভারত কঠিন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। অজয় শুক্লা বলেন, ‘যখন সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় আসে তখন বাস্তবতা দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় ভারত সরকার। জনগণের কথায় প্রভাবিত হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় না। তারা বুঝতে পারে যে, যদি তারা পাকিস্তানকে আক্রমণ করে তাহলে ফলাফল ভারতের পক্ষে নাও আসতে পারে।’
কৌশলগতভাবে ভারত এখনই কোনো আক্রমণ করতে প্রস্তুত নয় বলে মনে করেন অজয় শুক্লা। অবশ্য এটাকে তিনি, পরিকল্পনার ব্যর্থতা বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে বিশ্বের ১১তম বৃহত্তম সেনাবাহিনীর মালিক পাকিস্তান। অজয় শুক্লা বলেন, ‘আমরা একটি প্রতিসম সম্পর্কের ওপর দাঁড়িয়ে আছি। এই মুহূর্তে যেকোনো ধরনের হামলার পরিণতি হবে চিন্তার চাইতেও ভয়ানক।’
পররাষ্ট্র নীতির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে বেশ ধীরবুদ্ধিসম্পন্ন বলা যেতে পারে। তবু তাঁর সমর্থকরা এই মুহূর্তে পাকিস্তানের বিপক্ষে শক্ত পদক্ষেপের আশা করছে। যেমন গত সোমবারও টুইটার সরব ছিল পাকিস্তানকে সাজা দেওয়ার বিষয়টি নিয়ে।
আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা পিউ রিসার্চ সেন্টারের এক জরিপে দেখা গেছে, ৮১ শতাংশ ভারতীয় মোদির সিদ্ধান্তের ওপর আস্থা রাখছে এবং ৬১ শতাংশ ভারতীয় মোদি যেভাবে সন্ত্রাসবাদ দমন করছেন তা অনুমোদন করছেন। এদিকে ৭৩ শতাংশ ভারতীয় পাকিস্তান প্রসঙ্গে প্রতিকূল মনোভাব পোষণ করে। মাত্র ৫৬ শতাংশ ভারতীয় মনে করে দুই দেশের মধ্যে যে উত্তেজনা বিরাজ করছে তা নিরসনে আলোচনা হওয়া জরুরি।
রবি আগারওয়াল তাঁর প্রতিবেদনে বলছেন, বিশ্বের বেশির ভাগ মানুষই আশা করছে যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওঠা হুজুগকে পাত্তা না দিয়ে মোদি তাঁর ভোটারদের মতামতকে প্রাধান্য দেবেন।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন