‘ভারত-পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ডিজিটাল দেশ বিনির্মাণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত-পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ এগিয়ে। দেশবাসীর উদ্দেশ্যে ডিজিটাল বাংলাদেশের চিত্র তুলে ধলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গাজীপুরের কালিয়াকৈর ও যশোরে হাই-টেক পার্ক স্থাপন করা হচ্ছে। বিভাগীয় শহরে সিলিকন সিটি স্থাপনের কার্যক্রম চলছে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে ওয়াই-ফাইয়ের মাধ্যমে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়াও শুরু হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বর্তমান সরকারের দুই বছর পূর্তি উপলক্ষে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তিনি এ কথা জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, ২৫ হাজার ওয়েবসাইট নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম ওয়েব পোর্টাল ‘তথ্য বাতায়ন’ চালু করেছি, যা আন্তর্জাতিকভাবে পুরস্কৃত হয়। ইন্টারনেট ব্যবহারে এখন ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। থ্রিজি সেবা চালু করা হয়েছে। এবছরই ফোর জি চালু করা হবে।
দেশের আট হাজার পোস্ট অফিসকে ডিজিটাল সেন্টারে রূপান্তরের কাজ এগিয়ে চলছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, গত ৭ বছরে আমাদের নিরলস প্রচেষ্টায় ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি। ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ২০০ ধরনের ডিজিটাল সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের মাসিক আয় ২০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে এখন মোবাইল সিম গ্রাহকের সংখ্যা ১৩ কোটির বেশি। ইন্টারনেট গ্রাহক ৫ কোটি ৭ লাখ ৭ হাজারের বেশি। আশা করছি ২০১৬ সালেই মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণ করা হবে।
তিনি জানান, রাশিয়ার সহায়তায় ১ লাখ ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রকল্প- রূপপুর পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।
খাদ্যে দেশের স্বয়ংসম্পূর্ণতার চিত্র তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশ ছিল খাদ্য ঘাটতির দেশ। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেশ আবারও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন খাদ্যশস্য উৎপাদন হয়েছে। মৎস্য উৎপাদন বেড়ে ৪৫ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে বাংলাদেশ আজ বিশ্বে চতুর্থ। আমরা এখন চালও রপ্তানি শুরু করেছি।
শিক্ষার উন্নয়নের পরিসংখ্যান তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে শিক্ষার হার ৬৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪৪ শতাংশে এনেছিল। দেশের বর্তমানে শিক্ষার হার ৭১ শতাংশ।
আওয়ামী লীগ সরকার ৭ বছরে মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিনামূল্যে ১৯২ কোটি বই বিতরণ করেছে।
নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতিমালা বাস্তবায়ন শুরু হয়েছে। নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ আইন প্রণয়ন করেছি। বেতনসহ মাতৃত্বকালীন ছুটি ৪ মাস থেকে ৬ মাস বাড়ানো হয়েছে।
৪০টি মন্ত্রণালয়ে জেন্ডার সেনসিটিভ বাজেট হচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, স্থানীয় সরকারে নারীদের প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে আসন সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেছি। বাংলাদেশ এবারও লিঙ্গ সমতায় দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষস্থান ধরে রেখেছে। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ পদে নারীর অবস্থানের দিক থেকে বিশ্বে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ।
শেখ হাসিনা বলেন, আন্তর্জাতিক সংস্থা ‘উইমেন ইন পার্লামেন্টস গ্লোবাল ফোরাম’ এর সম্মানসূচক ‘ডব্লিউআইপি ২০১৫’ পদক পেয়েছে বাংলাদেশ। জাতীয় সংসদকে সব কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছি। বিরোধীদলকে ধন্যবাদ, তারা বিভিন্ন বিষয়ে তাদের অভিমত দিচ্ছেন, আলোচনায় অংশ নিচ্ছেন।
গণকর্মচারীদের অবসর গ্রহণের বয়স ৫৯ বছর এবং মুক্তিযোদ্ধা কর্মচারিদের ৬০ বছর করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, সামরিক-অসামরিক সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারিদের বেতন ১২৩ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। পদমর্যাদা বৃদ্ধি ও ব্যাপক পদোন্নতির সুযোগ করে দিয়েছি।
বছরের প্রথমে নতুন বই তুলে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবছরের পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের মাঝে প্রায় ৩৩ কোটি ৩৭ লাখ ৬২ হাজার ৭২২টি বই বিনামূল্যে বিতরণ করেছি। প্রাথমিক থেকে ডিগ্রি পর্যন্ত ১ কোটি ২১ লাখ ৭৮ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থীকে বৃত্তি ও উপবৃত্তির আওতায় আনা হয়েছে। ২৬ হাজার ১৯৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ এবং সরকারি করা হয়েছে ১ লাখ ২০ হাজার শিক্ষকের চাকরি।
দেশে ২৩ হাজার ৩৩১টি মাধ্যমিক স্কুলে মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন করা হয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে সব স্কুলে মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ চালু করা হবে জানিয়ে শিক্ষাখাতে নানা সফলতার কথা তুলো ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাস্থ্যসেবা এখন মানুষের দোরগোড়ায়। সাড়ে ১৬ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে গ্রামের মানুষকে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে। মানুষ বিনামূল্যে ৩২ পদের ওষুধ পাচ্ছেন।
এ পর্যন্ত সাড়ে ১২ হাজারের বেশি ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৩ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ দিয়েছি। আরও ১০ হাজার নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। ২০০৬ সালে গড় আয়ু ছিল ৬৬.৫ বছর, এখন বেড়ে হয়েছে ৭১ বছরের বেশি। শিশু ও মাতৃ-মৃত্যুর হারও হ্রাস পেয়েছে।
তিনি বলেন, নতুন ১১টি সরকারি মেডিকেল কলেজ চালু করা হয়েছে। দারিদ্র্যসীমার নীচে বসবাসকারী ১ লাখ পরিবারের মধ্যে স্বাস্থ্য কার্ড বিতরণ করা হবে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশে সব দরিদ্র পরিবারের মধ্যে এই কার্ড বিতরণ করা হবে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
রবিবার যেসব এলাকায় ১০ ঘণ্টা গ্যাস থাকবে না
গ্যাস পাইপলাইনের মেরামত কাজ ও জরুরি স্থানান্তরের জন্য রবিবার দেশেরবিস্তারিত পড়ুন
জেমিনি চ্যাটবটে যুক্ত হলো মেমোরি, যে সুবিধা পাওয়া যাবে
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) চ্যাটবট জেমিনিতে নতুন সুবিধা যুক্ত করেছে গুগল।বিস্তারিত পড়ুন
ঢাকা সিটি কলেজে ক্লাস বন্ধ রাখা নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত
ঢাকা কলেজের বাস ভাঙচুরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে গত বুধবার সংঘর্ষেবিস্তারিত পড়ুন