ভারত মুশকিলে আছে গরু বন্ধ করে !
বাংলাদেশে গরু রপ্তানি বন্ধে ভারতের হিন্দু উগ্রবাদীরা তুষ্ঠ হলেও জনজীবনে নেমে এসেছে নিদারুণ দারিদ্র্য আর আতঙ্ক। হঠাৎ বেকার হয়ে পড়ায় নানা অপরাধ কর্মে জড়িয়ে প্রাণ বাঁচানোর উপায় করে নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকার মানুষ। প্রদেশের বনগাঁ ঘুরে হিন্দুস্তান টাইমসের বিভাস ভট্টাচার্য যে রিপোর্ট করেছেন, তাতে প্রকাশিত হয়েছে এসব তথ্য।
গড়ে প্রতিবছর আনুমানিক ১৭ থেকে ১৮ লাখ গরু ভারত থেকে বাংলাদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে। বেশির ভাগ পশুই পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ হয়ে বাংলাদেশের বেনাপোলে ঢুকে। যে প্রক্রিয়ায় গরু আনা-নেওয়া হয়, তা আইনের ভাষায় পাচার। কারণ, ভারত সরকার তা থেকে সরাসরি কর-মূসক নেয় না। সবচেয়ে বড় কথা, এ জন্য কোনো আনুষ্ঠানিক চুক্তি বা প্রক্রিয়া আজ পর্যন্ত চালু হয়নি।
এভাবে পশু পাচার আইনের দৃষ্টিতে অন্যায় হলেও দেশটির সীমান্ত এলাকার হাজার হাজার মানুষ জীবিকার জন্য এ পেশার ওপর নির্ভরশীল। তাই বহু বছর ধরে অবাধে চলছিল এ ব্যবসা। কিন্তু সম্প্রতি এতে বাধ সেঁধেছে ভারতের ক্ষমতাসীন জনতা পার্টি (বিজেপি) ও এর নেতারা।
বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং গত এপ্রিলে বনগাঁ সফর করেন। সে সময় তিনি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীদের (বিএসএফ) এই অন্যায় বাণিজ্য বন্ধে কঠোর অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়ে যান। সেই থেকে বিএসএফের জওয়ানরা দুটি স্পিডবোটে চেপে দিনরাত টহল দিচ্ছেন বনগাঁ ও বেনাপোলের মধ্যবর্তী ইছামতী নদী। কারণ নদীটিই গরু পাচারের মূল জায়গা। স্থানীয় লোকেরা বলেছেন, স্পিডবোটের প্রপেলারের পাখাগুলো এত জোরে চলে যে, তা গরু ব্যবসায়ীদের আতঙ্কিত করে তোলে। লোকেদের ধারণা, কোনো গরু বা ব্যবসায়ী ওই পাখা লাগলেই কেটে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে।
কিন্তু এ আতঙ্ককে তুচ্ছ করে তুলেছে জনগণের নিরাপত্তার অভাবজনিত ভয়। স্থানীয়রা বলছেন, গরু পাচার বন্ধের সিদ্ধান্ত পুরো এলাকাকে অর্থনৈতিক স্থবিরতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। বেকারেরা জীবন বাঁচাতে ঝুঁকছে অন্যায়-অপকর্মের দিকে।
গরু পাচারের অর্থনীতি
গরু পাচার চক্রই মূলত ভারতের ওই এলাকার অর্থনীতি টিকিয়ে রেখেছে। বিহার, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান ও দিল্লি থেকে গরু যায় বনগাঁয়।
সাধারণত গরুপ্রতি ২০০ থেকে ৫০০ রুপি (প্রায় ২৪০ টাকা থেকে ৬০০ টাকা) লাভ থাকে ভারতীয় পাচারকারীদের। কিন্তু তারা কেবল এক দীর্ঘচক্রের একাংশ।
বনগাঁর তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা অশোক বিশ্বাস বলেন, ‘ধরেন উত্তর প্রদেশ থেকে বাংলাদেশের কসাইদের হাতে পৌঁছা পর্যন্ত একটি গরুকে প্রায় ২০ হাত ঘুরে যেতে হয়। যে গরুর দাম ২০ হাজার রুপি, তা শেষ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়ায় ৫০ হাজার রুপি। পাচার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গরুপ্রতি ব্যবসায়ীদের যে ২৫-৩০ হাজার টাকা থাকত, তা বন্ধ হয়ে গেছে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়।
অপরাধ ও সংকট
গরু পাচার বন্ধের ফলে অর্থনৈতিক সংকট এত তীব্র হয়েছে যে বনগাঁসহ ভারত-বাংলাদেশের ৯ হাজার ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্তজুড়ে থাকা গ্রামগুলোতে ছিনতাই, ডাকাতি, রাহাজানির হার বেড়ে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। অনেক সময় সীমান্ত পেরিয়ে গিয়ে অপরাধে লিপ্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে নারী পাচারও বেড়েছে বহুগুণে।
‘এখানকার মানুষ অনেক গরিব… বড় বা মাঝারি কোনো শিল্পকারখানা না থাকায়, ছেলেমেয়েদের কাজকর্ম নাই। বড় কর্মসংস্থানের যে উপায়টি ছিল, মানে গরু পাচার, তাও প্রায় বন্ধ,’ বলেন এক সাবেক পাচারকারী।
বনগাঁ পৌরসভার কাউন্সিলর দিলীপ মজুমদার বলেন, এলাকায় কর্মসংস্থান নাই, বেকারত্বের হারও অনেক বেশি। এ বছর ফলনও হয়েছে খারাপ। ‘অবশ্য এ কারণে গরু পাচারকে সমর্থন করা যায় না,’ বলেন দিলীপ।
গ্রামবাসী ও স্থানীয় রাজনীতিকরা পাচারের পক্ষে হলেও মুখ খুলতে পারছেন না। নিশিকান্ত হালদার নামের এক চাষি বলেন, বাংলাদেশ থেকে অনেকেই এখন তাঁদের ক্ষেতে হানা দিয়ে ফসল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। ‘যখন গরু ব্যবসা ছিল, তখন কেউ ফসলে টোকাটি পর্যন্ত দিত না,’ বলেন নিশিকান্ত।
প্রতাপনগর গ্রামের বিশ্বজিৎ মণ্ডল পাচারকে জোরোশোরে সমর্থন করেন। বলেন, ‘আমার ছেলে মুম্বাইয়ে ব্যবস্থাপনায় পড়ে। ও এখন চূড়ান্ত বর্ষে। রোজগার কমে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে বাড়ি বিক্রি করেছি। বউয়ের গয়নাও বেচেছি। ছেলের জন্য ৩০ হাজার রুপি জোগার করতে না পারলে ও লেখাপড়া শেষ করতে পারবে না।’
আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে উদ্বেগও আছে সর্বত্র। বনগাঁ জেলা সিপিআইএমের সম্পাদক পল্লব ঘোষ বলেন, ‘পাচার বন্ধের পর থেকে সামাজিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির বড় ধরনের অবনতি হয়েছে।’
উত্তর চব্বিশ পরগনার ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে অনেক রিপোর্ট পাচ্ছি। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে, এমনটা নয়।’
বনগাঁ চেম্বার অব কমার্সের সহকারী সম্পাদক দিলীপ মজুমদার বলন, ‘গরু পাচার কমে যাওয়ার পর থেকে যেভাবে অপরাধ বাড়ছে, তাতে আমরা আতঙ্কিত।’
তবে সরকার ও প্রশাসনের লোকেরা শুনিয়েছেন আশার কথা। তাঁরা বলছেন বিকল্প কর্মসংস্থান ও নৈতিকতার কথা।
স্থানীয় বিধানসভা সদস্য সুরজিৎ বিশ্বাস বলেন, ‘পাচারের ওপরে বহু পরিবারের এমন নির্ভরতা এক সামাজিক বাস্তবতা। কিন্তু এটিকে উৎসাহিত করা ঠিক না। আমরা এলাকায় ক্ষুদ্র বাণিজ্য প্রসারের উদ্যোগ নিয়েছি।’
বনগাঁ বিজেপির নেতা কেডি বিশ্বাস বলেন, এসব মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে রাজ্য সরকার পদক্ষেপ নিচ্ছে।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
ধর্ষণের অভিযোগের তদন্ত চলায় এমবাপ্পেকে বিজ্ঞাপন থেকে সরাল রিয়াল
আর্থিক দ্বন্দ্বের মধ্যে পিএসজি ছেড়ে রিয়াল মাদ্রিদে আসার পর একেরবিস্তারিত পড়ুন
মিয়ানমারে বন্যায় মৃতের সংখ্যা দ্বিগুণ বেড়ে ২২৬
ঘূর্ণিঝড় ইয়াগির প্রভাবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ মিয়ানমারে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণেবিস্তারিত পড়ুন
ইসরাইলি হামলায় আরও ৩৮ ফিলিস্তিনি নিহত
গত ২৪ ঘণ্টায় ইসরাইলি বাহিনীর তান্ডবে প্রাণ গেছে আরও ৩৮বিস্তারিত পড়ুন