গুলিবিদ্ধসহ আহত ৩০, আটক ১
ভোলায় পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে স্কুলছাত্র নিহত
ভোলা সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের জনতা বাজার এলাকায় স্থাপিত অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের পুলিশের সঙ্গে জনতার সংঘর্ষ হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত দফায় দফায় সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে নোমান (১৭) নামে এক স্কুলছাত্র নিহত হয়েছে। সে ওই এলাকার বেল্লাল হোসেন জমদ্দারের ছেলে ও স্থানীয় ওবায়দুল হক বাবুল মোল্লা স্কুলের শিক্ষার্থী।
সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে ১০-১২ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছে। এদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে গুরুতর আহত নীরব (১২), আমিরুন নেছা (৫৫), ফিরোজা বেগম (৪৫), সুফিয়া খাতুন (৪০), মিজানুর রহমান (৩৬), জসিম (২৮) এবং আলামিনকে (২৫) বৃহস্পতিবার রাতে ভোলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ সময় স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে (নাসিরের বাড়ি) হামলা চালিয়ে বাড়ির দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। তারা ওই সড়কের বিভিন্ন স্থানে গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে।
এ ঘটনায় বরিশাল থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি আকরাম হোসেন আজ শুক্রবার দুপুরে রাজাপুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বিচার দাবিতে অতিরিক্ত ডিআইজির সামনেই জনতা বাজারে কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল করেছে। তারা জড়িত পুলিশ সদস্যদের চাকরি থেকে বরখাস্ত ও ঘটনার মদদদাতা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের (বাড়ির মালিক) নাসিরসহ জড়িতদের ফাঁসি দাবি করেন।
স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, রাজাপুরে স্থাপিত অস্থায়ী ক্যাম্প বসিয়ে বাড়ির মালিক নাসিরের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পুলিশ সদস্যরা ব্যাপক চাঁদাবাজি করে আসছিল। এতে মানুষের সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হচ্ছিল। তাই পুলিশের এ কর্মকর্তার কাছে অস্থায়ী ক্যাম্প সরিয়ে ফেলারও দাবি জানান তারা। ঘটনার পর রাজাপুরের অস্থায়ী ক্যাম্পের ১০ পুলিশ সদস্যের সবাইকে পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ভোলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। বাড়ির মালিক নাসিরকে আটক করা হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সদর উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডে জনতা বাজারে অবস্থিত অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের কয়েকজন পুলিশ সাদাপোশাকে রাজাপুর ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি মিজানুর রহমানকে আটকের পর জনতা বাজারে নিয়ে বেদম মারধর করে। পরে তাকে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। খবর পেয়ে ছাত্রদল নেতার স্বজনসহ স্থানীয় লোকজন লাঠিসোঁটা নিয়ে রাতে অস্থায়ী ওই পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে হামলা চালায়। তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে অস্থায়ী ক্যাম্পের দরজা-জানালা ভাঙচুর করে। এ সময় ক্যাম্পের কয়েকজন পুলিশ সদস্য জনতাকে লক্ষ্য করে কয়েক রাউন্ড গুলি ছোড়ে।
অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের ভেতরে অবস্থানরত ওই বাড়ির মালিক নাসির নিজেও পুলিশের হাত থেকে বন্ধুক নিয়ে জনতাকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। রাত ১০টা পর্যন্ত পুলিশের সঙ্গে জনতার দফায় দফায় সংঘর্ষ চলে। এ সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে স্কুলছাত্র নোমান (১৭) ঘটনাস্থলেই মারা যায়। এতে গুলিবিদ্ধসহ আহত হয় অন্তত ৩০ জন। এর মধ্যে চারজন পুলিশ সদস্যও রয়েছেন। রাতে ভোলা সদর মডেল থানার ওসি মীর খায়রুল কবিরের নেতৃত্বে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
ওসি জানান, ঘটনার পর রাজাপুরের অস্থায়ী ক্যাম্পের ১০ পুলিশের মধ্যে সবাইকেই পুলিশ ক্যাম্পের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে ভোলা পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয়েছে। এরা হলেন নায়েক আ. সাত্তার, কনস্টেবল আজিজুল, মিরাজ, আসাদুজ্জামান, জসিম, রাজিব, হাবিব, মিরান, সোহেল এবং আলামিন। এ ঘটনায় অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পের মালিক নাসিরকে আটক করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে বলেও পুলিশ জানিয়েছে।
এদিকে, পুলিশ-জনতা সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হয়ে স্কুলছাত্র নিহত হওয়ার ঘটনায় বরিশাল থেকে অতিরিক্ত ডিআইজি আকরাম হোসেন আজ শুক্রবার দুপুরে রাজাপুরের ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি জনতা বাজারে পৌঁছালে তাঁর সামনেই কয়েক হাজার নারী-পুরুষ ঘটনার বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল করে। তারা জড়িত পুলিশ সদস্যদের চাকরি থেকে বরখাস্ত ও ঘটনার মদদদাতা অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প ভবনের মালিক নাসিরসহ জড়িতদের শাস্তি দাবি করেন। অতিরিক্ত ডিআইজি স্থানীয়দের বক্তব্য শোনেন। ডিআইজির সামনেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা অবসরপ্রাপ্ত বিডিআর সবুজ জমদ্দার ও আবদুল মতিনসহ স্থানীয়রা অভিযোগ করে জানান, মামলা, ধর্ষণ ও ডাকাতিসহ একাধিক মামলার আসামি নাসির তার বাড়িতে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প বসিয়ে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক চাঁদাবাজি করে আসছে।
তারা জানান, পুলিশের সহযোগিতায় নাসির, মিজান খা, ওহাব আলী, বাকেরের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে এ এলাকার মানুষ। তারা জানান, অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প এখানকার মানুষের সুবিধার চেয়ে অসুবিধাই বেশি হচ্ছে। তাই অস্থায়ী ক্যাম্প সরিয়ে ফেলারও দাবি জানান এলাকাবাসী।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে অতিরিক্ত ডিআইজি আকরাম হোসেন সাংবাদিকদের জানান, ঘটনায় জড়িতদের সবাইকেই ক্লোজড করা হয়েছে। এ ঘটনায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মামুনের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরপর তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। নাসিরের বাড়ি থেকেও অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলেও জানান তিনি।
এদিকে, নিহত স্কুলছাত্র নোমানের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বিকেলে লাশ বাড়িতে পৌঁছালে স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সরেজমিনে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে শোকের মাতম।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
স্ত্রী হত্যায় ছাত্রলীগ নেতা রুবেল কারাগারে
ভোলার লালমোহনে মাহমুদা মেহের তিথি হত্যা মামলার প্রধান আসামি ছাত্রলীগবিস্তারিত পড়ুন
ভোলায় কিশোরীকে আটকে রেখে টানা ৩ দিন ধরে গণধর্ষণ!
ভোলার লালমোহনে এক কিশোরীকে আটকে রেখে টানা তিনদিন ধরে গণধর্ষণবিস্তারিত পড়ুন
ভোলায় কালবৈশাখী ঝড়ে কলেজ ছাত্রাবাস ধুমড়ে মুচড়ে গেছে, আহত-১০
কামরুজ্জামান শাহীন, ভোলা প্রতিনিধি| ভোলার মনপুরায় প্রচন্ড কালবৈশাখী ঝড় ওবিস্তারিত পড়ুন