ভোর বিহানে পাখিদের অতিথিশালা!
রাত শেষ। ভোরের আলো ফুটবে। কিন্তু এর আগেই ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসতে শুরু করে। পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ, আর কিচির মিচির ডাকে লোকজন বুঝে যায় জয়দেবদের অতিথিরা আসতে শুরু করেছে। নিত্যদিনের এই অতিথি আপ্যায়নের খবর স্থানীয় বাসিন্দারা জানেন। মসজিদে, প্রার্থনালয়ে বা কাজে যাওয়ার পথে একটু উঁকি দিয়ে দেখে যান সেই অতিথিদের।
অতিথিদের আগমনে ব্যস্ত হয়ে ওঠেন জয়দেব রায় আর তাঁর বাবা গোবিন্দ রায়। কারণ অতিথিরা যে হাক-ডাক শুরু করে দিয়েছে। সকালের নাস্তাটা তো তারা এখানেই করে! বেশ কয়েক বছর ধরে এই আপ্যায়নের কাজ করে যাচ্ছেন বাবা-ছেলে মিলে।
সকালের অতিথিদের মধ্যে শালিক পাখিই বেশি। আসে কবুতর, কাকও। সঙ্গে চড়ুই আর দোয়েলের দেখাও পাওয়া যায়। শত শত পাখি নিত্য ভোরে নাস্তা করে যায় জয়দেবদের অতিথিশালায়। একদম নির্দিষ্ট সময়ে এসে হাজির থাকে পাখিগুলো। এ এক অদ্ভুত দৃশ্য।
বরিশালের কাউখালী উপজেলার দক্ষিণবাজার গ্রামের ঘটে এ ঘটনা। স্থানীয় ব্যবসায়ী গোবিন্দ রায় ও তাঁর ছেলে জয়দেব রায় প্রতিদিন সকালে কয়েক শত পাখিকে খাবার দেন। সকাল হলেই এখানে চলে আসে পাখিগুলো। আবার খাবার খেয়ে চলেও যায়। প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরে এভাবেই চলছে পাখি আপ্যায়নের কার্যক্রম। এক ঝাক এসে হয়তো খাচ্ছে এরই মাঝে এসে পৌছায় আরেক ঝাক পাখি। এক ঝাক হয়তো খেয়ে উড়ে যাচ্ছে। আরেক ঝাক আবার আসছে। এভাবেই পাখিদের আনাগোনা চলে প্রায় আধাঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা।
জয়দেব বলেন, ‘প্রায় পাঁচ বছর আগে তাঁর বাবা গোবিন্দ রায় সকালে কিছু পাখিকে খাবার দিতেন। এরপর আস্তে আস্তে অনেক পাখি আসা শুরু করে। এখন রীতিমতো প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে সাত থেকে আটশ পাখিকে খাওয়াচ্ছেন। যদিও স্থানীয় মুরব্বিরা বলেন এখানে আসা পাখির সংখ্যা হাজারেরও বেশি হবে।’
জয়দেবের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, পাখিদের খাওয়ানোর জন্য তাঁদের ভালোই আয়োজন করতে হয় । জয়দেবদের একটি রেস্টুরেন্ট আছে । নাম স্বর্ণচূড়া। ওই রেস্টুরেন্ট থেকেই তৈরি করা হয় পাখিদের খাবার। পরোটা রুটি ইত্যাদি আলাদা করে ভেজে রাখে দোকানের কর্মচারীরা। প্রতিদিন কাজ শেষে এই খাবারগুলো তৈরি করে রাখে। সকাল হলেই বাবা কিংবা ছেলে এসে পাখিদের খাবার দিয়ে যান।
এ গ্রামেরই বাসিন্দা নোমান। তিনি বলেন, ‘ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসে সকাল বেলা। খাবার খেয়ে আবার চলে যায়।পাখিগুলো যখন আসে এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে। প্রায় এক থেকে দেড় হাজার পাখি আসে এখানে। মাঝেমধ্যেই আমরা দেখি ওদের পাখি আপ্যায়নের দৃশ্য। মনে হয় পাখিগুলো যেন ওদের পোষমানা। এক সাথে এত পাখির আনাগোনা হয় অবাক হওয়ার মতো ঘটনা।ভালোই লাগে দেখতে।’
এলাকাবাসী বিষয়টি বেশ উপভোগ করে।এত পাখি এক সাথে আপ্যায়নের বিরল দৃশ্য তারা বেশ আনন্দ নিয়েই দেখে। বিশেষ করে যারা খুব ভোরে উঠে তারা এই দৃশ্য উপভোগ করার সুযোগ পায়। কলেজপড়ুয়া জয়দেবকে এলাকার ছোটরা ভালোবেসে ‘পাখি দা’ নামে ডাকে। বিষয়টি জয় নিজেও বেশ উপভোগ করেন।
জয়দেব বলেন, ‘মাঝখানে হঠাৎ করে পাখির আনাগোনা একটু কমে গিয়েছিল। আমরা এর কারণটি বুঝতে পারিনি কেন পাখি আসা কমে গেছে। কিন্তু কিছুদিন পরই আবার ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি আসা শুরু হয়।’
পাখিদের খাবার দেওয়ার কোনো নির্দিষ্ট সময় আছে কি না জানতে চাইলে জয় বলেন, ‘হ্যাঁ সময় তো আছেই। এখন ৫টা ৪০ মিনিট থেকে সকাল ৬টার মধ্যে খাবার দিয়ে দেই।’
খাবার দেওয়া শুরু করলে ওরা আসে না আগেই চলে আসে? এমন প্রশ্নের জবাবে জয় বলেন, ‘ওই সময়ই চলে আসে। আমি আসি বা না আসি। আমরাও এই টাইমেই চলে আসি খাবার দিতে। মূলত সময়টা হলো ভোরের আলো যে সময়টাতে ফুটতে শুরু করে ঠিক সেই সময়টাতেই ওরা সব চলে আসে।’
পাখিদের এই খাবারটা দেওয়া হয় স্বর্ণচূড়া রেস্টুরেন্ট থেকে কিছুটা দূরে ফাঁকা জায়গায়। পাখিদের খাবার দেওয়া শেষ হলেই খুলে যায় রেস্টুরেন্ট।
ব্যস্ত হতে শুরু হয় লোকালয় জীবন। এই ব্যস্ততা শুরু হওয়ার সাথে সাথে জয়দের অতিথিরাও ডানা মেলে দেয় শূন্যে। উড়ে চলে যায় নিজ নিজ গন্তব্যে। সারা দিনের খাবার হয়তো সংগ্রহ করে নেয় প্রকৃতি থেকে। কিন্তু সকালের নাস্তাটা ওদের এখানেই করতে হয়। শত শত পাখি জানে পরম মমতায় তাদের জন্য কিছু খাবার তৈরি করে রাখে গোবিন্দ রায়ের পরিবার। ছোট ছোট ঠোটে সেই টুকরো খাবার তুলে নেয় পাখিগুলো আর রচিত হয় প্রাণ-প্রকৃতির অনন্য মিলন। দক্ষিণাবাজার এলাকায় সকালের শুরুটা এভাবেই হয়।
এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ
বরিশালে অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর মরদেহ উদ্ধার
বরিশাল নগরীর সাগরদী এলাকা থেকে দুই মাসের অন্তঃসত্ত্বা এক গৃহবধূরবিস্তারিত পড়ুন
বরিশাল মহানগর বিএনপি অফিসে তালা লাগিয়েছে বিদ্রোহীরা
বরিশাল মহানগর যুবদলের কমিটিতে স্থান না পাওয়াই বিএনপি অফিসে তালাবিস্তারিত পড়ুন
বরিশালে স্ত্রীকে শিকল দিয়ে বেঁধে নির্যাতন, গরম রড দিয়ে শরীরে ছ্যাকা, ক্ষতস্থানে গুঁড়া মরিচ ও লবণ !
বরিশাল : জেলার গৌরনদী উপজেলার শরিফাবাদ গ্রামে স্ত্রীকে শিকল দিয়েবিস্তারিত পড়ুন