শুক্রবার, সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৪

আমাদের কণ্ঠস্বর

প্রধান ম্যেনু

তারুণ্যের সংবাদ মাধ্যম

মতিউরের রক্তের ধারা বেয়ে এসেছিল স্বাধীনতা

গোলগাল মায়াবী চেহারার ষোল বছরের এক কিশোর। পুরান ঢাকার বকশীবাজারের নব কুমার ইনস্টিটিউটের ছাত্র সে। নবম শ্রেণি পাস করে দশম শ্রেণিতে পা রাখল মাত্র কয়েকদিন হলো। পছন্দ হিসেবে বিজ্ঞান বিভাগকেই বাছাই করে নিয়েছিল। ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ারই স্বপ্ন ছিল হয়তো।

পুরো নাম মতিউর রহমার মল্লিক। বাবা-মা আদর করে ডাকতেন মতি। সেদিন ২৪ জানুয়ারি ছিল মতিউরের জন্মদিন। ১৯৫৩ সালের এই দিনে স্বল্প বেতনের ব্যাংক কর্মচারী আজহার আলী মল্লিকের অভাব-অনটনের ঘরে আগমন তাঁর।

শত অভাব-অনটন থাকুক তবু জন্মদিন তো সবার কাছেই একটা বিশেষ দিন। এ দিনটিকে নিজ সামর্থ্যানুযায়ী উদযাপন করার প্রচেষ্টা তো সবারই থাকে। কিন্তু মতিউর সম্ভবত ভুলেই গিয়েছিলেন, সেদিন তাঁর জন্মদিন।

মনে থাকবেই বা কীভাবে, চারদিকে প্রতিবাদ, প্রতিরোধ, বিক্ষোভ। দেশে বিরাজ করছে এক অস্থির সময়। স্বৈরশাসক আইয়ুব শাহীর বাহিনীর হাতে বাঙালিরা নির্যাতিত হচ্ছে বিনা অপরাধে। এর চারদিন আগে ২০ জানুয়ারি হায়েনার বুলেটের আঘাতে যে মিছিলে আসাদের লাশ পড়ে গেল সে মিছিলে মতিউরও ছিলেন। ঘটনাটা ঘটল একেবারে তাঁর চোখের সামনে। এ ঘটনায় বিন্দুমাত্র ভীত হননি মতিউর। বরং তাঁর স্নায়ুতে, শিরায়-উপশিরায়, ধমনিতে দ্বিগুণ হারে জ্বলে ওঠে দ্রোহের আগুন।

আসাদ শহীদ হওয়ার পর ২১, ২২, ২৩ জানুয়ারি শোক পালন করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের আপামর জনতা। ২৪ জানুয়ারি পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে ডাকা হয় হরতাল। মুক্তিপাগল জনতা স্বতঃস্ফূর্তভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে হরতালের কর্মসূচিতে। বিক্ষুব্ধ ছাত্রজনতার মিছিলে মিছিলে, আকাশ-বাতাস কাঁপানো প্রতিবাদে, স্লোগানের অগ্নিঝরা ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয়ে ওঠে ঢাকার রাজপথ। তারই সঙ্গে কম্পন ধরে যায় লৌহমানব আইয়ুব শাহীর নিষ্ঠুর হৃদয়ে।

জনতাকে থামিয়ে দেওয়ার জন্য তার পেটুয়া বাহিনী গ্রহণ করে আরেকটি আনাড়ি পদক্ষেপ। ইপিআর গুলি চালায় জনতার মিছিলে। তপ্ত বুলেটের আঘাত মিছিলের সামনের সারিতে থাকা কিশোর মতিউরকে জানায় জন্মদিনের অভিবাদন। মতিউরের কলিজার লাল খুনে রঞ্জিত হয়ে যায় পিচঢালা রাজপথ।

পরপর ঝরে যায় রোস্তম, মকবুলসহ আরো কটি তাজা প্রাণ। এটাই ছিল আইয়ুবের সর্বশেষ ভুল পদক্ষেপ। তাঁর বোঝা উচিত ছিল জনতা যখন জাগে তখন হন্তারকের বুলেট শেষ হয়ে যায় কিন্তু জনতা থামে না। এ নৃশংস ঘটনা জ্বলন্ত অগ্নিকুণ্ডে ঘি ঢেলে দিল। এরই সূত্র ধরে বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতার ক্ষোভ আর প্রতিবাদ-প্রতিরোধের তীব্র উচ্ছ্বাসে একসময় বালুর বাঁধের মতো ভেঙে পড়ল স্বৈরশাসকের ক্ষমতার মসনদ।

ক্ষোভে উন্মাতাল জনতা সেদিন সচিবালয়ের দেয়াল ভেঙে আগুন ধরিয়ে দেয়। আইয়ুব-মোনায়েম চক্রের পা চাটা মন্ত্রী, এমপিদের বাড়ি এবং তাঁদের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত তৎকালীন দৈনিক পাকিস্তান ও পাকিস্তান অবজারভারে আগুন লাগিয়ে দেয় জনতা। সৃষ্টি হয় এক অভূতপূর্ব গণ-অভ্যুত্থান।

কে অস্বীকার করবে, ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের পথ ধরে আমাদের স্বাধীনতা আসেনি?

এর বাঁধভাঙা জোয়ারেই তো ২২ ফেব্রুয়ারি সাজানো আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে প্রধান আসামি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ সব নিরপরাধ আসামিকে মুক্তি দিতে বাধ্য হন আইয়ুব খান। ২৫ মার্চ হয় আইয়ুব খানের পতন। এরপর ৭০-এর নির্বাচন, নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের বিজয়, ক্ষমতা হস্তান্তরে পরবর্তী স্বৈরশাসক ইয়াহিয়া খানের নানা ছলচাতুরি, প্রতারণা এবং সবশেষে মহান মুক্তিযুদ্ধ ও সবুজের মাঝে রক্তের আঁচড়ে লাল বৃত্ত আঁকা পতপত স্বাধীন পতাকা।

এ অঞ্চলে সাম্রাজ্যবাদীদের, স্বৈরাচারদের, জুলুমবাজ শাসকদের সাধারণ জনগণ তো বটেই, কিশোর-তরুণরাও চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে বারবার। তারা কখনো এসেছে ক্ষুদিরাম হয়ে, কখনো মতিউর হয়ে, কখনো নাম না জানা আরো শত বেশে। এ মাটি স্বৈরাচারদের জন্য কখনো উর্বর প্রমাণিত হয়নি। তবু স্বৈরাচাররা এসেছে বারবার, নানা বেশে। করুণ পতনও হয়েছে অবশ্যম্ভাবীভাবে। মতিউরদের রক্তস্নাত হয়ে যে মাটি উর্বর সে মাটি সময়ের প্রয়োজনে আরো হাজার মতিউরকে জন্ম দেবে এটাই তো স্বাভাবিক। মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে আমরা তারই প্রমাণ পেয়েছি রণাঙ্গনে। শত্রুর আসমান সমান ঐশ্বর্যের সামনে মতিউররা অকুতোভয় লড়ে গেছে প্রায় খালি হাতে। সুতরাং এ দেশের যে কোনো সময়ের, যে কোনো রূপের স্বৈরাচারদের নিজেদের স্বার্থেই হুঁশিয়ার হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়।

শহীদ কিশোর মতিউর ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানেরই এক অদম্য প্রেরণার বাতিঘর নয় শুধু, বাঙালির মহান মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসেও তাঁর আত্মবলিদান চিরভাস্বর হয়ে থাকবে। তাঁর অসীম সাহসের দৃষ্টান্ত থেকে আমাদের কিশোর-তরুণরা মুক্তির দীক্ষা নেবে যুগ যুগ ধরে।

এই সংক্রান্ত আরো সংবাদ

কল-কারখানায় কোনো শিশুশ্রম নেই: প্রতিমন্ত্রী

শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মো. নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, প্রতিষ্ঠানিকবিস্তারিত পড়ুন

বেনাপোলের কিশোরী জোনাকির মরদেহ যশোরে উদ্ধার

যশোর শহরের রেলগেট পশ্চিমপাড়া মডেল মসজিদের পাশে একটি পুকুর থেকেবিস্তারিত পড়ুন

শিশুর স্কুল থেকে শেখা বদভ্যাস থামাবেন যেভাবে

স্কুল থেকে শিশুরা জীবনের দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকে। প্রয়োজনীয় বিভিন্ন নিয়মকানুনবিস্তারিত পড়ুন

  • শিশুকে ‘ডব্লিউ পজিশনে’ বসতে বারণ করুন
  • ছুটিতেও চলুক জ্ঞানচর্চা
  • রাতে জন্ম নেয়া শিশুরা কেন ব্যতিক্রম? জেনে নিন
  • রাতে জন্মানো শিশুরা যেমন হয়
  • ধুলায় বাড়ছে শিশুর কাশি; কী করবেন?
  • বিশেষ যত্নে বড় করুন প্রতিবন্ধী শিশুকে
  • আপনার যে ভুলে সন্তান ক্লাসে অমনোযোগী!
  • যেভাবে আপনার কন্যা শিশুটির ক্ষতি করছে এ যুগের খেলনা
  • ‘আমি স্বাধীনতা দেখমু, আমি যুদ্ধ করুম’
  • শীতে শিশুর প্রস্তুতি
  • শিশুর নাকে পানি ঝরার সমস্যায় কী করবেন?
  • শীতে নবজাতকের যত্নে কী করবেন